পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিশ্বভারতী ©ዓ¢ ভবত্যেক্ষনীড়ম্। দেশে দেশে জামরা মানুষকে তার বিশেষ স্বাঞ্জাতিক পরিবেষ্টনের মধ্যে খণ্ডিত করে দেখেছি, সেখানে মানুষকে আপন বলে উপলব্ধি করতে পারি নে। পৃথিবীর মধ্যে আমাদের এই আশ্রম এমন একটি জায়গা হয়ে উঠুক যেখানে ধর্ম ভাষা এবং জাতিগত সকলপ্রকার পার্থক্য সত্ত্বেও আমরা মানুষকে তার বাস্থভেদমুক্তরূপে মানুষ বলে দেখতে পাই। সেই দেখতে পাওয়াই নূতন যুগকে দেখতে পাওয়া। সন্ন্যাসী পূর্বকাশে প্রথম অরুণোদয় দেখবে বলে জেগে আছে। যখনই অন্ধকারের প্রাস্তে আলোকের আরক্ত রেখাটি দেখতে পায় তখনই সে জানে যে, প্রভাতের জয়ধ্বজ তিমিররাত্রির প্রাকারের উপর আপন কেতন উড়িয়েছে। আমরা তেমনি করে ভারতের এই পূর্বপ্রান্তে এই প্রস্তরশেষে যেন আজ নববর্ষের প্রভাতে ভেদবাধার তিমির-মুক্ত মানুষের রূপ আমাদের এখানে সমাগত অতিথি বন্ধু সকলের মধ্যে উজ্জল করে দেখতে পাই । সেই দেখতে পাওয়া থেকেই যেন মনের মধ্যে শ্রদ্ধা করতে পারি যে, মানবের ইতিহাসে নবযুগের অরুণোদয় আরম্ভ হয়েছে। ১ বৈশাখ ১৩৩• उद्धि S७७ • শাস্তিনিকেতন br অল্প কিছুকাল হল কালিঘাটে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে আমাদের পুরোনো আদিগঙ্গাকে দেখলাম। তার মস্ত দুৰ্গতি হয়েছে। সমূত্রে আনাগোনার পথ তার চিরদিনের মতো বদ্ধ হয়ে গেছে । যখন এই নদীটির ধারা সঙ্গীব ছিল তখন কত বণিক আমাদের ভারত ছাড়িয়ে সিংহল গুজরাট ইত্যাদি দেশে নিজেদের বাণিজ্যের সম্বন্ধ বিস্তার করেছিল। এ যেন মৈত্রীর ধারার মতো মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলনের বাধাকে দূর করেছিল। তাই এই নদী পুণ্যনদী বলে গণ্য হয়েছিল। তেমনি ভারতের সিন্ধু ব্ৰহ্মপুত্র প্রভৃতি যত বড়ে বড়ে নদনদী আছে সবগুলি সেকালে পবিত্র বলে গণ্য হয়েছিল। কেন । কেননা এই নদীগুলি মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্বন্ধস্থাপনের উপায়স্বরূপ ছিল । ছোটো ছোটো নদী তো ঢের আছে— তাদের ধারার তীব্রতা থাকতে পারে ; কিন্তু না আছে গভীরতা, না আছে স্থায়িত্ব। তারা তাদের জলধারায় এই বিশ্বমৈত্রীর রূপকে ফুটিয়ে তুলতে পারে নি। মানুষের সঙ্গে মাহুষের মিলনে তারা সাহায্য করে নি। সেইজন্ত তাদের জল মানুষের কাছে তাঁধোদক হল না । যেখান দিয়ে বড়ো বড়ো নদী বয়ে গিয়েছে সেখানে কত বড়ে বড়ো নগর