পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ob-b- রবীন্দ্র-রচনাবলী ধনী হোক প্রবল হোক, এ তার তপস্যা ছিল না , সমস্ত মানুষের জন্ত তিনি সাধনা করেছিলেন। জাজ ভারতের মাটিতে আবার সেই সাধনা জেগে উঠুক সেই ইচ্ছাকে ভারতবর্ষ থেকে কি দূর করে দেওয়া চলে। আমি যে বিশ্বভারতীকে এই ভাবের দ্বারা অকুপ্রাণিত করতে পারি নি সে আমার নিজেরই দৈস্ত— আমি যদি সাধক হতুষ সে একাগ্রতার শক্তি যদি আমার থাকত, তবে সব আপনিই হত । আজ অত্যন্ত নম্রভাবে সামুনয়ে আপনাদের জানাচ্ছি, আমি অযোগ্য, তাই এ কাজ আমার একলার নয়, এ সাধনা আপনাদের সকলের । এ আপনাদের গ্রহণ করতে হবে । বিদেশে যখন যাই তখন সৰ্বমানুষের সম্বন্ধে আমাদের দেশে চৈতন্তের যে ক্ষীণত আছে তা ভুলে যাই, ভারতের ষজ্ঞক্ষেত্রে সকলকে আহবান করি। ফিরে এসে দেখি, এখানে সে বৃহৎ ভূমিকা কোথায়, বৃহৎ জগতের মাঝখানে যে আমরা আছি সে দৃষ্টি কোথায় । আমার শক্তি নেই, কিন্তু মনে ভরসা ছিল, বিশ্বের মর্মস্থান থেকে যে ডাক এসেছে তা অনেকেই শুনতে পাবে, অনেকে একত্র মিলিত হবে । সেই বোধের বাধা আমাদের আশ্রম থেকে যেন সর্বপ্রযত্নে দূর করি, রিপুর প্রভাব-জনিত যে দুঃখ তা থেকে যেন বাচি । হয়তো আমাদের সাধনা সিদ্ধ হবে, হয়তো হবে না। আমি গীতার কথা অস্তরের সঙ্গে মানি – ফলে লোভ করলে আপনাকে ভোলাব, অন্তকে ভোলাব । আমাদের কাজ বাইরে থেকে খুবই সামান্ত— কটিই বা আমাদের ছাত্র, কটিই বা বিভাগ, কিন্তু অস্তরের দিক থেকে এর অধিকারের সীমা নেই। আমাদের সকলের সম্মিলিত চিত্ত সেই অধিকারকে দৃঢ় করুক, সেই অধিকারকে অবলম্বন করে বিচিত্র কল্যাণের স্বষ্টি করুক — সেই স্বাক্টর আনন্দ এবং তপোছুঃখ আমাদের হোক। ছোটে ছোটো মতের অনৈক্য, স্বার্থের সংঘাত ভুলে গিয়ে সাধনাকে আমরা বিশুদ্ধ রাখব, সেই উৎসাহ আমাদের আসুক। মামার নিজের চিত্তের তেজ যদি বিশুদ্ধ ও উজ্জল থাকত তা হলে আমি গুরুর আসন থেকে এই দাবি করতুম। কিন্তু আমি আপনাদের সঙ্গে এক পথেরই পথিক মাত্র ; আমি চালনা করতে পারি নে, চাই নে। আপনার জানেন, আমার যা দেবার তা দিয়েছি, কৃপণতা করি নি। তাই আপনাদের কাছ থেকে ভিক্ষা করবার অধিকার আমার আজ হয়েছে । ১৭ ভাদ্র ১৩৩১ কাতিক ১৩৩১ শান্তিনিকেতন