পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী و وجO\ র্তারা আমাদের অভিনন্দন করেছেন। আমাদের দেশের পক্ষ থেকে তারা আত্মীয়তা পেয়েছেন, তাদের পক্ষ থেকেও আত্মীয়তার সম্বন্ধ সত্য হয়েছে। আমি তাই বলছি, কাজ আরম্ভ হয়েছে। বিশ্বভারতীর যে সত্য তা ক্রমশ উজ্জলতর হয়ে উঠছে। এখানে আমরা ছাত্রদের কোন বিষয় পড়াচ্ছি, পড়ানো সকলের মনের মতো হচ্ছে কি না, সাধারণ কলেজের আদর্শে উচ্চশিক্ষা-বিভাগ খোলা হয়েছে বা জ্ঞানাচুসন্ধান-বিভাগে কিছু কাজ হচ্ছে, এ-সমস্তকেই যেন আমরা আমাদের ধ্রুব পরিচয়ের জিনিস বলে না মনে করি । এ-সমস্ত আজ অাছে কাল না থাকতেও পারে। আশঙ্কা হয় পাছে যা ছোটো তাই বড়ো হয়ে ওঠে, পাছে একদিন আগাছাই ধানের খেতকে চাপা দেয় । বনস্পতির শাখায় কোনো বিশেষ পাখি বাসা বাধতে পারে, কিন্তু সেই বিশেষ পাখির বাসাই বনম্পতির একান্ত বিশেষণ নয়। নিজের মধ্যে বনস্পতি সমস্ত অরণ্যপ্রকৃতির যে সত্যপরিচয় দেয় সেইটেই তার বড়ো লক্ষণ । পূর্বেই বলেছি, ভারতের যে প্রকাশ বিশ্বের শ্রদ্ধেয় সেই প্রকাশের দ্বারা বিশ্বকে অভ্যর্থনা করব, এই হচ্ছে আমাদের সাধনা। বিশ্বভারতীর এই কাজে পশ্চিম-মহাদেশে আমি কী অভিজ্ঞতা লাভ করেছি সে কথা বলতে আমি কুষ্ঠিত হই। দেশের লোকে অনেকে হয়তো সেটা শ্রদ্ধাপূর্বক গ্রহণ করবেন না, এমন-কি, পরিহাসরসিকেরা বিক্রপও করতে পারেন। কিন্তু সেটাও কঠিন কথা নয়। আসলে ভাবনার কথাটা হচ্ছে এই যে, বিদেশে আমাদের দেশ যে শ্রদ্ধা লাভ করে, পাছে সেটাকে কেবলমাত্র অহংকারের সামগ্রী করে তোলা হয় । সেটা আনন্দের বিষয়, সেটা অহংকারের বিষয় নয়। যখন অহংকার করি তখন বাইরের লোকদের আরো বাইরে ফেলি, যখন আনন্দ করি তখনই তাদের নিকটের বলে জানি। বারম্বার এটা দেখেছি, বিদেশের যে-সব মহদাশয় লোক আমাদের ভালোবেসেছেন, আমাদের অনেকে তাদের বিষয়সম্পত্তির মতো গণ্য করেছেন। তারা আমাদের জাতিকে যে আদর করতে পেরেছেন সেটুকু আমরা ষোলো-আনা গ্রহণ করেছি, কিন্তু আমাদের তরফে তার দায়িত্ব স্বীকার করি নি। তাদের ব্যবহারে তাদের জাতির যে গৌরব প্রকাশ হয় সেটা স্বীকার করতে অক্ষম হয়ে আমরা নিজের গভীর দৈন্তের প্রমাণ দিয়েছি। তাদের প্রশংসাবাক্যে আমরা নিজেদের মহং বলে স্পধিত হয়ে উঠি ; এই শিক্ষাটুকু একেবারেই ভুলে ৰাই যে, পরের মধ্যে যেখানে শ্রেষ্ঠতা আছে সেটাকে অকুষ্ঠিত আনন্দে স্বীকার করা ও প্রকাশ করার মধ্যে মহত্ব আছে। অামাকে এইটেতেই সকলের চেয়ে মন্ত্র করেছে ৰে, ভারতের যে পরিচয় অন্য দেশে জামি বহন করে নিয়ে গেছি কোথাও ত৷ জবমানিত হয় নি। আমাকে ধারা সন্মান করেছেন তারা জামাকে উপলক্ষ করে