পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8X o রবীন্দ্র-রচনাবলী সেকালে এখানে যারা ছাত্র ছিল তারা তা জানে। - আজকের তুলনায় তার উপকরণবিরলতা, সকল বিভাগেই তার অকিঞ্চনত, অত্যন্ত বেশি ছিল। কটি বালক ও দুইএক জন অধ্যাপক নিয়ে বড়ো জামগাছতলায় আমাদের কাজের স্বচনা করেছি। একান্তই সহজ ছিল তাদের জীবনযাত্রা— এখনকার সঙ্গে তার প্রভেদ গুরুতর। এ কথা বলা অবশুই ঠিক নয় যে, এই প্রকাশের ক্ষীণতাতেই সত্যের পূর্ণতর পরিচয় । শিশুর মধ্যে আমরা যে রূপ দেখি তার সৌন্দর্ষে আমাদের মনে আনন্দ জাগায়, কিন্তু তার মধ্যে প্রাণরূপের বৈচিত্র্য ও বহুধাশক্তি নেই। তার পূর্ণ মূল্য ভাবী কালের প্রত্যাশার মধ্যে । তেমনি আশ্রমের জীবনযাত্রার যে প্রথম উপক্রম, বর্তমানে সে ছিল ছোটো, ভবিষ্যতেই সে ছিল বড়ো। তখন যা ইচ্ছা করেছিলাম তার মধ্যে কোনো সংশয় ছিল না। তখন আশা ছিল অমৃতের অভিমুখে, যে সংসার উপকরণ-বহুলতায় প্রতিষ্ঠিত তা পিছনে রেখেই সকলে এসেছিলেন । ধারা এখানে আমার কর্মসঙ্গী ছিলেন, অত্যন্ত দরিদ্র ছিলেন তারা । আজ মনে পড়ে, কী কষ্টই না তারা এখানে পেয়েছেন, দৈহিক সাংসারিক কত দীনতাই না তারা বহন করেছেন। প্রলোভনের বিষয় এখানে কিছুই ছিল না, জীবনযাত্রার মুবিধা তো নয়ই, এমন-কি, খ্যাতিরও না— অবস্থার ভাবী উন্নতির আশা মরীচিকারূপেও তখন দূরদিগন্তে ইন্দ্রজাল বিস্তার করে নি। কেউ তখন আমাদের কথা জানত না, জানাতে ইচ্ছাও করি নি। এখন যেমন সংবাদপত্রের নানা ছোটোবড়ো জয়ঢাক আছে যা সামান্ত ঘটনাকে শব্দায়িত ক’রে রটনা করে, তার আয়োজনও তখন এমন ব্যাপক ছিল না। এই বিদ্যালয়ের কথা ঘোষণা করতে অনেক বন্ধু ইচ্ছাও করেছেন, কিন্তু আমরা তা চাই নি। লোকচক্ষুর অগোচরে, বহু দুঃখের ভিতর দিয়ে সে ছিল আমাদের যথার্থ তপস্তা । অর্থের এত অভাব ছিল যে, আজ জগদব্যাপী দুঃসময়েও তা কল্পনা করা যায় না। আর সে কথা কোনোকালে কেউ জানবেও না, কোনো ইতিহাসে তা লিখিত হবে না। আশ্রমের কোনো সম্পত্তি ছিল না, সহায়তা ছিল না— চাইও নি। এইজন্তই, র্যারা তখন এখানে কাজ করেছেন তারা অস্তরে দান করেছেন, বাইরে কিছু নেন নি । যে আদর্শে আকৃষ্ট হয়ে এখানে এসেছি তার বোধ সকলেরই মনে যে স্পষ্ট বা প্রবল ছিল তা নয়, কিন্তু অল্প পরিসরের মধ্যে তা নিবিড় হতে পেরেছিল। ছাত্রেরা তখন আমাদের অত্যন্ত নিকটে ছিল, অধ্যাপকেরাও পরম্পর অত্যন্ত নিকটে ছিলেন— পরম্পরের স্বহৃৎ ছিলেন তারা । আমাদের দেশের তপোবনের আদর্শ আমি নিয়েছিলাম। কালের পরিবর্তনের সঙ্গে সে আদর্শের রূপের পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু তার মূল সত্যটি ঠিক আছে- সেটি হচ্ছে, জীবিকার আদর্শকে স্বীকার করে তাকে সাধনার