পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন ব্ৰহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠাদিবসের উপদেশ হে সৌম্য মানবকগণ, অনেককাল পূর্বে আমাদের এই দেশ, এই ভারতবর্ষ, সকল বিষয়ে যথার্থ বড়ো ছিল— তখন এখানকার লোকের বীর ছিলেন ; তারাই আমাদের পূর্বপুরুষ । যথার্থ বড়ো কাহাকে বলে ? আমাদের পূর্বপুরুষেরা কী হলে আপনাদের বড়ো মনে করতেন ? আজকাল আমাদের মনে তাদের সেই বড়ো ভাবটি নেই বলেই ধনকেই আমরা বড়ো হবার উপায় মনে করি, ধনীকেই আমরা বলি বড়োমাহুষ । তারা তা বলতেন না । তাদের মধ্যে সবচেয়ে যারা বড়ো ছিলেন সেই ব্রাহ্মণরা ধনকে তুচ্ছ করতেন। তাদের বেশভূষা বিলাসিত কিছুই ছিল না । অথচ বড়ো বড়ো রাজারা এসে তাদের কাছে মাথা নত করতেন । যে মানুষ কাপড়চোপড় জুতোছাত নিয়ে নিজেকে বড়ো মনে করে, ভেবে দেখো দেখি সে কত ছোটে । জুতো কি মানুষকে বড়ো করতে পারে। দামি জুতো দামি কাপড় কি আমাদের কোনো গুণের পরিচয় দেয় । আমাদের প্রাচীনকালে ষে-সব ঋষিদের পায়ে জুতো ছিল না, গায়ে পোশাক ছিল না, তারা কি সাহেবের বাড়ির জুতো এবং বিলাতি দোকানের কাপড় পরা আমাদের চেয়ে অনেক বড়ো ছিলেন না। আজ যদি আমাদের সেই যাজ্ঞবল্ক্য, সেই বশিষ্ঠ ঋষি খালি গায়ে খালি পায়ে র্তাদের সেই জ্যোতির্ময় দৃষ্টি, তাদের সেই পিঙ্গল জটাভার নিয়ে আমাদের মাঝখানে এসে দাড়ান, তা হলে সমস্ত দেশের মধ্যে এমন কোন রাজা এমন কত বড়ো সাহেব আছেন খিনি তার জুতো ফেলে দিয়ে মাথার তাজ নামিয়ে, সেই দরিত্র ব্রাহ্মণের পায়ের ধূলা নিয়ে নিজেকে কৃতাৰ্থ না মনে করেন। আজ এমন কে আছে যে তার গাড়িজুড়ি জটালিকা এবং সোনার চেন নিয়ে তাদের সামনে মাথা তুলে দাড়াতে পারে। তারাই আমাদের পিতামহ ছিলেন, সেই পূজ্য ব্রাহ্মণদের আমরা নমস্কার করি । কেবল মাথা নত ক'রে নমস্কার করা নয়— তারা যে শিক্ষা দিয়েছেন তাই গ্রহণ করি, তারা ৰে দৃষ্টান্ত দিয়েছেন তার অনুসরণ করি। তাদের মতো হবার চেষ্টা করাই হচ্ছে তাদের প্রতি ভক্তি করা।