পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪৩২ রবীন্দ্র-রচনাবলী র্তারা বড়ো হয়েছিলেন কী গুণে । তারা সঙ্যকে সকলের চেয়ে বড়ো বলে জানতেন— মিথ্যার কাছে তারা মাথা নিচু করেন নি। সত্য কী তাই জানবার জন্যে সমস্ত জীবন তারা কঠিন তপস্তা করতেন— কেবল আমোদ-প্রমোদ করেই জীবনট কাটিয়ে দেওয়া তাদের লক্ষ্য ছিল না। যাতে সত্য জানবার কিছুমাত্র ব্যাঘাত করত তাকে তারা অনায়াসে পরিত্যাগ করতেন। মনে সত্য জানবার অবিশ্রাম চেষ্টা করতেন, মুখে সত্য বলতেন, এবং সত্য বলে যা জানতেন কাজেও তাই পালন করতেন, সেজন্যে কাউকে ভয় করতেন না। আমরা টাকাকড়ি জুতোছাত পাবার জন্তে যেরকম প্রাণপণ খেটে মরি, তারা সত্যকে পাবার জন্যে তার চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট স্বীকার করতেন। সেইজন্যে র্তারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি বড়ো ছিলেন । র্তারা অভয় ছিলেন, ধর্ম ছাড়া আর-কিছুকেই ভয় করতেন না। তাদের মনের মধ্যে এমন-একটি তেজ ছিল, সর্বদাই এমন-একটি আনন্দ ছিল যে, তারা কোনো রাজামহারাজার অন্যায় শাসনকে গ্রাহ করতেন না, এমন-কি, মৃত্যুকেও তারা ভয় করতেন না। তারা এটা বেশ জানতেন যে, তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেবার তো কিছু নেই– বেশভূষা ধনসম্পদ গেলে তো তাদের কোনো ক্ষতিই হয় না। তাদের যা-কিছু আছে সব মনের মধ্যে। তারা যে সত্য জানতেন তা তো দস্থ্য কিম্বা রাজা হরণ করতে পারত না। তারা নিশ্চয় জানতেন মৃত্যু ভয়ের বিষয় নয়। মৃত্যুতে এই শরীরটা মাত্র যায়, কিন্তু অন্তরের জিনিস যায় না। র্তারা সকলের মঙ্গলের জন্যে ভালোর জন্যে চিন্তা করতেন, কিসে সকলের ভালো হবে সেইটে তারা ধ্যান করতেন এবং যাতে ভালো হয় সেইটে তারা ব্যবস্থা করতেন। কার কী করা উচিত সেইটে সকলে তাদের কাছে জানতে আসত। কিসে ঘরের লোকের মঙ্গল হয় তাই জানবার জন্য গৃহস্থ লোকেরা তাদের কাছে আসত— কিসে প্রজাদের ভালো হয় তাই পরামর্শ নেবার জন্যে রাজারা তাদের কাছে আসত। পৃথিবীর সকলের ভালোর জন্য র্তারা সমস্ত আমোদ-প্রমোদ সমস্ত বিলাসিত ত্যাগ করে চিন্তা করতেন। কিন্তু তখন কি কেবল ব্রাহ্মণ-ঋষিরাই ছিলেন। তা নয়। রাজারাও ছিলেন, রাজার সৈন্তসামস্ত ছিল। রাজ্যের প্রয়োজনে তাদের যুদ্ধবিগ্রহ করতে হত। কিন্তু যুদ্ধের সময়েও তারা ধর্ম ভুলতেন না। যে-লোকের হাতে অস্ত্র নেই তাকে মারতেন না, শরণাপন্নকে বধ করতেন না, রথের উপর চড়ে নীচের লোকদের উপর অস্ত্র চালাতেন না । সৈন্তে-সৈন্তেই যুদ্ধ চলত, কিন্তু শত্রুপক্ষের দেশের নিরীহ প্রজাদের ঘরদুয়োর জালিয়ে দিতেন না। রাজার ছেলের যখন বড়ো বয়স হত তখন রাজা