পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমবায়নীতি 8ፃe . সভ্যতা। আমরা প্রাচ্য সভ্যত কথাটা ব্যবহার করে থাকি, কিন্তু এ সভ্যতা এশিয়ার ভিন্ন ভিন্ন দেশের চিত্তের সমবায়-মূলক নয় ; এর যে পরিচয় লে নেতিবাচক, অর্থাৎ এ সভ্যতা যুরোপীয় নয় এইমাত্র। নতুবা আরবের সঙ্গে চীনের বিস্তা শুধু মেলে নি ষে তা নয়, অনেক বিষয় তারা পরস্পরের বিরুদ্ধ। সভ্যতার বাহিক রূপ ও আন্তরিক প্রকৃতি তুলনা করে দেখলে ভারতীয় হিন্দুর সঙ্গে পশ্চিম-এশিয়া-বাসীসেমেটিকের অত্যন্ত বৈষম্য। এই উভয়ের চিত্তের ঐশ্বৰ্ষ পৃথকৃ ভাণ্ডারে জমা হয়েছে। এই জ্ঞান-সমবায়ের অভাবে এশিয়ার সভ্যতা প্রাচীন কালের ইতিহাসে ভিন্ন ভিন্ন অধ্যায়ে খণ্ডিত । ঐতিহাসিক সংঘাতে কোনো কোনো অংশে কিছু-কিছু দেনা-পাওনা হয়ে গেছে, কিন্তু এশিয়ার চিত্ত এক কলেবর ধারণ করে নি। এইজন্ত ৰখন ‘প্রাচ্য সভ্যতা’ শব্দ ব্যবহার করি তখন আমরা স্বতন্ত্রভাবে নিজের নিজের সভ্যতাকেই দেখতে পাই। এশিয়ার এই বিচ্ছিন্ন সভ্যতা বর্তমান কালের উপর আপন প্রভাব বিস্তার করতে পারে নি, য়ুরোপ পেরেছে ; তার কারণ সমবায়নীতি মন্থন্তত্বের মূলনীতি, মানুষ সহযোগিতার জোরেই মানুষ হয়েছে। সভ্যতা শব্দের অর্থই হচ্ছে মানুষের একত্র সমাবেশ । rকিন্তু এই যুরোপীয় সভ্যতার মধ্যেই কোনখানে বিনাশের বীজ-রোপণ চলেছে ? যেখানে তার মানবধর্মের বিরুদ্ধতা, অর্থাৎ যেখানে তার সমবায় ঘটতে পারে নি । সে হচ্ছে তার বিষয়ব্যাপারের দিক। এইখানে য়ুরোপের ভিন্ন ভিন্ন দেশ স্বতন্ত্র ও পরস্পরবিরুদ্ধ। এই বৈষয়িক বিরুদ্ধতা অস্বাভাবিক পরিমাণে প্রকাও হয়েছে, তার কারণ বিজ্ঞানের সাহায্যে বিষয়ের আয়োজন ও আয়তন আজ অত্যন্ত বিপুলীকৃত। তার ফলে যুরোপীয় সভ্যতায় একটা অদ্ভূত পরস্পরবিরুদ্ধতা জেগেছে। এক দিকে দেখছি মানুষকে বঁাচাবার বিদ্যা সেখানে প্রত্যহ দ্রুতবেগে অগ্রসর– ভূমিতে উর্বরতা, দেহে আরোগ্য, জীবনযাত্রায় জড় বাধার উপর কর্তৃত্ব মানুষ এমন করে আর কোনোদিন লাভ করে নি ; এরা যেন দেবলোক থেকে অমৃত আহরণ করতে বসেছে। আবার আর-এক দিক ঠিক এর বিপরীত। মৃত্যুর এমন বিরাট সাধন এর আগে কোনোদিন দেখা যায় নি। পাশ্চাত্যের প্রত্যেক দেশ এই সাধনায় মহোৎসাহে প্রবৃত্ত। এত বড়ো আত্মঘাতী অধ্যবসায় এর আগে মাহুষ কোনোদিন কল্পনাও করতে পারত না । জ্ঞানসমবায়ের ফলে যুরোপ ষে প্রচও শক্তিকে হস্তগত করেছে আত্মবিনাশের জন্ত সেই শক্তিকেই রোপ ব্যবহার করবার জন্তে উস্থত। মানুষের সমবায়নীতি ও অসমবায়নীতির বিক্ষৰফলের এমন প্রকাও দৃষ্টান্ত ইতিহাসে আর দেখি নি। জ্ঞানের অন্বেষণে বর্তমান