পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& ov রবীন্দ্র-রচনাবলী মোহর দিয়ে ঢাকা দিয়ে মনে করেছে স্বর্গে পৌছবার পূসা মাণ্ডল চুকিয়ে দেওয়া হল ; অথচ সেই মোহরের জন্য দেবতা যেখানে কাঙাল হয়ে দাড়িয়ে আছেন সেই মানুষের প্রতি দৃষ্টিই পড়ল না। আজ প্রাতে আমাদের আশ্রমবন্ধু অ্যানড় জের চিঠি পেলুম। তিনি যে কাজ করতে গেছেন সে তার আত্মীয়স্বজনের কাজ নয়, বরং তাদের প্রতিকূল । বাহত ধারা র্তার অনাত্মীয়, যারা তার স্বজাতীয় নয়, তাদের জন্য তিনি কঠিন দুঃখ সইছেন, স্বজাতীয়দের বিরুদ্ধে প্রবল সংগ্রাম করে দুঃখপীড়া পাচ্ছেন। এবার সেখানে বাবা মাত্র তিনি দেখলেন বসন্তুমারীতে বহু ভারতীয় পীড়িত, মৃত্যুগ্রস্ত ; তার কাজ হল তাদের সেবা করা । মারীর মধ্যে ভারতীয় বণিকৃদের এই ষে তিনি সেবা করেছেন, এতে কিলে র্তাকে বল দিয়েছে। মানবসস্তানের সেবায় বিশ্বপিতার সেবার উপদেশ খৃষ্টানদেশের মধ্যে এতকাল ধরে এত গভীররূপে প্রবেশ করেছে যে সেখানে আজ যারা নিজেকে নাস্তিক বলে প্রচার করেন তাদেরও নাড়ির রক্তে এই বাণী বহমান । তারাও মানুষের জন্য প্রাণান্তকর দুঃখ স্বীকার করাকে আপন ধর্ম বলে প্রমাণ করেছেন। এ ফল কোন বৃক্ষে ফলল। কে এতে রসসঞ্চার করে। এ প্রশ্নের উত্তরে এ কথা অস্বীকার করতে পারি নে যে, সে খৃষ্টধর্ম। লক্ষ্যে অলক্ষ্যে বিবিধ আকারে এই ধর্ম পশ্চিম মহাদেশে কাজ করছে । যাকে সেখানকার লোকে হিউম্যান ইণ্টরেস্ট অর্থাৎ মানবের প্রতি ঔংস্থক্য বলে তা জ্ঞানবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ইউরোপে যেমন জাগরক তেমন আর কোথাও দেখি নি। সে দেশে সর্বত্রই মানুষকে সেখানকার লোকে সম্পূর্ণরূপে চেনবার জন্ত তথ্য অন্বেষণ করে বেড়াচ্ছে। যারা নরমাংস খায় তাদেরও মধ্যে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছে, ‘তুমি মাহব, তুমি কী কর, তুমি কী ভাব। আর আমরা ? আমাদের পাশের লোকেরও খবর নিই নে। তাদের সম্বন্ধে না আছে কৌতুহল, না আছে শ্রদ্ধা। উপেক্ষা ও অবজ্ঞার কুহেলিকায় আচ্ছন্ন করে দিয়ে অধিকাংশ প্রতিবেশীর সম্বন্ধে অজ্ঞান হয়ে আছি। কেন এমন হয়। মানুষকে যথোচিত মূল্য দিই নে বলেই আজকের দিনে আমাদের এই দুর্দশ। খৃষ্ট বাচিয়েছেন পৃথিবীর অনেককে, বাচিয়েছেন মানুষের ঔদাসীন্য থেকে মানুষকে । আজকে যারা তার নাম নেয় না, তাকে অপমান করতেও কুষ্ঠিত হয় না, তারাও র্তার সে বাণীকে কোনো-না কোনো আকারে গ্রহণ করেছে। মানুষ ষে বহুমূল্য, তার লেবাতেই যে ভগবানের সেবা সার্থক, এই কথা ইউরোপ যেখানে মানে নি সেখানেই সে মার খেয়েছে। এ কথার মূল্য ষে পরিমাণে ইউরোপ দিয়েছে সেই পরিমাণেই সে উন্নত হয়েছে। মামুষের প্রতি খৃষ্টধর্ম ৰে অসীম প্ৰদ্ধা