পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

११९ ब्ररौठ-ब्रध्नांदनौ ঐনিকেতনের ইতিহাস ও আদর্শ প্রীনিকেতনের কর্মীদের সভায় কথিত আমার যা বলবার ছিল তা অনেকবার বলেছি, কিছু বাকি রাখি নি। তখন শরীরে শক্তি ছিল, মনে ভাবের প্রবাহ ছিল অবারিত। এখন অস্বাস্থ্য ও জরাতে আমার শক্তিকে খর্ব করেছে, এখন আমার কাছে তোমরা বেশি কিছু প্রত্যাশা কোরো না । আমি এখানে অনেক দিন পরে এসেছি । তোমাদের সঙ্গে মাঝে মাঝে দেখা হয়— আমার উপস্থিতি ও সঙ্গমাত্র তোমাদের দিতে পারি। প্রথম যখন এই বাড়ি কিনলুম তখন মনে কোনো বিশেষ সংকল্প ছিল না। এইটুকু মাত্র তখন মনে হয়েছিল যে, শাস্তিনিকেতন লোকালয়ের থেকে বিচ্ছিন্ন। দূর দেশ থেকে সমাগত ভদ্রলোকের ছেলেদের পাস করবার মতো বিদ্যাদানের ব্যবস্থা সেখানে আছে, আর সেই উপলক্ষে শিক্ষাবিভাগের বরাদ্ধ বিস্তার কিছু বেশি দেবার চেষ্ট হয় মাত্র। শাস্তিনিকেতনের কাজের মধ্যেও আমার মনে আর-একটি ধারা বইছিল । শিলাইদ পতিসর এই-সব পল্লীতে যখন বাস করতুম তখন আমি প্রথম পল্পীজীবন প্রত্যক্ষ করি। তখন আমার ব্যবসায় ছিল জমিদারি। প্রজারা আমার কাছে তাদের সুখ-দুঃখ নালিশ-আবদার নিয়ে আসত। তার ভিতর থেকে পীর ছবি আমি দেখেছি। এক দিকে বাইরের ছবি— নদী, প্রাস্তর, ধানখেত, ছায়াতরুতলে তাদের কুটার— আর-এক দিকে তাদের অন্তরের কথা। তাদের বেদনাও আমার কাজের সঙ্গে জড়িত হয়ে পৌছত । আমি শহরের মাস্থ্য, শহরে আমার জন্ম। আমার পূর্বপুরুষেরা কলকাতার আদিম বাসিন্দা। পল্লীগ্রামের কোনো স্পর্শ আমি প্রথম-বয়সে পাই নি । এইজন্স যখন প্রথম আমাকে জমিদারির কাজে নিযুক্ত হতে হল তখন মনে দ্বিধা উপস্থিত হয়েছিল, হয়তো আমি এ কাজ পারব না, হয়তো আমার কর্তব্য আমার কাছে অপ্রিয় হতে পারে। জমিদারির কাজকর্ম, হিসাবপত্র, খাজনা-আদায়, জমা-ওয়াশীল— এতে কোনোকালেই অভ্যন্ত ছিলুম না ; তাই অজ্ঞতার বিভীষিকা আমার মনকে জাচ্ছন্ন করেছিল। সেই অঙ্ক ও সংখ্যার বাধনে জড়িয়ে পড়েও প্রকৃতিস্থ থাকতে পারব এ কথা তখন ভাবতে পারি নি। কিন্তু কাজের মধ্যে ৰখন প্রবেশ করলুম, কাজ তখন আমাকে পেয়ে বসল।