পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

6.bribe রবীন্দ্র-রচনাবলী কী করে মার বাচানো যায়— সেই বিদ্যার জোরেই দৈত্যের স্বৰ্গ দখল করে নিয়েছিল। শুক্রাচীর্ষের কাছে পাঠ নিতে আমরা অবজ্ঞা করেছি— সে হল হাতিয়ারবিদ্যার পাঠ। এইজন্তে পদে পদে হেরেছি, আমাদের কঙ্কাল বেরিয়ে পড়ল। বোম্বাই প্রদেশে এ কথা বললে ক্ষতি হয় না যে, ‘চরখ ধরো’। সেখানে লক্ষ লক্ষ কলের চরখা পশ্চাতে থেকে তার অভাব পূরণ করছে। বিদেশী কলের কাপড়ের বস্তার বাধ বাধতে পেরেছে ঐ কলের চরখায়। নইলে একটিমাত্র উপায় ছিল নাগাসন্ন্যাসী সাজা। বাংলাদেশে হাতের চরখাই যদি আমাদের একমাত্র সহায় হয় তা হলে তার জরিমানা দিতে হবে বোম্বাইয়ের কলের চরখার পায়ে । তাতে বাংলার দৈন্তও বাড়বে, অক্ষমতাও বাড়বে। বৃহস্পতি গুরুর কাছে যে বিদ্যা লাভ করেছি— তাকে পূর্ণতা দিতে হবে শুক্রাচার্ষের কাছে দীক্ষা নিয়ে। যন্ত্রকে নিন্দ করে যদি নির্বাসনে পাঠাতে হয়, তা হলে যে মুদ্রাষন্ত্রের সাহায্যে সেই নিন্দ রটাই তাকে স্বদ্ধ বিসর্জন দিয়ে হাতে-লেখা পুথির চলন করতে হবে। এ কথা মানব যে, মুদ্রাষন্ত্রের অপক্ষপাত দাক্ষিণ্যে অপাঠ্য এবং কুপাঠ্য বইয়ের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। তবুওর আশ্রয় যদি ছাড়তে হয় তবে আর-কোনো একটা প্রবলতর যন্ত্রেরই সঙ্গে চক্রান্ত করে সেটা সম্ভব হতে পারবে । o যাই হোক, বাংলাদেশেও একদিন বিষম ব্যর্থতার তাড়নায় "বঙ্গলক্ষ্মী’ নাম নিয়ে কাপড়ের কল দেখা দিয়েছিল । সাংঘাতিক মার খেয়েও আজও সে বেঁচে আছে । তার পরে দেখা দিল ‘মোহিনী’ মিল ; একে একে আরো কয়েকটি কারখানা মাথা তুলেছে। এদের যেমন করে হোক রক্ষা করতে হবে- বাঙালির উপর এই দায় রয়েছে। চাষ করতে করতে যে কেবল ফসল ফলে তা নয়, চাষের জমিও তৈরি করে। কারখানাকে যদি বঁাচাই তবে কেবল যে উৎপন্ন দ্রব্য পাব তা নয়, দেশে কারখানার জমিও গড়ে উঠবে। বাংলার মিল থেকে যে কাপড় উৎপন্ন হচ্ছে, যথাসম্ভব একান্তভাবে সেই কাপড়ই বাঙালি ব্যবহার করবে ব’লে যেন পণ করে। একে প্রাদেশিকতা বলে না, এ আত্মরক্ষ। উপবাসক্লিষ্ট বাঙালির অন্নপ্রবাহু যদি অন্ত প্রদেশের অভিমুখে অনায়াসে বইতে থাকে এবং সেইজন্ত বাঙালির দুর্বলতা যদি বাড়তে থাকে, তবে মোটের উপর তাতে সমস্ত ভারতেরই ক্ষতি। আমরা সুস্থ সমর্থ হয়ে দেহরক্ষা করতে যদি পারি তবেই আমাদের শক্তির সম্পূর্ণ চালনা সম্ভব হতে পারে। সেই শক্তি নিরশনক্ষীণতায় অবমতি হলে তাতে, শুধু ভারতকে কেন, পৃথিবীকেই বঞ্চিত করা হবে।