পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(tమ e রবীন্দ্র-রচনাবলী বিদেশী কয়লায় বিদেশী মিশাল যতটা, বিলিতি স্বতো সত্ত্বেও তাতের কাপড়ে তার চেয়ে স্বল্পতর। আরো গুরুতর কথা এই যে, আমাদের তাতের সঙ্গে বাংলা শিল্প আছে বাধা । এই শিল্পের দাম অর্থের দামের চেয়ে কম নয়। এ কথা বলা বাহুল্য বাংলা তাতে স্বদেশী মিলের বা চরখার স্থতো ব্যবহার করেও তাকে বাজারে চলন-যোগ্য দামে বিক্রি করা যদি সম্ভবপর হয়, তবে তার চেয়ে ভালো আর কিছুই হতে পারে না। স্বদেশী চরখার উৎপাদনশক্তি যখন সেই অবস্থায় পৌছবে তখন তাতিকে অনুনয়-বিনয় করতেই হবে না ; কিন্তু যদি না পৌঁছয়, তবে বাঙালি তাতিকে ও বাংলার শিল্পকে বিলিতি লৌহযন্ত্র ও বিদেশী কয়লার বেদীতে বলিদান করব না । আশ্বিন ১৩৩৮ জলোৎসর্গ ভুবনডাঙার জলাশয়-প্রতিষ্ঠ উপলক্ষে কখিত আজকের অনুষ্ঠানস্থচীর শেষভাগে আছে আমার অভিভাষণ। কিন্তু ষে বেদমন্ত্রগুলি এইমাত্র পড়া হল তার পরে আমি আর কিছু বলা ভালো মনে করি না । সেগুলি এত সহজ, এমন স্বন্দর, এমন গম্ভীর যে, তার কাছে আমাদের ভাষা পৌছয় না। জলের শুচিত, তার সৌন্দর্য, তার প্রাণবত্তার অকৃত্রিম আনন্দে এই মন্ত্রগুলি নির্মল উৎসের মতো উৎসারিত। আমাদের মাতৃভূমিকে স্বজলা স্বফল বলে স্তব করা হয়েছে। কিন্তু এই দেশেই ষে জল পবিত্র করে সে স্বয়ং হয়েছে অপবিত্র, পঙ্কবিলীন— যে করে আরোগ্যবিধান সেই আজ রোগের আকর। দুর্ভাগ্য আক্রমণ করেছে আমাদের প্রাণের মূলে, আমাদের জলাশয়ে, আমাদের শস্তক্ষেত্রে। সমস্ত দেশ হয়ে উঠেছে তৃবার্ত, মলিন, রুগণ, উপবাসী। ঋষি বলেছেন– হে জল, যেহেতু তুমি জানন্দদাতা, তুমি আমাদের অন্নলাভের যোগ্য করে । সর্ববিধ দোষ ও মালিন্ত -দূরকারী এই জল মাতার স্থায় আমাদের পবিত্র করুক — জলের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশ আনন্দের যোগ্যতা, অয়লাভের যোগ্যতা, রমণীয় দৃশু-লাভের যোগ্যতা প্রতিদিন হারিয়ে ফেলছে। নিজের চারি দিককে অমলিন অন্নবান জনাময় করে রাখতে পারে না ষে বর্বরতা, তা রাজারই হোক আর প্রজারই হোক, তার মানিতে সমস্ত দেশ লাঞ্জিত। অথচ একদিন দেশে