পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩০৪ উদয়-অচলে অরুণ উঠিলে কমল ফুটে যে জলে এত কাল ধরে তাহার তত্ব ছাপা ছিল কোন ছলে ! এত যে মন্ত্র পড়িল ভ্রমর নবমালতীর কানে বড়ো বড়ে যত পণ্ডিতজন বুঝিল না তার মানে ? শুনিয়া তপন অস্তে নামিল শরমে গগন ভরি, শুনিয়া চন্দ্র থমকি রহিল বনের আড়াল ধরি। শুনে সরোবরে তখনি পদ্ম নয়ন মুদিল ত্বর, দখিন-বাতাস বলে গেল তারে— সকলি পড়েছে ধরা ! শুনে ‘ছিছি' বলে শাখা নাড়ি নাড়ি শিহরি উঠিল লতা, ভাবিল মুখর এখনি না জানি আরো কী রটাবে কথা ! ভ্রমর কহিল যুর্থীর সভায়, যে ছিল বোবার মতে পরের কুৎসা রটাবার বেলা তারো মুখ ফোটে কত! শুনিয়া তখনি করতালি দিয়ে হেসে উঠে নরনারী— যে যাহারে চায় ধরিয়া তাহায় দাড়াইল সারি সারি। হয়েছে প্রমাণ হয়েছে প্রমাণ হাসিয়া সবাই কহে— যে কথা রটেছে একটি বর্ণ বানানো কাহারো নহে ।” বাহুতে বাহুতে বাধিয়া কহিল নয়নে নয়নে চাহি, ‘আকাশে পাতালে মরতে আজি তো গোপন কিছুই নাহি। কহিল হাসিয়া মালা হাতে লয়ে পাশাপাশি কাছাকাছি, ত্ৰিভুবন যদি ধরা পড়ি গেল তুমি আমি কোথা আছি! হায় কবি হয়, সে হতে প্রকৃতি হয়ে গেছে সাবধানী— মাথাটি ঘেরিয়া বুকের উপরে আঁচল দিয়েছে টানি । যত ছলে আজ যত ঘুরে মরি জগতের পিছু পিছু কোনোদিন কোনো গোপন খবর নূতন মেলে না কিছু। শুধু গুঞ্জনে কৃজনে গন্ধে সন্দেহ হয় মনে লুকানো কথার হাওয়া বহে যেন বন হতে উপবনে, মনে হয় যেন আলোতে ছায়াতে রয়েছে কী ভাব ভরা— হায় কবি, হায়, হাতে হাতে আর কিছুই পড়ে না ধরা !