পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8殻bー রবীন্দ্র-রচনাবলী سر؟ গুরুজি প্রতি বছরে এক বার করিয়া কোনো দুর্গম জায়গায় নির্জনে বেড়াইতে যাইতেন। মাঘ মাসে সেই তার সময় হইয়াছে। শচীশ বলিল, আমি সঙ্গে যাইব । আমি বলিলাম, আমিও যাইব । রসের উত্তেজনায় আমি একেবারে মজ্জায় মজ্জায় জীর্ণ হইয়। গিয়াছিলাম। কিছুদিন ভ্রমণের ক্লেশ এবং নির্জনে বাস আমার নিতান্ত দরকার ছিল । স্বামীজি দামিনীকে ডাকিয় বলিলেন, মা, আমি ভ্রমণে বাহির হইব । অন্যবারে এই সময়ে যেমন তুমি তোমার মাসির বাড়ি গিয়া থাকিতে, এবারেও সেইরূপ বন্দোবস্ত করিয়া দিই । দামিনী বলিল, আমি তোমার সঙ্গে যাইব । স্বামীজি কহিলেন, পারিবে কেন ? সে যে বড়ো শক্ত পথ । দামিনী বলিল, পারিব। আমাকে লইয়া কিছু ভাবিতে হইবে না। স্বামী দামিনীর এই নিষ্ঠায় খুশি হইলেন। অন্য অন্য বছর এই সময়টাই দামিনীর ছুটির দিন ছিল, সম্বৎসর ইহার জন্য তার মন পথ চাহিয়া থাকিত । স্বামী ভাবিলেন, এ কী অলৌকিক কাণ্ড ! ভগবানের রসের রসায়নে পাথরকে নবনী করিয়া তোলে কেমন করিয়া ! কিছুতে ছাড়িল না, দামিনী সঙ্গে গেল। S সেদিন প্রায় ছয় ঘণ্ট রৌদ্রে হঁটিয়া আমরা যে জায়গায় আসিয়া পড়িয়াছিলাম সেটা সমুদ্রের মধ্যে একটা অন্তরীপ। একেবারে নির্জন নিস্তব্ধ ; নারিকেলবনের পল্লববীজনের সঙ্গে শাস্তপ্রায় সমুদ্রের অলস কল্লোল মিশিতেছিল। ঠিক মনে হইল, যেন ঘুমের ঘোরে পৃথিবীর একখানি ক্লান্ত হাত সমুদ্রের উপর এলাইয়া পড়িয়াছে। সেই হাতের তেলোর উপরে একটি নীলাভ সবুজ রঙের ছোটাে পাহাড়। পাহাড়ের গায়ে অনেক কালের খোদিত এক গুহা আছে। সেটি বৌদ্ধ কি হিন্দু, তার গায়ে যে-সব মূর্তি তাহা বুদ্ধের না বাস্থদেবের, তার শিল্পকলায় গ্রীকের প্রভাব আছে কি নাই, এ লইয়৷ পণ্ডিতমহলে গভীর একটা অশান্তির কারণ ঘটিয়াছে । কথা ছিল গুহা দেখিয়া আমরা লোকালয়ে ফিরিব । কিন্তু সে সম্ভাবনা নাই । দিন তখন শেষ হয়, তিথি সেদিন কৃষ্ণপক্ষের দ্বাদশী। গুরুজি বলিলেন, আজ এই গুহাতেই রাত কাটাইতে হইবে।