পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ܔ じbr রবীন্দ্র রচনাবলী সুরঙ্গমার গান খোলো খোলো দ্বার, রাখিয়ো না। আর বাহিরে আমায় দাড়ায়ে । দাও সাড়া দাও, এই দিকে চাও এসো দুই বাহু বাড়ায়ে ৷ কাজ হয়ে গেছে। সারা, উঠেছে সন্ধাতারা, আলোকের খেয়া হয়ে গেল দেয়া অস্তসাগর পারায়ে ৷ ভরি লয়ে ঝারি এনেছি তো বারি সেজেছি তো শুচি দুকূলে, বেঁধেছি। তো চুল, তুলেছি তো ফুল গোথেছি তো মালা মুকুলে । ধেনু এল গোঠে ফিরে পাখিরা এসেছে নীড়ে, পথ ছিল যত জুডিয়া জগত আঁধারে গিয়েছে হারায়ে ৷ ধীরে ধীরে আলো নিবে গিয়ে অন্ধকার হয়ে গেল সুদৰ্শন ! অন্ধকারে আমি যে কিছুই দেখতে পাচ্ছি নে । তুমি এর মধ্যে আছ ? নেপথ্যে | এই তো আমি আছি । সুদৰ্শন । আমি তোমাকে বরণ করব, সে কি না দেখেই ? নেপথ্যে ! চোখে দেখতে গেলে ভুল দেখবে— অন্তরে দেখো মন শুদ্ধ করে { সুদৰ্শনা । ভয়ে যে আমার বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠছে। নেপথ্যে । প্রেমের মধ্যে ভয় না থাকলে রস নিবিড় হয় না । সুদৰ্শন । এই অন্ধকারে তুমি আমাকে দেখতে পােচ্ছ ? নেপথ্যে । ইহা পাচ্ছি । সুদৰ্শনা। কী রকম দেখছি ? নেপথ্যে । আমি দেখতে পাচ্ছি। তোমার মধ্যে দেহ নিয়েছে যুগযুগান্তরের ধ্যান, লোকলোকান্তরের আলোক, বহু শত শরৎ-বসন্তের ফুল ফল । তুমি বহুপুরাতনের নূতন রূপ। সুদৰ্শন ! বলো বলে এমনি করে বলে। মনে হচ্ছে যেন অনাদিকালের গান জন্মজন্মান্তর থেকে শুনে আসছি। কিন্তু প্ৰভু, এ যে কঠিন কালো লোহার মতো অন্ধকার, এ যে আমার উপর চেপে আছে ঘুমের মতো, মূৰ্ছার মতো, মৃত্যুর মতো । এ জায়গায় তোমাতে আমাতে মিল হবে কেমন করে ? না না, হবে না মিলন, হবে না । এখানে নয়, চোখের দেখার জগতেই তোমাকে দেখব— সেইখানেই যে আমি আছি । নেপথ্যে । আচ্ছা দেখো । তোমাকে নিজে চিনে নিতে হবে । চিনে নেব, লক্ষ লোকের মধ্যে চিনে নেব, ভুল হবে না । নেপথ্যে। বসন্ত-পূর্ণিমার উৎসবে সকল লোকের মধ্যে আমাকে দেখবার চেষ্টা কোরো। সুরঙ্গমা সুরঙ্গমা । কী প্ৰভু । নেপথ্যে । বসন্ত-পূর্ণিমার উৎসব তো এল ।