পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী 2 4 ܠܼ ভদ্রসেন । শোনো একবার, আমি যে ভোর থেকে এখানে দাড়িয়ে- তখনো কাক ডাকে নি:- এতক্ষণ ছিলে কোথায় ? রাজা, আমি বিক্রমস্থলীর ভদ্রসেন— ভক্তকে স্মরণ রেখো । রাজবেশী | তোমাদের ভক্তিতে বড়ো প্রীত হলেম । বিরাজদত্ত । মহারাজ, আমাদের অভাব বিস্তর— এতদিন দর্শন পাই নি, জানাব। কাকে । রাজবেশী | তোমাদের সমস্ত অভাব মিটিয়ে দেব । [রাজবেশীর প্রস্থান দেশী পথিকদের প্রবেশ কীেণ্ডিল্য । ওরে পিছিয়ে থাকলে চলবে না- ভিড়ে মিশে গেলে রাজার চোখে পড়ব না ; বিরাজদত্ত । দেখ দেখ একবার নরোত্তমের কাণ্ডখন দেখ! আমরা এত লোক আছি, সবাইকে ঠেলেঠলে কোথা থেকে এক তালপাতার পাখা নিয়ে রাজাকে বাতাস করতে লেগে গৈছে। কৌণ্ডিল্য । তাই তো হে, লোকটার আস্পর্ধা তো কম নয় । মাধব । ওকে জোর করে ধরে সরিয়ে দিতে হচ্ছে- ও কি রাজার পাশে দাড়াবার ঘূর্ণ; কীেণ্ডিল্য । ওহে রাজা কি আর এটুকু বুঝবে না ? এ যে অতিভক্তি । বিরাজদত্ত । না হে না— রাজাদের যদি মগজই থাকবে তা হলে মুকুট থাকবার দরকার কী ; ঐ তালপাখার হাওয়া খেয়েই ভুলবে। { সকলের প্রস্তা, কুম্ভ । এখনই এই রাস্তা দিয়েই যে গেল। ঠাকুরদা | রাস্তা দিয়ে গেলেই রাজা হয় নাকি রে ; কুম্ভ । দাদা, একেবারে স্পষ্ট চোখে দেখা গৈলা— একজন না দুজন না, রাস্তার দুধারের লোক তাকে দেখে নিয়েছে । ঠাকুরদা ! সেইজন্যেই তো সন্দেহ । কবে আমার রাজা রাস্তার লোকের চোখ ধাধিয়ে বেড়ায় । কুম্ভ । তা আজকে যদি মার্জি হয়ে থাকে, বলা যায় কী । ঠাকুরদা। বলা যায় রে বলা যায়— আমার রাজার মর্জি বরাবর ঠিক আছে— ঘড়ি-ঘড়ি বদলা: nl | কুম্ভ। কিন্তু কী বলব দাদা— একেবারে ননির পুতুলটি। ইচ্ছে করে সর্বাঙ্গ দিয়ে তাকে ছায়া করে রাখি । ঠাকুরদা ! তোর এমন বুদ্ধি কবে হল ? আমার রাজা ননির পুতুল, আর তুই তাকে ছায়া করে রাখবি । কুম্ভ । যা বল দাদা, দেখতে বড়ো সুন্দর— আজি তো এত লোক জুটেছে আমনটি কাউকে দেখলুম। ୩ | ঠাকুরদা। আমার রাজা তোদের চোখেই পড়ত না । কুম্ভ । ধ্বজা দেখতে পেলুম যে গা । লোকে যে বলে, এই উৎসবে রাজা বেরিয়েছে । ঠাকুরদা। বেরিয়েছে বৈকি। কিন্তু সঙ্গে পাইক নেই, বাদি নেই। কুম্ভ । কেউ বুঝি ধরতেই পারে না ? ঠাকুরদা। হয়তো কেউ কেউ পারে। কুম্ভ । যে পারে সে বোধ হয় যা চায়। তাই পায় ? ঠাকুরদা। সে কিছু চায় না। ভিক্ষুকের কর্ম নয় রাজাকে চেনা। ছোটাে ভিক্ষুক বড়ো ভিক্ষুককেই রাজা বলে মনে করে বসে । { সকলের প্রস্থান