পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\bbr& রবীন্দ্র-রচনাবলী “বা হাত দিয়ে কাচা করে লেখা ; বুদ্ধির পরিচয় নেই, সদৃপদেশ আছে।” “তুমি লিখছ- ছেলেরা অকালবোধনে দেশকে মারতে বসেছে । বঙ্গনারীদের কাছে তোমার সকরুণ আপিল এই যে, তারা যেন লক্ষ্মীছাড়াদের মাথা ঠাণ্ড করে । বলেছ— দূর থেকে ভৎসনা করলে কানে পৌছোবে না । ওদের মাঝখানে গিয়ে পড়তে হবে, যেখানে ওদের নেশার আড্ডা · শাসনকর্তাদের সন্দেহ হতে পারে, তা হোক । বলেছি- তোমরা মায়ের জাত ; ওদের শান্তি নিজে নিয়েও যদি ওদের বাচাতে পার, মরণ সার্থক হবে । আজকাল সর্বদাই বলে থােক- তোমরা মায়ের জাত, ঐ কথাটাকে লবণান্বতে ভিজিয়ে লেখার মধ্যে বসিয়ে দিয়েছি। মাতুবৎসল পাঠকের চোখে জল আসবে। যদি তুমি পুরুষ হতে, এর পরে রায়বাহাদুর পদবী পাওয়া অসম্ভব হত না ।” “আপনি যা লিখেছেন সেটা যে একেবারেই আমার কথা হতে পারে না তা আমি বলব না । এই সর্বনেশে ছেলেগুলোকে আমি ভালোবাসি— অমন ছেলে আছে কোথায় ! একদিন ওদের সঙ্গে কলেজে পড়েছি । প্রথম প্রথম ওরা আমার নামে বোর্ডে লিখেছে। যা-তা- পিছন থেকে ছোটো এলাচ বলে চেচিয়ে ডেকেই ভালো-মানুষের মতো আকাশের দিকে তাকিয়েছে। ফোর্থ ইয়ারে পড়ত আমার বন্ধু ইন্দ্ৰাণী— তাকে বলত বড়ো এলাচ, সে-বেচারার বহরে কিছু বাহুল্য ছিল, রঙটাও উজ্জ্বল ছিল না । এই-সব ছোটোখাটো উৎপাত নিয়ে অনেক মেয়ে রাগারগি করত, আমি কিন্তু ছেলেদের পক্ষ নিয়েছি । আমি জানতুম, আমরা ওদেব চোখে অনভ্যস্ত তাই ওদের ব্যাপারটা হয়ে পড়ে এলোমেলো--- কদৰ্য্যও হয়। কখনো কখনো, কিন্তু সেটা ওদের স্বাভাবিক নয় । যখন অভ্যোস হ: গেল, সুর আপনি এল সহজ হয়ে । ছোটাে এলাচ হল এলাদি । মাঝে মাঝে কারও সুরে মধুর ওস লেগেছে - কেনই বা লাগবে না ? আমি কখনো ভয় করি নি তা নিযে ! আমার অভিজ্ঞতায় দেখো", ছেলেদের সঙ্গে ব্যবহার করা খুবই সহজ, মেয়েরা জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে যদি ওদের মৃগয়া করবার দিকে ঝোক না দেয় । তার পরে একে একে দেখলুম। ওদের মধ্যে সব-চেয়ে ভালো যারা, যাদে । ইতািরতা নেই, মেয়েদের 'পন্ধে সম্মান যাদের পুরুষের যোগা---" “অর্থাৎ কলকাতার রসিক, ছেলেদের মতো যাদের প্রস গজিয়ে-ওঠা নয়।--” “হা তারাই, ছুটিল মৃত্যুদূতের পিছন পিছন মরিয়া হয়ে ও র: প্রায় সবাই আমারই মতো বাঙািল । ওরাই যদি মরতে ছোটে আমি চাই নে ঘরের কোণে বেঁচে থাকতে ; কিন্তু দেখুন মাস্টারমশায, সতি{ কথা বলব । যতই দিন যাচ্ছে, আমাদের উদ্দেশ্যটা উদ্দেশা না হয়ে নেশা হয়ে উঠছে ; আমাদের কাজের পদ্ধতি চলেছে যেন নিজের বেতালা ঝোকে বিচাব্বিশক্তির বাইরে ; ভালো লাগছে না ; আমন, সব ছেলেদের কোন অক্ষশক্তির কাছে বলি দেওয়া হচ্ছে ! আমার বুক ফেটে যায় ।” “বৎসে, এই যে ধিক্কার এটাই কুরুক্ষেত্রের উপক্ৰমণিকা । অর্জনের মনেও ক্ষোভ লেগেছিল ডাক্তারি শেখবার গোড়ায় মড়া কাটবাব সময় ঘূণায় প্রায় মািৰ্ছ গিয়েছিলুম ; ঐ ঘূণাটাই ঘূণা | শক্তিব গোড়ায় নিষ্ঠুরের সাধনা, শেষে হয়তো ক্ষমা ! তোমরা বলে থােক--- মেঘের মায়ের জাত, কথািট গৌরবের নয় । মা তো প্রকৃতির হাতে স্বতই বানানো ; জন্তুজানোয়াল রাও বাদ যায় না । তার চেয়ে বড়ো কথা তোমরা শক্তিরূপিণী, এইটোকেই প্রমাণ করতে হবে। দযামায়ার জলাজমি পেরিয়ে গিয়ে শক্তি ডাঙায় | শক্তি দাও, পুরুষকে শক্তি দাও ।” “এ-সব মস্ত কথা বলে আপনি ভোলাচ্ছেন আমাদেব । আমরা আসলে যা, তার চেয়ে দাবি করছেন অনেক বেশি । এতটা সইবে না ।” “দাবির জোরেই দাবি সত্যু হয় । তোমাদের আমরা যা বিশ্বাস করতে থাকিব তোমরা তাই হয়ে উঠবে । তোমরাও তেমনি করে আমাদের বিশ্বাস করে যাতে আমাদের সাধনা সত্য হয় ।” “আপনাকে কথা কওয়াতে ভালোবাসি কিন্তু এখন সে নয় ; আমি নিজে কিছু বলতে ইচ্ছে করি ” “আচ্ছা | তা হলে এখানে নয়, চলো ঐ পিছনের ঘরটাতে ।” পর্দাটানা আধা অন্ধকার ঘরে গেল ওরা ; সেখানে একখানা পুরোনো টেবিল, তার দুধারে দুখানা