পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চার অধ্যায় \9brዒ কবছিল ৷ আওয়াজে বােঝা যায় জন বৃষভেরই পুষিা বাছুর । আমি সিডিশনের নমুনা সুদ্ধ ওদের নামে “আন্দাজ করতে ভুল কর নি তো কানাই ?” “বরং ভুল করে সন্দেহ করা ভালো, কিন্তু সন্দেহ না করে ভুল করা সাংঘাতিক । খাটি বোকাই যদি হয় তা হলে কেউ ওদের বাচাতে পারবে না, আর যদি হয় খাটি দুশমন তা হলে ওদের মারবে কে ? আমার রিপোর্টে উন্নতিই হবে । সেদিন চড়া গলায় শয়তানি শাসনপ্রণালীর উপর দিয়ে রক্তগঙ্গা বওয়াবার প্রস্তাব তুলেছিল । নিশ্চয়ই অভয়চরণ রক্ষিত এদের উপাধি । একদিন সন্ধ্যাবেলায় কাশবাক্স নিয়ে হিসেব মেলাতে বসেছিলুম। হঠাৎ একটা ধুলোমাখা ছেড়া কাপড়-পরা ছেলে এসে চুপি চুপি বললে, টাকা চাই পঁচিশটা, যেতে হবে দিনাজপুরে । আমাদের মথুর মামার নাম করলে । আমি লাফ দিয়ে উঠে চীৎকার করে বলে উঠলুম, শয়তান, এতবড়ো আস্পর্ধা তোমার । এখনই ধরিয়ে দেব পুলিসের হাতে - সময় হাতে একটুও ছিল না, নইলে প্ৰহসনটা শেষ করতুম, নিয়ে যে তুম থানায় । তোমার ছেলেরা যারা পাশের ঘরে বসে চা খাচ্ছিল তারা আমার উপর অগ্নিশৰ্মা ; ওকে দেবে বলে চাঁদা তোেলবার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখলে, সবার পকেট কুড়িয়ে তেরো আনার বেশি ফন্ড উঠল। না । ছেলেটা আমার মূর্তি দেখে সরে পড়েছে।” “তবে তো দেখছি তোমার ঢাকনির ফুটাে দিয়ে গন্ধ বেরিয়ে পড়েছে—— মাছির আমদানি শুরু रुळ ||" ”সন্দেহ নেই। ভায়া, এখনই ছড়িয়ে ফেলো তোমার ছেলেগুলোকে দূরে দূরে- ওদের একজনও Re (333 N. & C35 Ostensible means of livelihood SCTAKS Qsil B. " “চাই নিশ্চয়ই | কিন্তু উপায় ঠাউরেছ ?” ”অনেকদিন থেকে । হাত খোলসা ছিল না, নিজে করতে পারি নি । ভেবে রেখেছি, উপকরণও জমিয়েছি। ধীরে ধীরে । মাধব কবিরাজ বিক্রি করে জ্বরাশনি বটিকা, তার বারো-আনা কুইনীন । সেগুলো তার কাছ থেকে নিয়ে লেবেল বদলে নাম দেব ম্যালেরিয়ারি গুটিকা, কুইনীনের পিছনে অনেকখানি মিথ্যে কথা জুড়তে হবে। প্রতুল সেনকে লাগানো যাবে ক্যাম্বিসের ব্যাগ হাতে ঐ গুটিকা প্রচার করার কাজে । তোমার নিবারণ ফাস্ট ক্লাস এম. এসসি, লজ্জা ত্যাগ করে পড়ুক ভৈরবী কবচ নিয়ে, এই কবচে সপ্তধাতুর উপরে নবা রসায়নের আরো গোটাকতক নূতন ধাতুর নাম জড়িয়ে প্রাচীন ঋষিদের সঙ্গে আধুনিক বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব সম্মিলন সাধনা করা যেতে পারে। জগবন্ধু সংস্কৃত শ্লোকের উপর ব্যাকরণের ভেলকি লাগিয়ে উচ্চস্বরে প্রমাণ করতে থাকুক যে, চাণক্য জন্মেছিলেন বাংলাদেশে নেত্রকোণায়, আমারও জন্মস্থান ঐ সাবডিবিশনে । এই নিয়ে সাংঘাতিক কথা-কাটাকাটি চলুক সাহিতো, অবশেষে চাণক্য-জয়ন্তী করা যাবে আমারই প্রপিতামহের পোড়ো ভিটের পরে । তোমাদের ক্যাম্বেলি ডাক্তার তারিণী সাণ্ডেল মা শীতলার মন্দির নির্মাণের জন্যে চান্দা চেয়ে পাড়া অস্থির করে বেড়ােক । আসল কথা হচ্ছে, তোমার সাব-চেয়ে মাথা উচু গ্রেনেডিয়ার ছেলের দলকে কিছুদিন বাজে ব্যবসায়ে ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে- কেউ-বা ওদের বোকা বলুক, কেউ-বা বলুক ওরা চতুর বিষয়ী লোক ৷” ইন্দ্রনাথ হেসে বললে, “তোমার কথা শুনে আমার ইচ্ছে হচ্ছে একটা ব্যবসায়ে লাগি । আর-কিছুর জন্যে না, কেবল দেউলে হবার কার্যপ্রণালী এবং সাইকলজি অনুশীলন করবার জন্যে ।” কানাই বললে, “তুমি যে-ব্যবসায়ে লেগেছ ভায়া, সেটা আজ হােক বা কাল হােক নিশ্চিত দেউলে হবারই মুখে আছে। যারা দেউলে হয় তারা বােঝে না বলে হয় তা নয়, তারা লোকসানের রাস্তা কোনোমতে ছাড়তে পারে না বলেই হয়- দেউলে হওয়ার মরণটান একটা সারাইম আকর্ষণ । ও-বিষয়টা বর্তমানে আলোচনা করে ফল নেই ; একটা প্রশ্ন মনে আছে সেটা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে নিই | এলার মতো সুন্দরী সর্বদা দেখতে পাওয়া যায় না— এ-কথা মােন কি না ?” “মানি বৈকি ৷”