পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VO SR সে হেসে কয়, “ফুরিয়ে গেলে সভার পালা, ফুরিয়ে গেলে জয়ের মালা, তখন রানীর আসন পড়ে বকুল-বীথিকাতে, আমি একা বীণা বাজাই রাতে ।” শুধাই তারে, “কী পেলে তার কাছে।” সে কয় শুনে, “এই যে আমার বুকের মাঝে আলো করে আছে । কেউ দেখে নি রানীর কোলে পদ্মপাতার ডালা, তারি মধ্যে গোপন ছিল, জয়মালা নয়, এ যে বরণমালা ।” ভোলা হঠাৎ আমার হল মনে, শিবের জন্টার গঙ্গা যেন শুকিয়ে গেল অকারণে ; থামল তাহার হাস্য-উছল বাণী ; থামল তাহার নৃত্য-নূপুর ঝরঝরানি ; হাওয়ার সঙ্গে ঢেউয়ের দোলাদুলি স্তব্ধ হল এক নিমেষে। বিজু যখন চলে গেল মরণাপারের দেশে বাপের বাহুর বাধন কেটে । মনে হল, আমার ঘরের সকাল যেন মরেছে বুক ফেটে । ভোরবেলা তার বিষম গণ্ডগোলে ঘুম-ভাঙনের সাগরমাঝে আর কি তুফান তোলে । ছুটােছুটির উপদ্রবে: ব্যস্ত হত সবে, হা হা করে ছুটে আসত “আরে আরেকরিস কী তুই” বলে ; ভূমিকম্পে গৃহস্থলি উঠত যেন টলে । । আজ যত তার দসাপনা, যা-কিছু ইয়াক ডাক চাক-ভরা মৌমাছির মতো উড়ে গেছে। শূন্য করে চাক । আমার এ সংসারে অত্যাচারের সুধা-উৎস বন্ধ হয়ে গেল একেবারে ; তাই এ ঘরের প্রাণ লোটায় ত্ৰিয়মাণ জল-পালানো দিঘির পদ্ম যেন । খাট-পালঙ্ক শূন্যে চেয়ে শুধায় শুধু, “কেন, নাই সে কেন ।” মনে করত, শাসন বিনা বড়ো হলে ঘটাবে আপসোস ।