পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8O O রবীন্দ্র-রচনাবলী নিয়ে যে তুমি আপন কক্ষপথে । আজ যে-পথে এসে পড়েছি এ-পথ ক্ষুরধারার মতো সংকীর্ণ હીરlts দুজনে পাশাপাশি চলবার জায়গা নেই।” “দস্যু আমার, কেড়ে নিতে হবে না গো, নাও, এই নাও, এই নাও ” এই বলে দু-হাত বাড়িয়ে গেল অতীনের কাছে, চোখ বুজে তার বুকের উপর পড়ে তার মুখের দিকে মুখ তুলে ধরলে | জানালা থেকে এলা। রাস্তার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ বলে উঠল, “সর্বনাশ ! ঐ দেখতে পােচ্ছ ?” “কী বলে দেখি ?” “ঐ যে রাস্তার মোড়ে | নিশ্চয় বঢ়- এখানেই আসছে।” “আসবার যোগ্য জায়গা সে চেনে ৷” “ওকে দেখলে আমার সমস্ত শরীর সংকুচিত হয়ে ওঠে। ওর স্বভাবে অনেকখানি মাংস, অনেকখানি ক্লেদ ।। যত চেষ্টা করি পাশ কাটিয়ে চলতে, ওকে দূরে ঠেকিয়ে রাখতে, ততই ও কাছে এসে পড়ে। অশুচি, অশুচি ঐ মানুষটা ।” “আমি ওকে সহ্য করতে পারি। নে এলা ৷” “ওর সম্বন্ধে অন্যায় কল্পনা করছি বলে নিজেকে শান্ত করবার অনেক চেষ্টা করি।-- কোনোমতেই পারি নে। ওর ডাবা ডাবা চোখ দুটাে দূরের থেকে লালায়িত স্পর্শে যেন আমার অপমান করে।” “ওর প্রতি ভূক্ষেপ কোরো না এলা। মনে মনে ওর অস্তিত্বকে একেবারে উপেক্ষা করতে পার ?" “ওকে ভয় করি বলেই মন থেকে সরাতে পারি। নে । ওর একটা ভিতরকার চেহারা দেখতে পাই কুৎসিত অক্টোপাস জন্তুর মতো ! মনে হয়, ও আপনার অন্তর থেকে আটটা চটচটে পা বের করে আমাকে একদিন অসম্মানে ঘিরে ফেলবে-— কেবলই তারই চক্রান্ত করছে । একে তুমি আমার অবুঝ মেয়েলি আশঙ্কা বলে হেসে উড়িয়ে দিতে পাের, কিন্তু এই ভয়টা ভূতে পাওয়ার মতো আমার্কে পেয়েছে। শুধু আমার জন্যে নয়, তোমার জন্যে আমার আরো ভয় হয়, আমি জানি তোমার দিকে ওর ঈৰ্ষা সাপের ফণার মতো ফোস ফোস করছে ।” “এলা, ওর মতো জন্তুদের সাহস নেই, আছে দুৰ্গন্ধ, তাই কেউ ওদের ঘাটাতে চায় না ; কিন্তু আমাকে ও সর্বািন্তঃকরণে ভয় করে, আমি ভয়ংকর বলে যে তা নয়, আমি ওর থেকে সম্পণ স্বতন্ত্রজাতীয় বলে ।” “দেখো অস্তু, জীবনে অনেক দুঃখবিপদের সম্ভাবনা আমি ভেবেছি, তার জন্যে প্রস্তুতও আছি কিন্তু একদিন কোনো দুর্যোগে যেন ওর কবলে না পড়ি, তার চেয়ে মৃত্যু ভালো !” অস্তুর হাত চেপে ধরলে, যেন এখনই উদ্ধার করবার সময় হয়েছে । “জানো অস্তু, হিংস্র জন্তুর হাতে অপমৃত্যুর কল্পনা কখনো কখনো মনে আসে, তখন দেবতাকে জানাই, বাঘে খায় ভালুকে খায় সেও ভালো, কিন্তু আমাকে পাকের মধ্যে টেনে নিয়ে কুমিরে খাবে।-- এ যেন কিছুতে না ঘটে ।” “আমি কি বাঘভালুকের কোঠায় না কি ?” “ন গো, তুমি আমার নরসিংহ, তোমার হাতে মরণেই আমার মুক্তি | ঐ শোনো পায়ের শব্দ । উপরে উঠে এল বলে ।” অতীন্দ্র ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে জোর গলায় বললে, “বটু, এখানে নয়, চলে নীচে বসবার ঘরে ?” বাঁটু বললে, “এলাদি—” “এলাদি এখন কাপড় ছাড়তে গেলেন, চলে নীচে ।” “কাপড় ছাড়তে ? এত দেরিতে ? সাড়ে আটটা-” “হা হা, আমিই দেরি করিয়ে দিয়েছি।” “ কেবল একটা কথা । পাচ মিনিট ।” “তিনি স্নানের ঘরে গেছেন ৷ বলে গেছেন, এ ঘরে কেউ আসে তার ইচ্ছে নয় ।”