পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ᏔᏬᏨ রবীন্দ্র-রচনাবলী মুকুট প্রথম পরিচ্ছেদ ত্রিপুরার রাজা অমরমাণিক্যের কণিষ্ঠ পুত্র রাজধর সেনাপতি ইশা খাকে বলিলেন, “দেখো সেনাপতি, আমি বার বার বলিতেছি। তুমি আমাকে অসম্মান করিয়ো না ।” পাঠান ইশা খা, কতকগুলি তীরের ফলা লইয়া তাহদের ধার পরীক্ষা করিতেছিলেন । রাজধরের কথা শুনিয়া কিছুই বলিলেন না, কেবল মুখ তুলিয়া ভুরু উঠাইয়া একবার তাহার মুখের দিকে চাহিলেন । আবার তখনই মুখ নত করিয়া তীরের ফলার দিকে মনােযোগ দিলেন। রাজধর বলিলেন, “ভবিষ্যতে যদি তুমি আমার নাম ধরিয়া ডাক, তবে আমি তাহার সমুচিত প্ৰতিবিধান করিব।” বৃদ্ধ ইশা খাঁ সহসা মাথা তুলিয়া বজম্বরে বলিয়া উঠিলেন, “বটে !” রাজধর তাহার তলোয়ারের খাপের আগা মেঝের পাথরের উপরে ঠক করিয়া ঠকিয়া বলিলেন, " " ইশা খা বালক রাজধরের বুক-ফুলানো ভঙ্গি ও তলোয়ারের আস্ফালন দেখিয়া থাকিতে পারিলেন না- হা হা করিয়া হাসিয়া উঠিলেন । রাজধরের সমস্ত মুখ, চোখের সাদাটা পর্যন্ত লাল হইয়া উঠিল । বলিয়া ডাকিতে হইবে । হজুর, জনাব, জাহাপনা, শাহেন শা—” রাজধর তাহার স্বাভাবিক কৰ্কশ স্বর দ্বিগুণ কর্কশা করিয়া কহিলেন, “আমি তোমার ছাত্র বটে, কিন্তু ইশা খা তীব্ৰস্বরে কহিলেন, “বস। চুপ। আর অধিক কথা কহিয়ে না। আমার অন্য কাজ আছে।” বলিয়া পুনরায় তীরের ফলার প্রতি মন দিলেন । । এমন সময় ত্রিপুরার দ্বিতীয় রাজপুত্র ইন্দ্ৰকুমার তাহার দীর্ঘপ্রস্থ বিপুল বলিষ্ঠ দেহ লইয়া গৃহে প্রবেশ করিলেন । মাথা হেলাইয়া হাসিয়া বলিলেন, “খা সাহেব, আজিকার ব্যাপারটা কী ।” ইন্দ্ৰকুমারের কণ্ঠ শুনিয়া বৃদ্ধ ইশা খাঁ তীরের ফলা রাখিয়া সস্নেহে তাহাকে আলিঙ্গন করিলেন— হাসিতে হাসিতে বলিলেন- “শোনো তো বাবা, বড়ো তামাশার কথা ! তোমার এই কনিষ্ঠটিকে, মহারাজ চক্রবর্তীকে জাহাপনা জনাব বলিয়া না ডাকিলে উহার অপমান বোধ হয় ।” বলিয়া আবার তীরের ফলা লইয়া পড়িলেন । । রাজধর বিষম ক্ৰোধে বলিলেন, “চুপ করো দাদা ।” ইন্দ্ৰকুমার বলিলেন, “রাজধর, তোমাকে কী বলিয়া ডাকিতে হইবে । জাহাপনা । হা হা হা হা ।” রাজধর কঁাপিতে কঁাপিতে বলিলেন, “দাদা, চুপ করো বলিতেছি।” ইন্দ্ৰকুমার আবার হাসিয়া বলিলেন, “জনাব ।” রাজধর অধীর হইয়া বলিলেন, “দাদা, তুমি নিতান্ত নির্বোিধ ।” ইন্দ্ৰকুমার হাসিয়া রাজধরের পৃষ্ঠে হাত বুলাইয়া বলিলেন, “ঠাণ্ডা হও ভাই, ঠাণ্ডা হও । তোমার বুদ্ধি তোমার থাক। আমি তোমার বুদ্ধি কড়িয়া লইতেছি না।” ইশা খা কাজ করিতে করিতে আড়ােচাখে চাহিয়া ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন, “উহার বুদ্ধি সম্প্রতি ইন্দ্ৰকুমার বলিলেন, “নাগাল পাওয়া যায় না ।” কািরগঙ্গাস দিয়া চলিয়া গেলেন। চলনের দাসে ঋণের মধ্যে তলােয়ারথন করেন করতে १ळ् |