পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪৩২ ৷ রবীন্দ্র-রচনাবলী তৃতীয় পরিচ্ছেদ ইন্দ্ৰকুমার ধনুর্বিদ্যায় অসাধারণ ছিলেন। শুনা যায় একবার তাহার এক অনুচর প্রাসাদের ছাদের উপর হইতে একটা মোহর নীচে ফেলিয়া দেয়, সেই মোহর মাটিতে পড়িতে না পড়িতে তীর মারিয়া কুমার তাহাকে শত হাত দূরে ফেলিয়াছিলেন। রাজধর রাগের মাথায় পিতার সম্মুখে দম্ভ করিয়া আসিলেন বটে, কিন্তু মনের ভিতরে বড়ো ভাবনা পড়িয়া গেল। যুবরাজ চন্দ্রনারায়ণের জন্য বড়ো ভাবনা নাই- তীর-ছোড়া বিদ্যা তাহার ভালো আসিত না, কিন্তু ইন্দ্ৰকুমারের সঙ্গে আঁটিয়া উঠা দায়। রাজধর অনেক ভাবিয়া অবশেষে একটা ফন্দি ঠাওরাইলেন । হাসিয়া মনে মনে বলিলেন, ‘তীর ছড়িতে পারি না-পারি, আমার বুদ্ধি তীরের মতো- তাহাতে সকল লক্ষ্যই ভেদ হয়।” কাল পরীক্ষার দিন। যে-জায়গাতে পরীক্ষা হইবে, যুবরাজ, ইশা খা ও ইন্দ্ৰকুমার সেই জমি তদারক করিতে গিয়াছেন। রাজধর আসিয়া বলিলেন, “দাদা, আজ পূর্ণিমা আছে— আজ রাত্রে যখন বাঘ গোমতী নদীতে জল খাইতে আসিবে, তখন নদীতীরে বাঘ শিকার করিতে গেলে হয় না ?” ইন্দ্ৰকুমার আশ্চর্য হইয়া বলিলেন, “কী আশ্চর্য। রাজধরের যে আজ শিকারে প্রবৃত্তি হইল ? এমন তো কখনো দেখা যায় না ।” ইশা খাঁ রাজধরের প্রতি ঘূণার কটাক্ষ নিক্ষেপ করিয়া কহিলেন, “উনি আবার শিকারি নন, উনি জাল পাতিয়া ঘরের মধ্যে শিকার করেন। উহার বড়ো ভয়ানক শিকার । রাজসভায় একুটি জীব নাই যে উহার ফদে একবার-না-একবার না পডিয়াছে।” চন্দ্রনারায়ণ দেখিলেন কথাটা রাজধরের মনে লাগিয়াছে— ব্যথিত হইয়া বলিলেন, “সেনাপতি সাহেব, তােমার তলোয়ারও। যেমন তােমার কথাও তেমনি, উভয়ই শাণিত— যাহার উপরে গিয়া রাজধর হাসিয়া বলিলেন, “না দাদা, আমার জন্য বেশি ভাবিয়ো না । খ্যা সাহেব অনেক শান দিয়া কথা কহেন বটে, কিন্তু আমার কানের মধ্যে পালকের মতো প্ৰবেশ করে ।” ইশা খা হঠাৎ চটিয়া উঠিয়া পাকা গোফে চাড়া দিয়া বলিলেন, “তোমার কান আছে নাকি । তা যদি বহিঃস্থলে এতদিন তােমাক সিদ্ধ করতে পারতাম "বুদ্ধইশ থাকাহাকেও বড়ো মন (७० कीं । ইন্দ্ৰকুমার হাে হাে করিয়া হাসিয়া উঠিলেন। চন্দ্রনারায়ণ গভীর হইয়া রহিলেন, কিছু বলিলেন না। যুবরাজ বিরক্ত হইয়াছেন বুঝিয়া ইন্দ্ৰকুমার তৎক্ষণাৎ হাসি থামাইয়া তাহার কাছে গেলেন— মৃদুভাবে বলিলেন, “দাদা, তোমার কী মত। আজ রাত্রে শিকার করিতে যাইবে কি ৷” চন্দ্রনারায়ণ কহিলেন, “তোমার সঙ্গে ভাই শিকার করিতে যাওয়া মিথ্যা, তাহা হইলে নিতান্ত নিরামিষ শিকার করিতে হয় ! তুমি বনে গিয়া যত জন্তু মারিয়া আন, আর আমরা কেবল লাউ কুমড়া কচু কঁঠাল শিকার করিয়া আনি ৷” ইশা খা পরম হৃষ্ট হইয়া হাসিতে লাগিলেন-- সস্নেহে ইন্দ্ৰকুমারের পিঠ চাপড়াইয়া বলিলেন, “যুবরাজ ঠিক কথা বলিতেছেন পুত্ৰ। তোমার তীর সকলের আগে গিয়া ছোটে এবং নির্ঘাত গিয়া লাগে । তোমার সঙ্গে কে পারিয়া উঠিবে।” মুকুত বললেন, ন ন গল্প, ঠাট্ট নয়—বইতে হবে। তুমি ন গেলে কি শিকার করতে N. " সুকুমাৰ চৰ্বিতের মধ্যে মন হয় বললেন,"ঙ্কেনপাদ, আমার ইচ্ছ। ইয়াহে বলিয়ার্ক চন্দ্রনারায়ণ বলিলেন, “সে কী কথা ভাই, তোমার সঙ্গে তো রোজই শিকারে যাইতেছি।-"