পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

《の○ রবীন্দ্র-রচনাবলী মানুষের জীবনের সর্বপ্রথম কাজ। এই সাধনায় যখন সিদ্ধ হইব, তখন জলে স্থলে আকাশে সেই শান্তস্বরূপকে দেখিব, যিনি জগতের অসংখ্য শক্তিকে নিয়মিত করিয়া অনাদি অনন্তকাল স্থির হইয়া আছেন । এইজন্য আমাদের জীবনের প্রথম আশ্রম ব্ৰহ্মচৰ্য- শক্তির মধ্যে শান্তিলাভের সাধনা | পরে শিবম | সংযমের দ্বারা শক্তিকে আয়ত্ত করিতে পারিলেই তবে কর্মকরা সহজ হয়। এইরূপে কর্ম যখন আরম্ভ করি, তখন নানা লোকের সঙ্গে নানা সম্বন্ধে জড়াইয়া পড়িতে হয় | এই আত্মপরের সংস্রবেই। যত ভালোমন্দ যত পাপপুণা যত আঘাত প্ৰতিঘাত । শান্তি যেমন শক্তিকে যথোচিতভাবে সংবরণ করিয়া তাহদের বিরোধভঞ্জন করিয়া দেয়, তেমনি সংসারে আত্মপরের শতসহস্র সম্বন্ধের অপরিসীম জটিলতার মধ্যে কে সামঞ্জস্য স্থাপন করে ? মঙ্গল। শান্তি না থাকিলে জগৎপ্রকৃতির প্ৰলয়, মঙ্গল না থাকিলে মানবসমাজের ধ্বংস। শান্তকে শক্তিসংকুল জগতে উপলব্ধি করিতে হইবে, শিবকে সম্বন্ধসংকুল সংসারে উপলব্ধি করিতে হইবে । তাহার শান্তস্বরূপকে জ্ঞানের দ্বারা ও তাহার শিবস্বরূপকে শুভকর্মের দ্বারা মনে ধারণা করিতে হইবে । আমাদের শাস্ত্ৰে বিধান আছে, প্রথমে ব্ৰহ্মচর্য, পরে গাৰ্হস্থ্য- প্ৰথমে শিক্ষার দ্বারা প্ৰস্তুত হওয়া, পরে কর্মের দ্বারা পরিপক্ক হওয়া | প্ৰথমে শান্তং, পরে শিবম | তার পরে অদ্বৈতম। এইখনেই সমাপ্তি। শিক্ষাতেও সমাপ্তি নয়, কর্মেও সমাপ্তি নয়। কেনই বা শিখিব, কেনই বা খাটিব ? একটা কোথাও তো তাহার পরিণাম আছে। সেই পরিণাম অদ্বৈতম | তাহাই নিরবচ্ছিন্ন প্ৰেম, তাহাই নির্বিকার আনন্দ । মঙ্গলকার্মের সাধনায় যখন কর্মের বন্ধন ক্ষয় হইয়া যায়, অহংকারের তীব্রতা নষ্ট হইয়া আসে, যখন আত্মপরের সমস্ত সম্বন্ধের বিরোধ ঘুচিয়া যায়, তখনই নম্রতাদ্বারা ক্ষমার দ্বারা করুণার দ্বারা প্রেমের পথ প্রস্তুত হইয়া আসে। তখন অদ্বৈতম। তখন সমস্ত সাধনার সিদ্ধি, সমস্ত কর্মের অবসান ! তখন মানবজীবন তাহার প্রারম্ভ হইতে পরিণাম পর্যন্ত পরিপূর্ণ ; কোথাও সে আর অসংগত অসমাপ্ত অর্থহীন নহে । হে পরমাত্মন, মানবজীবনের সকল প্রার্থনার অভ্যন্তরে একটিমাত্র গভীরতম প্রার্থনা আছে, তাহা আমরা বুদ্ধিতে জানি বা না জানি, তাহা আমরা মুখে বলি বা না বলি, আমাদের ভ্রমের মধ্যেও আমাদের দুঃখের মধ্যেও আমাদের অন্তরাত্মা হইতে সে প্রার্থনা সর্বদাই তোমার অভিমুখে পথ খুঁজিয়া চলিতেছে । সে প্রার্থনা এই যে, আমাদের সমস্ত জ্ঞানের দ্বারা যেন শাস্তকে জানিতে পারি, আমাদের সমস্ত কর্মের দ্বারা যেন শিবকে দেখিতে পাই, আমাদের সমস্ত প্রেমের দ্বারা যেন অদ্বৈতাকে উপলব্ধি করি | ফললাভের প্রত্যাশা সাহস করিয়া তোমাকে জানাইতে পারি না, কিন্তু আমার আকাঙক্ষা এইমাত্র যে, সমস্ত বিত্ম-বিক্ষেপ-বিকৃতির মধ্যেও এই প্রার্থনা যেন সমস্ত শক্তির সহিত সত্যভাবে তোমার নিকট উপস্থিত করিতে পারি। অন্য সমস্ত বাসনাকে ব্যর্থ করিয়া, হে অন্তর্যামিন, আমার এই প্রার্থনাকেই গ্রহণ করো যে, আমি কদাপি যেন জ্ঞানে কর্মে প্রেমে উপলব্ধি করিতে পারি যে, তুমি শান্তং শিবম অদ্বৈতম | ॐ आठि8 भाgि2 भाटि8 S S ) মানুষকে দুই কুল বঁচাইয়া চলিতে হয় ; তাহার নিজের স্বাতন্ত্রা এবং সকলের সঙ্গে মিল- দুই বিপরীত কল । দুটির মধ্যে একটিকেও বাদ দিলে আমাদের মঙ্গল নাই । - স্বাতন্ত্রা জিনিসটা যে মানুষের পক্ষে বহুমূলা, তাহা মানুষের ব্যবহারেই বুঝা যায়। ধন দিয়া প্ৰাণ দিয়া নিজের স্বাতন্ত্র্যাকে বজায় রাখিবার জন্য মানুষ কী না লড়াই করিয়া থাকে। নিজের বিশেষত্বকে সম্পূৰ্ণ করিবার জন্য সে কোথাও কোনো বাধা মানিতে চায় না। ইহাতে