পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন (ሎ\©እs আসবে- সে যে-কোনো বেশেই আসুক তার মুখের দিকে চেয়ে যেন বলতে পারি ; তোমাকে চিনেছি, বন্ধু, তোমাকে চিনেছি। لا (ه لا {6}{5} oن প্রার্থনা উপনিষৎ ভারতবর্ষের ব্ৰহ্মজ্ঞানের বনস্পতি । এ যে কেবল সুন্দর শ্যামল ছায়াময়, তা নয়, এ বৃহৎ এবং এ কঠিন । এর মধ্যে যে কেবল সিদ্ধির প্রাচুর্য পল্লবিত, তা নয় ; এতে তপস্যার কঠোরতা উর্ধর্বগামী হয়ে রয়েছে। সেই অভ্ৰভেদী সুদৃঢ় অটলতার মধ্যে একটি মধুর ফুল ফুটে আছে—তার গন্ধে আমাদের ব্যাকুল করে তুলেছে । সেটি ঐ মৈত্রেয়ীর প্রার্থনা-মন্ত্রটি । যাজ্ঞবল্ক্য যখন গৃহত্যাগ করবার সময় তীর পত্নী দুটিকে তার সমস্ত সম্পত্তি দান করে যেতে উদ্যত হলেন তখন মৈত্ৰেয়ী জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছ বলো তো এ-সব নিয়ে কি আমি অমর হব ? যাজ্ঞবল্ক্য বললেন, না, তা হবে না, তবে কিনা উপকরণবান্তের যেমনতরো জীবন তোমার জীবন সেইরকম হবে । সংসারীরা যেমন করে তাদের ঘরদুয়ার গোরুবাছুর অশনিবাসন নিয়ে স্বচ্ছন্দে দিন কাটায় তোমরাও তেমনি করে দিন কাটাতে পারবে । মৈত্ৰেয়ী তখন এক মুহুর্তে বলে উঠলেন, “ যেনাহং নামৃত স্যাম কিমহং তেন। কুর্যাম।” যার দ্বারা আমি অমৃত না হব তা নিয়ে আমি কী করব । এ তো কঠোর জ্ঞানের কথা নয়— তিনি তো চিন্তার দ্বারা ধ্যানের দ্বারা কোনটা নিত্য কোনটা অনিত্য তার বিবেকলাভ করে এ কথা বলেন নি— তার মনের মধ্যে একটি কষ্টিপাথর ছিল যার উপরে সংসারের সমস্ত উপকরণকে একবার ঘষে নিয়েই তিনি বলে উঠলেন, “আমি যা চাই এ তো তা নয়।” উপনিষদে সমস্ত পুরুষঋষিদের জ্ঞানগম্ভীর বাণীর মধ্যে একটিমাত্র স্ত্রীকণ্ঠের এই একটিমাত্র ব্যাকুল বাক্য ধ্বনিত হয়ে উঠেছে এবং সে ধ্বনি বিলীন হয়ে যায় নি- সেই ধ্বনি তাদের মেঘমন্দ্ৰ শাস্তস্বরের মাঝখানে অপূর্ব একটি অশ্রুপূৰ্ণ মাধুর্য জাগ্রত করে রেখেছে। মানুষের মধ্যে যে পুরুষ আছে, উপনিষদে নানা দিকে নানা ভাবে আমরা তারই সাক্ষাৎ পেয়েছিলুম ; এমন সময়ে হঠাৎ এক প্রান্তে দেখা গেল মানুষের মধ্যে যে নারী রয়েছেন তিনিও সৌন্দর্য বিকীর্ণ করে দাড়িয়ে রয়েছেন। আমাদের অন্তর-প্রকৃতির মধ্যে একটি নারী রয়েছেন। আমরা তার কাছে আমাদের সমুদয় সঞ্চয় এনে দিই, আমরা ধন এনে বলি, এই নাও । খ্যাতি এনে বলি, এই তুমি জমিয়ে রাখো । আমাদের পুরুষ সমস্ত জীবন প্রাণপণ পরিশ্রম করে কত দিক থেকে কত কী যে আনছে তার ঠিক নেই— স্ত্রটিকে বলছে, এই নিয়ে তুমি ঘর ফাঁদো, বেশ গুছিয়ে ঘরকন্না করো, এই নিয়ে তুমি সুখে থাকো । আমাদের অন্তরের তপস্বিনী এখনো স্পষ্ট করে বলতে পারছে না যে, এ সবে আমার কোনো ফল হবে নী, সে মনে করছে হয়তো আমি যা চাচ্ছি তা বুঝি এইই । কিন্তু তবু সব নিয়েও সব পেলুম বলে তার মন মানছে না । সে ভাবছে হয়তো পাওয়ার পরিমাণটা আরো বাড়াতে হবে- টাকা আরো চাই, খ্যাতি আরো দরকার, ক্ষমতা আরো না হলে চলছে না । কিন্তু সেই আরো-র শেষ হয় না । বস্তুত সে যে অমৃতই চায় এবং এই উপকরণগুলো যে অমৃত নয় এটা একদিন তাকে বুঝতেই হবে- একদিন এক মুহূর্তে সমস্ত জীবনের স্তুপাকার সঞ্চয়কে এক পাশে আবৰ্জনার মতাে ঠেলে দিয়ে তাকে বলে উঠতেই হবে—যেনাহং নামৃত স্যাম কিমহং তেন। কুর্যম! কিন্তু মৈত্রেয়ী ঐ যে বলেছিলেন, আমি যাতে অমৃতা না হব তা নিয়ে আমি কী করব, তার মানেটা কী ৷ অমর হওয়ার মানে কি এই পার্থিব শরীরটাকে অনন্তকাল বহন করে চলা । অথবা মৃত্যুর পরেও কোনোরূপে জন্মান্তরে বা অবস্থান্তরে টিকে থাকা ? মৈত্ৰেয়ী যে শরীরের অমরত চান নি এবং আত্মার CR ||\co) (6