পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পলাতকা চলছে বয়ে চতুদিকে । নয় তো কেবল কালের যোগে আয়ু, নয় সে কেবল দিনব্বজনীর সাতানলি হার, নয় সে নিশাস-বায়ু । নানান প্রাণের গ্ৰীতির মিলন নিবিড় হয়ে স্বজন-বন্ধুজনে পরমায়ুর পাত্ৰখানি জীবন-সুধায় ভরছে ক্ষণে ক্ষণে । একের বঁাচন সবার বঁাচার বন্যাবেগে আপন সীমা হারায় বহু দূরে ; নিমেষগুলির ফলের গুচ্ছ ভরে রসের ধারায় । অতীত হয়ে তবুও তারা বর্তমানের বৃন্তদোলায় দোলে— গৰ্ভ-বাধন কাটিয়ে শিশু তবু যেমন মায়ের বক্ষে কোলে । বন্দী থাকে নিবিড় প্রেমের গ্রন্থি দিয়ে। তাই তো যখন শেষে একে একে আপনি জনে সূৰ্য-আলোর অন্তরালের দেশে । আঁখির নাগাল এড়িয়ে পালায়, তখন রিক্ত শুষ্ক জীবন মম। শীর্ণ রেখায় মিলিয়ে আসে। বর্ষশেষের নিবরিণী-সম শূন্য বালুর একটি প্রান্তে ক্লান্ত সলিল স্রস্ত অবহেলায়। তাই যারা আজ রইল পাশে এই জীবনের সূর্য-ডোবার বেলায় তাদের হাতে হাত দিয়ে তুই গান গেয়ে নে থাকতে দিনের আলো— বলে নে ভাই, এই যে দেখা এই যে ছোওয়া, এই ভালো এই ভালো । এই ভালো আজ এ সংগমে কান্নাহাসির গঙ্গাযমুনায় ঢেউ খেয়েছি, ডুব দিয়েছি, ঘট ভরেছি, নিয়েছি বিদায় । এই ভালো রে ফুলের সঙ্গে আলোয় জােগা, গান গাওয়া এই ভাষায় ; তারার সাথে নিশীথ-রাতে ঘুমিয়ে পড়া নূতন প্ৰাণের আশায় । শেষ প্রতিষ্ঠা এই কথা সদা শুনি, “গেছে চলো”, “গেছে চলে ।” তবু রাখি ব’লে বোলো না, “সে নাই ।” সে-কথাটা মিথ্যা, তাই মানুষের কাছে যাওয়া-আসা ভাগ হয়ে আছে । তাই তার ভাষা বহে শুধু আধখানা আশা । আমি চাই সেইখানে মিলাইতে প্ৰাণ যে-সমুদ্রে ‘আছে। ‘নাই পূর্ণ হয়ে রয়েছে সমান। 8ዓ