পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( 6 Ο রবীন্দ্র-রচনাবলী প্ৰাতে সংসারের মধ্যেই জেগেছি এবং প্রতিদিন রাত্রে সংসারের কোলেই শুয়েছি । ৩৬৪ দিন পরে আজ আমরা আশ্রমবাসিগণ এই আশ্রমকে দেখতে এসেছি। যখন সূর্য পূর্বগগনকে আলো করে ছিল তখন দেখতে পাই নি— যখন আকাশ ভরে তারার দীপমালা জ্বলেছিল তখনো দেখতে পাই নি— আজ আমাদের এই কটা তেলের আলো, বাতির আলো জ্বলিয়ে একে দেখব । তা হােক, তাতে অপরাধ নেই। মহেশ্বরের মহােৎসবের সঙ্গে যোগ দিতে গেলে আমাদেরও যেটুকু আলোর সম্বল আছে তাও বের করতে হয়। শুধু তার আলোতেই তাকে দেখব, এ যদি হত তা হলে সহজেই চুকে যেত— কিন্তু এইটুকু কড়ার তিনি আমাদের দিয়ে করিয়ে নিয়েছেন যে, আমাদের আলোটুকুও জ্বালতে হবে- নইলে দর্শন হবে না, মিলন ঘটবে না- আমাদের যে অহংকারটি দিয়ে রেখেছেন সে এরই জন্যে | অহংকারের আগুন জ্বেলে আমরা মহােৎসবের মশাল তৈরি করব । তাই চিরজাগ্ৰত আনন্দকে দেখবার জন্যে আমার নিজের এইটুকু আনন্দকেও জাগিয়ে তুলতে হয়, সেই চিরপ্রকাশিত জ্ঞানকেও জানিবার জন্যে আমার জ্ঞানটুকুর ক্ষুদ্র পলতেটিকে উসকে দিতে হয়— আব র্যার প্ৰেম আপনি প্রবাহিত হয়ে ছাপিয়ে পড়ছে তাব সেই অফুরান প্রেমকেও আমরা উপলব্ধি করতে পারি। নে যদি ছোটাে জুইফুলটির মতো আমাদের এই এতটুকু প্রেমকে না ফুটিয়ে তুলতে পারি। এইজন্যেই বিশ্বেশ্বরের জগদব্যাপী মহােৎসবেও আমরা ঠিকমত যোগ দিতে পারি না। যদি আমরা নিজের ক্ষুদ্র আয়োজনটুকু নিয়ে উৎসব না করি। আমাদের অহংকার আজ তাই আকাশপরিপূর্ণ জ্যোতিষ্কমণ্ডলীর চোখের সামনে নিজের এই দরিদ্র আলো কয়টা নির্লজ্জভাবে জ্বলিয়েছে। আমাদের অভিমান এই যে, আমরা নিজের আলো দিয়েই তাকে দেখব। আমাদের এই অভিমানে মহাদেব খুশি, তিনি হাসছেন। আমাদের এই প্ৰদীপ কটা জ্বালা দেখে সেই কোটি সূর্যের অধিপতি আনন্দিত হয়েছেন । এই তো তাঁর প্রসন্ন মুখ দেখবার শুভ অবসর । এই সুযোগটিতে আমাদের সমস্ত চেতনাকে জাগিয়ে তুলতে হবে । এই চেতনা আমাদের সমস্ত শরীরে জেগে উঠে রোমে রোমে পুলকিত হােক, এই চেতনা দিবালোকের তরঙ্গে তরঙ্গে স্পন্দিত হােক, নিশীথরাত্রির অন্ধকারের মধ্যে পরিব্যাপ্ত হােক, আজ সে যেন ঘরের কোণে ঘরের চিন্তায় বিক্ষিপ্ত না হয়, নিখিলের পক্ষে যেন মিথ্যা হয়ে না থাকেআজ সে কোনোখানে সংকুচিত হয়ে বঞ্চিত না হয় । অনন্ত সভার সমস্ত আয়োজন, সমস্ত দর্শন স্পৰ্শন মিলন কেবল এই চৈতন্যের উদবোধনের অপেক্ষায় আছে- এইজন্যে আলো জ্বলছে, বশি বাজছে- দূতগুলি চতুর্দিক থেকেই দ্বারে এসে দাঁড়িয়েছে- সমস্তই প্ৰস্তুত, ওরে চেতনা, তুই কোথায় । ওরে উত্তিষ্ঠত জাগ্ৰত । ৭ পৌষ দীক্ষা একদিন যার চেতনা বিলাসের আরামশয্যা থেকে হঠাৎ জেগে উঠেছিল— এই ৭ই পীেষ দিনটি সেই দেবেন্দ্রনাথের দিন । এই দিনটিকে তিনি আমাদের জন্যে দান করে গিয়েছেন । রতু যেমন করে দান করতে হয় তেমনি করে দান করেছেন । ঐ দিনটিকে এই আশ্রমের কীেটােটির মধ্যে স্থাপন করে দিয়ে গেছেন । আজ কীেটাে উদঘাটন করে রত্নটিকে এই প্রান্তরের আকাশের মধ্যে তুলে ধরে দেখব।-- এখানকার ধুলিবিহীন নির্মল নিভৃত আকাশতলে যে নক্ষত্রমণ্ডলী দীপ্তি পাচ্ছে সেই তারাগুলির মাঝখানে তাকে তুলে ধরে দেখব । সেই সাধকের জীবনের ৭ই পৌষকে আজ উদঘাটন করার দিন, সেই নিয়ে আমরা আজ উৎসব করি । এই ৭ই পৌষের দিনে সেই ভক্ত তার দীক্ষাগ্ৰহণ করেছিলেন ; সেই দীক্ষার যে কতবড়ো অর্থ