পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন \ኃ(፩ (፩ অবশেষে প্ৰাণের প্রাণে গিয়ে যখন পৌঁছেলেন তখন এই শরীরের মধ্যে একটা ‘ই’ পেলেন । কারণ এই প্ৰাণই শরীরের সব প্রাণকে অধিকার করে আছে। এই প্ৰাণের মধ্যেই সকল ইন্দ্ৰিয়ের সকল শক্তির ঐক্য। এই মহাপ্ৰাণ যতক্ষণ আছে ততক্ষণই চোেখও দেখছে, কানও শুনছে, নাসিকাও ঘ্ৰাণ করছে। এর মধ্যে যে কেবল একটা ‘হী এবং অন্যটা 'না' হয়ে আছে তা নয়, এর মধ্যে দৃষ্টি শ্রুতি আঘাণ সকলগুলিই এক জায়গায় 'ই' হয়ে আছে। অতএব শরীরের মধ্যে এইখানেই আমরা পেলুম š । वाञ ऊठाञ्जलि ऊ6 ऎऴल्ल । ছান্দােগ্য বলছেন মিথুনের মাঝখানে, অর্থাৎ দুই যেখানে মিলেছে সেইখানেই, এই ওঁ । যেখানে এক দিকে ঋক এক দিকে সাম, এক দিকে বাক্য এক দিকে সুর, এক দিকে সত্য এক দিকে প্রাণ ঐক্য লাভ করেছে, সেইখানেই এই পরিপূর্ণতার সংগীত ওঁ । যার মধ্যে কিছুই বাদ পড়ে নি, যার মধ্যে সমস্ত খণ্ডই অখণ্ড হয়েছে, সমস্ত বিরোধ মিলিত হয়েছে, আমাদের আত্মা তাকেই অঞ্জলি জোড় করে হা বলে স্বীকার করে নিতে চায়। তার পূর্বে সে নিজের পরম পরিতৃপ্তি স্বীকার করতে পারে না ; তাকে ঠেকতে হয়, তাকে ঠকতে হয় ; মনে করে ইন্দ্ৰিয়েই হী, ধনেই হী, মানেই হাঁ। শেষকালে দেখে, এর সব-তাতেই পাপ আছে, দ্বন্দ্ব আছে, ‘না তার সঙ্গে মিশিয়ে আছে । সকল দ্বন্দ্বের সমাধানের মধ্যে উপনিষৎ সেই পরম পরিপূর্ণকে দেখেছেন বলেই সত্যের এক দিকেই সমস্ত ঝোকটা দিয়ে তার অন্য দিকটাকে একেবারে নির্মূল করে দিতে চেষ্টা করেন নি। এতজজ্ঞেয় নিতামেবাত্মসংস্থং নাতিঃপরং বেদিতব্যং হি কিঞ্চিৎ ৷ অর্থাৎ আত্মাতেই যিনি নিত্য স্থিতি করছেন তিনিই জািনবার যোগ্য, তার পর জািনবার যোগ্য আর কিছুই নেই। তেমনি আবার বলেছেন তে সর্বগং সর্বতঃ প্রাপ্য ধীরা যুক্তাত্মনঃ সর্বমেবাবিশন্তি । অর্থাৎ— সেই ধীরেরা যুক্তাত্মা হয়ে সর্বব্যাপীকে সকল দিক হতেই লাভ করে সর্বত্রই প্রবেশ করেন। ‘আত্মন্যেবাত্মানং পশ্যতি' নয়, কেবল আত্মার মধ্যেই আত্মকে দেখা নয়, সেই দেখাই আবার সর্বত্রই | আমাদের ধ্যানের মন্ত্রে এক সীমায় রয়েছে ভূর্তৃবঃম্বঃ, অন্য সীমায় রয়েছে আমাদের ধী আমাদের চেতনা । মাঝখানে এই দুইকেই একে বেঁধে সেই বরণীয় দেবতা আছেন যিনি এক দিকে ভুর্ভুবঃস্বঃকেও সৃষ্টি করছেন আর-এক দিকে আমাদের ধীশক্তিকেও প্রেরণ করছেন । কোনোটাকেই বাদ দিয়ে তিনি নেই। এইজন্যই তিনি ওঁ । এইজন্যেই উপনিষৎ বলেছেন যারা অবিদ্যাকেই, সংসারকেই একমাত্র করে জানে তারা অন্ধকারে পড়ে— আবার যারা বিদ্যাকে, ব্ৰহ্মজ্ঞানকে, ঐকান্তিক করে বিচ্ছিন্ন করে জানে তারা গভীরতর অন্ধকারে পড়ে। এক দিকে বিদ্যা আর-এক দিকে অবিদ্যা, এক দিকে ব্ৰহ্মজ্ঞান এবং আর-এক দিকে সংসার। এই দুইয়ের যেখানে সমাধান হয়েছে সেইখানেই আমাদের আত্মার স্থিতি ।