পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন Գ OS ভাষায় এ বাণীটি প্রথম ব্যক্ত হয়েছিল সে ভাষা আজ প্রচলিত নেই, কিন্তু এই বাক্যটি আজও বিশ্বাসে ভক্তিতে নির্ভরে ব্যগ্রতায় এবং বিনতিতে পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে। এই কটি মাত্র কথায় মানবের চিরদিনের আশা এবং আশ্বাস এবং প্রার্থনা ঘনীভূত হয়ে রয়ে গেছে। সত্যং জ্ঞানমনন্তং ব্ৰহ্ম, এই অত্যন্ত ছােটাে অথচ অত্যন্ত বড়ো কথাটি কােন সুদূর কালের ! আধুনিক যুগের সভ্যতা তখন বর্বরতার গর্ভের মধ্যে গুপ্ত ছিল, সে ভূমিষ্ঠও হয় নি। কিন্তু অন্তরের উপলব্ধি আজও এই বাণীকে নিঃশেষ করতে পারে নি। ওঠে না। অথচ এই পুরাতন প্রার্থনাটির মধ্যে মানবাত্মার সমস্ত প্রার্থনা পর্যাপ্ত হয়ে রয়েছে। এক দিকে এই পুরাতন আকাশ পুরাতন আলোক এবং তরুলতার মধ্যে পুরাতন জীবনবিকাশের নিত্যনূতনতা, আর-এক দিকে মানবচিত্তের মৃত্যুহীন পুরাতন বাণী— এই দুইকে এক করে নিয়ে এই শান্তিনিকেতনের আশ্ৰম । ፪• বিশ্বপ্রকৃতি এবং মানবচিত্ত, এই দুইকে এক করে মিলিয়ে আছেন যিনি তাকে এই দুয়েরই মধ্যে একরূপে জািনবার যে ধানমন্ত্র, সেই মন্ত্রটিকেই ভারতবর্ষ তার সমস্ত পবিত্র শাস্ত্রের সার মন্ত্র বলে বরণ করেছে। সেই মন্ত্রটিই গায়ত্রী- ওঁ ভুর্ভূবঃ স্বঃ তৎসবিতুৰ্বরেণ্যং ভর্গোদেবস্য ধীমহি, ধিয়ােয়েনঃ scale এক দিকে ভূলোক অন্তরীক্ষা, জ্যোতিষ্কলোক, আর-এক দিকে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তি, আমাদের চেতনা- এই দুইকেই যার এক শান্তি বিকীর্ণ করছে, এই দুইকেই ধার এক আনন্দ যুক্ত করছে— সুকুই শক্তিকে বিশ্বের মধ্যে এবং আপনার বৃদ্ধির মধ্যে থানকার উপলব্ধি করবার ঘা হচ্ছে এই গায়ত্রী । র্যারা মহৰ্ষির আত্মজীবনী পড়েছেন তারা সকলেই জানেন তিনি তার দীক্ষার দিনে এই গায়গ্ৰীমন্ত্রকেই বিশেষ করে তার উপাসনার মন্ত্ররূপে গ্ৰহণ করেছিলেন। তার এই দীক্ষার মন্ত্রটিই শান্তিনিকেতনের আশ্রমকে আকার দান করছে— এই নিভৃতে মানুষের চিত্তকে প্রকৃতির প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত করে, বরেণ্যং ভৰ্গঃ সেই বরণীয় তেজকে ধ্যানগম্য করে তুলছে। ” এই গায়ত্রীমন্ত্রটি আমাদের দেশের অনেকেরই জপের মন্ত্র- কিন্তু এই মন্ত্রটি মহৰ্ষির ছিল জীবনের মন্ত্র | এই মন্ত্রটিকে তিনি তঁর জীবনের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এবং তার সমস্ত জীবনের ভিতর থেকে প্রকাশ করেছিলেন । এই মন্ত্রটিকে তিনি যে গ্ৰহণ করেছিলেন এবং রক্ষা করেছিলেন, লোকাচারের অনুসরণ তার কারণ নয় । হাস যেমন স্বভাবতই জলকে আশ্রয় করে তিনি তেমনি স্বভাবতই এই মন্ত্রটিকে অবলম্বন করেছিলেন । II. d শিশু যেমন মাতৃস্তনের জন্য কেঁদে ওঠে, তখন তাকে আর কিছু দিয়েই থামিয়ে রাখা যায় না, তেমনি মহৰ্ষির হৃদয় একদিন তীর যৌবনারম্ভে কী অসহ্য ব্যাকুলতায় ক্ৰন্দন করে উঠেছিল সে কথা আপনারা সকলেই জানেন । সে ক্ৰন্দন কিসের ? চার দিকে তিনি কোন জিনিসটি কোনোমতেই খুঁজে পৃচ্ছিলেন না ? যখন আকাশের আলো তীর চােখে কালো হয়ে উঠেছিল, যখন তঁর পিতৃগৃহের অতুল ঐশ্বর্যের আয়োজন এবং মানসম্রামের গৌরব তার মনকে কোনোমতেই শান্তি দিচ্ছিল না, তখন তার যে কী প্রয়োজন, কী হলে তার হৃদয়ের ক্ষুধা মেটে, তা তিনি নিজেই বুঝতে পারছিলেন না। : ভোগবিলাসে র্তার অরুচি জন্মে গিয়েছিল এবং তঁর ভক্তিবৃত্তি নিজের চরিতার্থতা অন্বেষণ করছিল, কেবল এই কথাটুকুই সম্পূর্ণ সত্য নয়। কারণ, ভক্তিবৃত্তিকে ভুলিয়ে রাখবার আয়োজন কি তঁর ঘরের মধ্যেই ছিল না ? যে দিদিমার সঙ্গে তিনি ছায়ার মতো সর্বদা ঘুরে বেড়াতেন, তিনি জপতপ দানধ্যান পূজা-অৰ্চনা নিয়েই তোদিন কাটিয়েছেন, তার সমস্ত ক্রিয়াকলাপেই শিশুকাল থেকেই মহর্ষিার্তার সঙ্গের