পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাক্ষ্যদাতা

গ্রন্থপরিচয় ዓ\9ዒ চলে। বিশেষ কালি দিয়ে লিখতে হয় এলুমিনিয়মের পাতের উপরে, তার থেকে বিশেষ ছাপার যন্ত্রে ছাপিয়ে নিলেই কম্পোজিটারের শরণাপন্ন হবার দরকার হয় না। তখন ভাবলেম, ছোটাে লেখাকে যারা সাহিত্য হিসাবে অনাদর করেন তঁরা কবির স্বাক্ষর হিসাবে হয়তো সেগুলোকে গ্ৰহণ করতেও পারেন। তখন শরীর যথেষ্ট অসুস্থ, সেই কারণে সময় যথেষ্ট হাতে ছিল, সেই সুযোগে ইংরেজি বাংলা এই ছুটকো লেখাগুলি এলুমিনিয়ম পাতের ধ্য ঘটনাক্রমে আমার কোনাে তরুণ বন্ধু বললেন, “আপনার কিছুকাল লেখা Skeekikkekyyyy S ukkySLLyeyLeySyyyS আমার একান্ত অনুরোধ।” আমার ভোলবার শক্তি অসামান্য এবং নিজের পূর্বের লেখার প্রতি প্রায়ই আমার মনে একটা অহেতুক বিরাগ জন্মায়। এইজন্যই তরুণ লেখকরা সাহিত্যিক-পদবী থেকে আমাকে যখন বরখাস্ত করবার জন্যে কানাকানি করতে থাকেন তখন আমার মন আমাকে পরামর্শ দেয় যে, “আগেভাগে নিজেই তুমি মানে মানে রেজিগনেশন-পত্ৰ পাঠিয়ে যৎসামান্য কিছু পেনসনের দাবি রেখে দাও।” এটা যে সম্ভব হয় তার কারণ আমার পূর্বেকার লেখাগুলো আমি যে-পরিমাণে ভুলি সেই পরিমাণেই মনে হয় তারা ভোলবােরই যোগ্য । তাই প্রস্তুত হয়েছিলেম, আমার বন্ধু পুরোনাে ইতিহাসের ক্ষেত্র থেকে উষ্ণুস্বরূপ যা-কিছু মুগ্ধ করে আসনে আবার তাদেরকে পুরানের ভূমিগুলােকে বৈতরণী পার করে ফেরত গুটিপাচেক ছোটাে কবিতা তিনি আমার সম্মুখে উপস্থিত করলেন। আমি বললেম, “কিছুতেই মনে পড়বে না। এগুলি আমার লেখা," তিনি জোর করেই বললেন, “কোনো সংশয় নেই ।” আমার রচনা-সম্বন্ধে আমার নিজের সাক্ষ্যকে সর্বদাই অবজ্ঞা করা হয় । আমার গানে আমি সুর দিয়ে থাকি । যাকে হাতের কাছে পাই তাকে সেই সদ্যোজাত সুর শিখিয়ে দিই। তখন থেকে সে-গানের সুরগুলি সম্বন্ধে সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমার ছাত্রের। তার পর আমি যদি গাইতে যাই তারা এ কথা বলতে সংকোচমাত্র করে না যে, আমি ভুল করছি। এ সম্বন্ধে তাদের শাসন আমাকে বার বার স্বীকার করে নিতে হয় । কবিতা কয়টি যে আমারই সেও আমি স্বীকার করে নিলেম | পড়ে বিশেষ তৃপ্তি বোধ হলমনে হল ভালোই লিখেছি। বিস্মরণশক্তির প্রবলতাবশত নিজের কবিতা থেকে নিজের মন যখন দূরে সরে যায় তখন সেই কবিতাকে অপর সাধারণ পাঠকের মতোই নিরাসক্তভাবে আমি প্রশংসা এবং নিন্দাও করে থাকি। নিজের পুরোনো লেখা নিয়ে বিস্ময় বােধ করতে বা স্বীকার করতে আমার সংকোচ হয় না- কেননা তার সম্বন্ধে আমার অহমিকার ধার ক্ষয় হয়ে যায়। পড়ে দেখলাম : তোমারে ভুলিতে মোর হল না যে মতি, এ জগতে কারও তাহে নাই কোনো ক্ষতি । আমি তাহে দীন নহি, তুমি নহা ঋণী, দেবতার অংশ, তাও পাইবেন তিনি। নিজের লেখা জেনেও আমাকে স্বীকার করতে হল যে, ছোটাের মধ্যে এই কবিতাটি সম্পূর্ণ ভরে উঠেছে। পেটুকচিত্ত পাঠকের পেট ভরাবার জন্যে একে পঁচিশ-ত্রিশ লাইন পর্যন্ত বাড়িয়ে তোলা যেতে পারত- এমন-কি, একে বড়ো আকারে লেখাই এর চেয়ে হত সহজ। কিন্তু লোভে পড়ে একে বাড়তে গেলেই একে কমানাে হত। তাই নিজের অলুব্ধ কবিবুদ্ধির প্রশংসাই করলেম |