পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ৰঙ্গবিজেতা ری আবার তৃতীয় শ্রেণী সম্মুখীন হইবে, এইরুপে ক্রমান্বয়ে প্রত্যেক শ্রেণীই এক একবার করিয়া বিশ্রাম করিতে পারিবে । সম্মুখে শত্রর আক্রমণ রুদ্ধ হইবে, পশ্চাতে পরিখার জল, সে দিক হইতে আক্রমণের সম্ভাবনা নাই। সেই পরিখার নিকট কয়েক জন দুই চারিটী ব্যক্ষ কত্তন করিয়া সেতু বন্ধন করিতেছিল। মহত্তোমধ্যে শত্র আসিয়া পড়িল, ইন্দ্রনাথের হৃদয় উৎসাহে পরিপণ হইল! আজি প্রায় তিন চারি মাস পৰ্য্যস্ত মঙ্গের নগর বেটিত ছিল, কিন্তু অদ্য যেরপে দুইপক্ষই ভীষণ সাহস প্রকাশ করিয়া যুদ্ধ করিতে লাগিল, এরুপ কখনও দেখা যায় নাই। ব্যুহ ভেদ করিতে পারিলেই রাজা টোডরমল্ল বন্দী হইবেন, এই জ্ঞানে শত্ররা সাগর-তরঙ্গের ন্যায় বার বার ভীষণ আক্রমণ করিতে লাগিল, কিন্তু সে ব্যুহ ভাঙ্গিবার নহে, পব্বতশিখরের ন্যায় বার বার শবদলের তরঙ্গমালা দরে নিক্ষেপ করিতে লাগিল। শত্ররা অধিক সংখ্যক বলিয়া তাহাদিগের বড় সুবিধা হইল না, কেন না, ইন্দ্রনাথ যেরপে কৌশলে বাহ নিম্মাণ করিয়াছিলেন, তাহাতে একেবারে একশত জনের অধিক শত্র আসিয়া সে বহে আক্রমণ করিতে পারিল না, বরং সেই অলপ স্থানের মধ্যে দুই সহস্ৰ সৈন্যের চলাচলের ব্যাঘাত হইতে লাগিল। তথাপি শত্ররা আদ্য বার বার সিংহ-গডজন করিয়া সিংহবিক্রম প্রকাশ করিতেছিল, বীরমদে উন্মত্ত হইয়া বার বার শব্দ করিয়া সেই বাহভঙ্গের চেষ্টা করিতে লাগিল। ইন্দ্রনাথের সৈন্যেরাও সাহসে হীন ছিল না। অদ্য স্বয়ং রাজা টোডরমল্লের দ্বারা চালিত হইয়া তাহাদিগের উৎসাহ ও উল্লাসের সীমা ছিল না। ইন্দ্রনাথ তীরের মত বাহের এপাশ্ব হইতে ওপাশ্বে”, এদিক হইতে ওদিকে আশবচালনা করিতে লাগিলেন। যেখানে যেখানে শত্ররা অতিশয় পরাক্রম প্রকাশ করিতেছিল, সেই সেই স্থানে সম্মুখীন হইতে লাগিলেন। মধ্যে মধ্যে উচ্চৈঃস্বরে বলিতে লাগিলেন, “আজি মহারাজ স্বয়ং তোমাদের যুদ্ধ দেখিতেছেন, আজি মহারাজের রক্ষার ভার তোমাদের হস্তে, আজি দল্লীশ্বরের নাম ও গৌরব তোমরা রক্ষা করিবে।” এইরুপ উৎসাহবচন শ্রবণ করিয়া তাঁহার সৈন্যগণ উল্লাসে পরিপন্ণ হইয়া সিংহনাদ করিতে লাগিল, ভৈরব গজানে আকাশ ভিন্ন হইল, শত্রর হৃদয় কম্পিত হইল। তথাপি দুই সহস্ৰ সৈন্যের সহিত পঞ্চশত সৈন্যের যুদ্ধ সম্ভবে না, ইন্দ্রনাথের সেনাগণ একে একে নিহত হইতে লাগিল, শত্রদিগেরও অনেক সৈন্য হত ও আঁহত হইল, কিন্তু দুই সহস্ত্রের মধ্যে এক শত কি দুই শত যুদ্ধে অক্ষম হইলে ক্ষতি নাই দেখিয়া, রাজা চিন্তিত হইলেন, একবার ইন্দ্রনাথকে অন্তরালে ডাকিয়া বলিলেন,—ইন্দ্রনাথ ! তুমি আপন সৈন্যদিগকে যেরপে রণশিক্ষা দয়াছ, তাহাতে আমি চমৎকৃত হইলাম। কিন্তু যেরপে সেনাগণ হত ও আহত হইতেছে, ভয় হয় রণে ভঙ্গ দিবে। ইন্দ্রনাথের মুখ রক্তবণ হইল, বলিলেন,—আমার সৈন্যগণকে সম্মখে যুদ্ধ করিতেই শিখাইয়াছি, রণে ভঙ্গ দিতে কখনও শিখাই নাই। যতক্ষণ একজন অশ্বারোহী থাকিবে ততক্ষণ সম্মুখ যুদ্ধ হইবে। সন্ধ্যার ছায়ায় ক্রমে ক্রমে যুদ্ধক্ষেত্র আবত করিতে লাগিল, কিন্তু সে চমৎকার ব্যুহ ভঙ্গ হইল না। একজন অশ্বারোহী হত হয়, তাহার স্থানে অপর একজন অশ্বারোহী আসিয়া প-ডায়মান হয়; সে হত হয়, আর একজন আসিয়া তথায় দণ্ডায়মান। শ্রেণী যত ক্ষীণ হইতে লাগিল, সৈন্যদিগের উৎসাহ ও উল্লাস যেন ততই বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। ইন্দ্রনাথ যথার্থই বলিয়াছিলেন, পলায়ন কাহাকে বলে, তাঁহার সৈন্যেরা শিখে নাই। শত্রগণ হতাশ হইয়া একবার বেগে শেষ আক্রমণ করিল, ভীষণ গজন করিয়া একবার শেষ আক্রমণ করিল। দুই সহস্ৰ অশ্বারোহীর সে ভীষণ গডজনি চারিদিকে একক্রোশ পৰ্য্যন্ত শ্রত হইল, দুই সহস্র অশ্বের যুগপৎ পদবিক্ষেপে মেদিনী কম্পিত হইল, কিন্তু সে শব্দে ও সে পদবিক্ষেপে ইন্দ্রনাথের বাহ কম্পিত হইল না। যুদ্ধ সাঙ্গ হইল, সে অপরপে ব্যুহ ভঙ্গ হইল না। অবশেষে সেতু নিমিত হইল। রাজা পরিখা পার হইলেন, রাজা নিরাপদে পার হইয়াছেন শনিয়া ইন্দ্রনাথের সৈন্যগণ একেবারে সিংহ-গৰ্জন করিল, সে গজন শত্রশিবিরে প্রবেশ করিল। তাহারা জানিল, যে জন্য দুই সহস্র সৈন্য প্রেরিত হইয়াছিল, তাহা ব্যথা হইয়াছে। আক্রমণকারিগণ ভগ্নোদ্যম হইয়া নীরবে নিজ শিবিরাভিমুখে প্রস্থান করিল। যতক্ষণ রাজা টোডরমল্ল সেতু পার হইতেছিলেন, ইন্দ্রনাথ একদটিতে তাঁহার দিকে দেখিতে লাগিলেন। ぐりぐり