পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/১৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

श्राशबौकष्कण গম্ভীরস্বরে বলিল,—বিলম্ব করিও না, আমরা যে দ্বার দিয়া আসিয়াছি এক্ষণে সে দ্বার রুদ্ধ হইয়াছে, চারিদিকে খোজাগণ নিকোষিত অসিহস্তে দণ্ডায়মান রহিয়াছে। এ বেগমদিগের প্রাসাদ, তুমি পরিষে জানিলে এইক্ষণেই তোমার প্রাণ বিনাশ করিবে। নরেন্দ্র বিস্ময়াপন্ন হইয়া দেখিলেন, জেলেখার কথা সত্য ! অগত্যা নরেন্দ্র কাঁচলি ও ঘাঘরা পরিলেন, জেলেখা হাসিতে হাসিতে তাঁহাকে পরচুলা পরাইয়া দিয়া মস্তকের উপর খোঁপা করিয়া দিল ! নরেন্দ্র এই অদভুত বেশে জেলেখার সঙ্গে সঙ্গে প্রাসাদের অন্তঃপরে চলিলেন ! নরেন্দ্র জেলেখার পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিলেন। কত গহে ও পথ অতিবাহিত করিলেন তাহা গণনা করা যায় না। দ্বারে দ্বারে অসিহস্তে খোজাগণ দণ্ডায়মান রহিয়াছে ও শত শত পরিচারিকা এদিক ওদিক পরিভ্রমণ করিতেছে। জেলেখাকে দেখিয়া সকলেই দ্বার ছাড়িয়া দিল । নরেন্দ্রনাথ বেগমদিগের মহলের অভ্যস্তরে যত যাইতে লাগিলেন ততই বিস্মিত হইলেন,— ঐশ্বৰ্য্য, শিল্পকাৰ্য্য ও বিলাসীপ্রয়তার পরাকাঠা দেখিয়া বিস্মিত হইলেন। শ্বেতমামারপ্রস্তরবিনিৰ্ম্মিত কত ঘর, কত প্রাঙ্গণ, কত সন্দের স্তম্ভসারি, কত উন্নত ছাদ, তাহা গণনা করা যায় না। সেই প্রস্তরে কি অপর্বে শিল্পকাৰ্য্য ! দেয়ালে, স্তম্ভে, প্রকোঠে, ভিন্ন ভিন্ন বণের প্রস্তর শ্বেতপ্রস্তরে সন্নিবেশিত হইয়া লতা, পত্র, বক্ষ, পাপের রপে ধারণ করিয়াছে, যেন সন্দের শ্বেত দেয়ালের পাশ্বে যথার্থই পাপ ফটিয়া রহিয়াছে। ছাদ হইতে যেন সেইরুপ পম্পে লম্বিত রহিয়াছে, অথবা উত্তজবল সবণে মণ্ডিত ও চিত্রিত হইয়া অধিকতর শোভা ধারণ করিতেছে । শ্বেতপ্রস্তর-বিনিমিত সন্দের গবাক্ষ, সন্দের ফোয়ারা, সন্দের পপাধার; তাহার উপর মনোহর সুগন্ধ পাপ ফটিয়া প্রাসাদকে আমোদিত করিতেছে। শ্বেত, পীত, নীল বণের আলোক সেই রঞ্জিত ঘরের ভিতর ও বাহিরে দেখা যাইতেছে । জগতে অতুল্য রুপবতী বেগমগণ কেহ বা সেই ঘরে বা প্রকোঠে ভ্রমণ করিতেছেন, কেহ বা পাপ চয়ন করিয়া কেশে ধারণ করিতেছেন, রু নল ন হল। আন আনন্দ দি মাতা দল ও তাতে রপণ"। এই সমস্ত দেখিতে দেখিতে নরেন্দ্র যে স্থানে স্বয়ং আরংজীব ছিলেন তথায় যাইয়া উপনীত হইলেন। দেখিলেন, সম্রাট আরংজীব বেগমদিগের সহিত প’চিশী খেলিতেছেন। পাঁচশীর ঘর শ্বেতপ্রস্তর-বিনিমিত ও প্রকাণ্ড : এক একটী রুপবতী কামিনী এক একটী ঘটী! ঘটী ভিন্ন ভিন্ন বর্ণের হওয়া আবশ্যক, এই জন্য কামিনীগণ ভিন্ন ভিন্ন বণের পরিচ্ছদ ধারণ করিয়াছে ! তথা হইতে নরেন্দ্র জেলেখার সঙ্গে একটী মমরপ্রস্তরনিমিত ঘরে প্রবেশ করিলেন । মমীরপ্রস্তর-বিনিমিত স্তম্ভসারি সাটিন ও মকমলে বিজড়িত, এবং নানা বণের গন্ধদীপ আলোক ও গন্ধদানে ঘর আমোদিত করিতেছে। ভিতরে তিন চারি জন বেগম বাদ্য ও গীত করিতেছে, সপ্তস্বরমিলিত সেই গীতধৰনি উন্নত ছাদ উল্লঙ্ঘন করিয়া যমুনাতীরে ও নৈশ গগনে প্রধাবিত হইতেছে। সে গহ হইতে কিছদরে যমুনানদীর দিকে একটী শ্বেতপ্রস্তরনিমিত বারাণ্ডায় সন্দের চন্দ্রালোক পতিত হইয়াছে। এ স্থানটী নিস্তব্ধ ও রমণীয় ! উপরে আকাশ নীলবণ, দুই একটী তারা দেখা যাইতেছে, শারদীয় চন্দ্র সন্ধাবষণ করিয়া গগনকে শোভিত ও জগৎকে তৃপ্ত করিতেছে। নীচে নীলবণ যমনানদী কল কল শব্দে প্রধাবিত হইতেছে, তাহার চন্দ্রকরোক্তজবল বক্ষের উপর দুই একখানি ক্ষুদ্র পোত ভাসমান রহিয়াছে। দক্ষিণে সন্দের তাজমহল চন্দ্রকরে অধিকতর সন্দের দেখা যাইতেছে। বারাডা জনশন্য, কেবল একজন রাজদাসী বীণাহন্তে গান করিতেছিল, এক্ষণে পরিশ্রান্ত হইয়া বারান্ডার শ্বেতপ্রস্তরে মস্তক রাখিয়া বোধ হয় সখের বা দুঃখের স্বপ্ন দেখিতেছে। যমুনার বায় রমণীর চন্দ্রকরোজবল কেশপাশ লইয়া ক্রীড়া করিতেছে, অথবা সে বীণার উপর কখন কখন সখের গান করিতেছে। বারাণ্ডায় দণ্ডায়মান হইয়া ও যমুনার সন্দের গান ও শীতল বায় ভোগ করিয়া নরেন্দ্রের হৃদয়ে নব নব ভাব উদিত হইতে লাগিল। এইরুপ নিস্তব্ধ রজনীতে এইরুপ নদীতীরে নরেন্দ্র দরে বঙ্গদেশে হেমকে শেষবার দেখিয়াছিলেন । আহা! সে সন্দের মুখখানি চন্দ্র হইতেও সাধাপণ ও জ্যোতিমায়! একটী দীঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া অন্য দিকে যাইলেন। ゞ○を