পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/১৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী একমাত্র রত্ন। সখের সময়, সম্পদের সময়, রমণী অস্থিরা, চঞ্চলচিত্তা, মানিনী! কত অাদার করে, কত অভিমান করে, কত মিথ্যা ক্রোধ করে, কিন্তু যখন জীবনাকাশ ক্রমশঃ মেঘাচ্ছন্ন হইয়া আইসে, যখন পথিবীর সমস্ত সুখ নাট্যাভিনয়ের শেষে দীপশ্রেণীর ন্যায় একে একে নিৰ্বাপিত হইতে থাকে, যখন আশা মরীচিকারপে আমাদিগকে অনেক পথ লইয়া যাইয়া শেষে মরভূমিতে রাখিয়া অদশ্য হয়, যখন বন্ধগণ আমাদিগকে ত্যাগ করে ও লক্ষী বিমুখ হয়েন, তখন কে অনন্যমনা ও অনন্যহৃদয়া হইয়া অভাগার শশ্রেষা করে ? মাতা ব্যতীত আর কে হতভাগার শয্যা রচনা করে ? দুহিতা ব্যতীত আর কে রোগীর শাক ওঠে জল দান করে ? ভাৰ্য্যা ব্যতীত আর কে নিদ্রা বিস্মত হইয়া, ক্লাস্তি বিস্মত হইয়া, দিবানিশি হতভাগার সেবায় রত থাকে ? রমণীর প্রেম অগাধ, অপরিসীম। দারিদ্র্যে, দুঃখে, কন্টেও শৈব্যা হরিশচন্দ্রকে সেবা করিতে লাগিলেন। সে দুঃখের কথা শুনিয়া হেমলতার চক্ষতে জল আসিল । তাহার পর আরও দুঃখ । রাজা শৈব্যাকে ও পত্রটিকে বিক্রয় করিলেন, আপনাকে চণ্ডালের নিকটে বিক্রয় করিলেন, অভাগিনী শৈব্যা স্বামিবিরহে কায়িক পরিশ্রমে আপনার ও পত্রটির ভরণপোষণ করিতে লাগিলেন। আহা! সে পত্রটিও অকালে কাল প্রাপ্ত হইল!— হেমলতা আর থাকিতে পারিল না, ননদিনীর হৃদয়ে মস্তক স্থাপন করিয়া দর-বিগলিত ধারায় রোদন করিতে লাগিল। গলপ সাঙ্গ হইল, রাজা রাজ্ঞীকে ফিরিয়া পাইলেন, পত্রকে ফিরিয়া পাইলেন, রাজ্য সম্পদ সমস্তই ফিরিয়া পাইলেন। হেমলতার হৃদয় শান্ত হইল। অনেকক্ষণ, প্রায় এক দণ্ডকাল, উভয়েই নিস্তব্ধ হইয়া রহিল, অনেকক্ষণ পর হেমলতা ধীরে ধীরে উঠিয়া একটী বাতায়ন খলিল । বাহিরে চন্দ্রকরে জগৎ উদ্দীপ্ত হইয়াছে, নৈশ বায়তে ব্যক্ষ সকল ধীরে ধীরে মস্তক নাড়িতেছে দর হইতে গঙ্গার জলের কুল কুল শব্দ শনা যাইতেছে। শৈবলিনী ধীরে ধীরে হেমলতার নিকটে আসিয়া ভগিনীর ন্যায় সস্নেহে তাহার হস্ত ধারণ করিল। হেম কি ভাবিতেছিল ? ভাবিতেছিল ঐ বক্ষের পাতায় পাতায় কত জোনাকী পোকা দেখা যাইতেছে, উহাদেরও জীবন আছে, সুখ, দুঃখ, ভরসা, ইচ্ছা আছে। যে ভগবান রাজা হরিশচন্দ্রকে বিপদ হইতে উদ্ধার করিলেন, তিনিই এই নিশায় অনিদ্র হইয়া ঐ পোকাগুলিকে খাদ্য যোগাইতেছেন, উহাদিগের মনোবাঞ্ছা পণ করিতেছেন। এই বিপলে বিশ্বসংসারে সকল করবেন। হেমলতা বালিকা-সুলভ সরলতার সহিত জিজ্ঞাসা করিল,—দিদি, যিনি দয়ার সাগর, তিনি তোমাকে অলপবয়সে বিধবা করিলেন কেন ? শৈবলিনী। সকলের কপালে কি সকল সুখ থাকে ? তিনি আমাকে বিধবা করিয়াছেন, কিন্তু দুঃখিনী করেন নাই। দেবতুল্য ভ্রাতা দিয়াছেন, তোমার ন্যায় সুশীলা ভ্রাতৃজায়া দিয়াছেন, এই সোনার সংসারে স্থান দিয়াছেন। আমার আর কিছই কামনা নাই, কেবল একবার তাঁথা-ভ্রমণ করিয়া পজা করিব এই ইচ্ছা আছে। হেমলতা। আমাদের কাশী বন্দোবন যাওয়ার কথা স্থির হইয়াছিল না ? শৈবলিনী। হাঁ, শ্রীশ আমার উপরোধে সম্মত হইয়াছে, বোধ হয় শীঘ্রই যাওয়া হইবে। হেমলতা। দিদি, তোমার সঙ্গে তাঁথে যাইব ভাবিলে আমার বড় আহমাদ হয়; কত দেশ ಗೆ ಆಗೇ। আর শনিয়াছি নরেন্দ্র নাকি পশ্চিমে আছেন, হয় ত তাঁহার সঙ্গেও দেখা | শৈবলিনী। হইতে পারে। এমন সময়ে শ্রীশচন্দ্র ঘরে প্রবেশ করিলেন। শৈবলিনী একপাশ্ব দিয়া বাহির হইয়া যাইল। তাহার ললাট চিন্তাকুল। শৈবলিনীর কি চিন্তা? বাহিরে দণ্ডায়মানা হইয়া শৈবলিনী ভাবিতেছিল--হেম! তুমি আমাকে বিধবা বলিয়া অভাগিনী বল, কিন্তু নারীতে যাহা কখনও সহ্য করিতে পারে না, বালিকা! তুমি তাহা সহ্য করিয়াছ। সে আঘাতে তোমার হৃদয় চণ হইয়াছে, তোমার জীবন শকে হইয়াছে, এ বয়সে তোমার দ্ব্বল শরীর ও নীরস ওঠ দেখিলে হৃদয় বিদীর্ণ হয়। এ বিষম চিন্তার কথা ভ্রাতা কিছই জানে না, তুমি বালিকা, তুমিও ভাবিয়াছ এ চিন্তা নিৰ্বাপিত Ꮌ8O