পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/২৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিবজী। গোস্বামী । , ১ অশ্বারোহী। কোথা হইতে আসিতেছ? শিবজী। দিল্লীনগর হইতে । অশ্বারোহী। আমরা দিল্লীনগরীতে যাইব, কিন্তু পথ হারাইয়াছি, আমাদের সঙ্গে আসিয়া পথ দেখাইয়া দেও, পরে তুমি মথুরায় যাইও । শিবজীর মস্তকে যেন বজ্রাঘাত হইল। দিল্লী যাইতে অস্বীকার করিলে সৈনিকেরা বলপ্রকাশ করিবে, বিবাদের সময় সহসা শিবজীকে চিনিলেও চিনিতে পারে, কেন না দিল্লীতে এরপে সৈনিক ছিল না যে শিবজীকে দেখে নাই। আর দিল্লীতে পািনগমন করিলে সহস্ৰ বিপদ! ইতিকক্তব্যবিমুঢ় হইয়া চিন্তা করিতে লাগিলেন। একজন অশ্বারোহী সম্মুখে আসিয়া শিবজীর সহিত কথা কহিয়াছিল, অপর দুইজন অসপস্টমবরে পরামশা করিতেছিল। কি পরামশ ? একজন বলিল,—এ সবর আমি জানি, আমি দক্ষিণ দেশে শায়েস্তাখাঁর অধীনে অনেক দিন যুদ্ধ করিয়াছি, আমি নিশ্চয় বলিতেছি পথিক গোস্বামী নহে। অপরজন বলিল,—তবে কে ? প্রথম। আমি সন্দেহ করি, এ স্বয়ং শিবজী, দুইজন মনষ্যের কন্ঠস্বর ঠিক একরপে क्षा ! দ্বিতীয়। দরে মুখ ! শিবজী দিল্লীতে বন্দী হইয়াছে। প্রথম। সেইরপে আমরাও মনে করিয়াছিলাম যে শিবজী সিংহগড় দুগে আছে, সহসা একদিন রজনীযোগে পনো ধবংস করিয়া গিয়াছিল! দ্বিতীয়। ভাল, মস্তকের বসত্ৰ তুলিয়া দেখিলেই সকল সন্দেহ দরে হইবে। সহসা একজন অশ্বারোহী আসিয়া শিবজীর উষ্ণীষ দরে নিক্ষেপ করিলেন, শিবজী তাঁহাকে চিনিলেন, তিনি সায়েস্তাখাঁর অধীনস্থ একজন প্রধান সেনানী ! যদি হস্তে কোনরপে অসত্ৰ থাকিত, শিবজী একাকী তিনজনকে হত করিবার চেণ্টা করিতেন। রিক্তহস্তেও একজনকে মাটি আঘাতে অচেতন করলেন, এমন সময় আর দুইজন অসিহস্তে নিকটে আসিয়া শিবজীকে ধরিয়া ভূতলশায়ী করিল। শিবজী ইস্ট দেবতাকে সমরণ করিলেন। আবার বন্দী হইলেন, বিদেশে বন্ধশেন্যে হইয়া আরংজীব কর্তৃক হত হইবেন, এই চিন্তা করিতেছিলেন। শম্ভুজীর দিকে নয়ন পড়িল, চক্ষ জলে আপ্লুত হইল। সহসা একটী শব্দ হইল, শিবজী দেখিলেন, একজন অশ্বারোহী তীরবিদ্ধ হইয়া ভূতলশায়ী হইলেন। আর একটী তীর, আর একটী তীর ; শিবজীর তিনজন শত্রই ভূতলশায়ী ! তিন জনই গতজীবন ! শিবজী পরমেশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়া উঠিয়া দেখিলেন, পশ্চাৎ হইতে সেই অশ্বরক্ষক জানকীনাথ তীর নিক্ষেপ করিতেছিল। বিস্মিত হইয়া জানকীনাথকে নিকটে ডাকিয়া জীবন রক্ষার জন্য শত ধন্যবাদ দিতে লাগিলেন । সে নিকটে আসিলে শিবজী আরও বিসিমত হইয়া দেখিলেন, সে অশ্বরক্ষক নহে, অশ্বরক্ষকবেশে সীতাপতি গোস্বামী ! তখন সহস্রবার গোস্বামীর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিয়া বলিলেন,—সীতাপতি ! আপনি ভিন্ন শিবজীর বিপদের সময় প্রকৃত বন্ধ আর কে আছে ? আপনাকে অশ্বরক্ষক মনে করিয়া সুদলিম না হন। আপনার এ কায্যের জন্য আমি কি উপযুক্ত পুরস্কার দিতে পারি ? করন, আমি অশ্বরক্ষকও নহি, গোস্বামীও নহি, আমি আপনার পরাতন ভূত্য রঘুনাথজী হাবিলদার। জ্ঞান হইয়া অবধি আপনার সেবা করিয়াছি, আজীবনকাল আপনার সেবা করিব, ইহা ভিন্ন অন্য কামনা নাই, অন্য পুরস্কার চাহি না। প্রভুর কাছে যদি না জানিয়া কখন কোন দোষ করিয়া থাকি, প্ৰভু আশ্রয়, দোষ ক্ষমা করন। শিবজী চকিত হইয়া সেই বালক রঘনাথের দিকে চাহিলেন, হৃদয়ের উদ্বেগ সম্বরণ করিতে পারিলেন না। সজলনয়নে রঘুনাথকে বক্ষে ধারণ করিয়া বলিলেন–রঘুনাথ ! রঘুনাথ ! ২৩৩ হয়