পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/২৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब्रटबश्व ब्रघ्ननाबलौ অনেকক্ষণ উভয়ে নিন্তব্ধ হইয়া রহিলেন, সন্ধ্যার সশীতল সমীরণে উভয়ের শরীর শীতল হইল, নয়নের জল শুকাইয়া গেল। த অনেকক্ষণ পর গোস্বামী কহিলেন-দেবতার প্রসাদে কাৰ্য্যসিদ্ধি করিবার পর রঘুনাথ একটী কথা আমার দ্বারা আপনার নিকট বলিয়া পাঠাইয়াছেন। সরয উৎকণ্ঠিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন,—সে কি ? গোস্বামী। তিনি জিজ্ঞাসা করিয়াছেন, এতদিন সরষ তাঁহার দাসকে মনে রাখবেন ? আমি যাইলে সরয আমাকে চিনিতে পারবেন ? সরয়। এ জীবনে কি আমি তাঁহাকে ভুলিতে পারি ? গোস্বামী। আপনার ভালবাসা তিনি জানেন, তথাপি নারীর মন সব্বদাই চপল, কি জানি যদি ভুলিয়া গিয়া থাকেন। গোস্বামীর চপলতা ও ঈষৎ হাস্য দেখিয়া সরয কিঞ্চিৎ বিরক্ত হইলেন, কহিলেন,--নারীর মন চপল তাহা আমি জানিতাম না। গোস্বামী। আমিও জানিতাম না, কিন্তু অদ্য দেখিতেছি। সরয়। কিসে দেখিলেন ? গোস্বামী। ষিনি আমার বাগদত্তা বধ, তিনি আমাকে আদ্য ভুলিয়াছেন, দেখিয়াও আমাকে চিনিতে পারেন নাই। সরয । সে কোন হতভাগিনী ? গোস্বামী। তিনি সেই ভাগ্যবতী যাঁহাকে তোরণদগে জনাদনের গহের ছাদে প্রথম দশন করিয়া আমি মন প্রাণ হারাইয়াছিলাম ! তিনি সেই ভাগ্যবতী যাঁহার কন্ঠে একদিন মক্তোমালা পরাইয়া দিয়া আমি জীবন চরিতাথ জ্ঞান করিয়াছিলাম ! তিনি সেই ভাগ্যবতী, যিনি তোরণদগে ও জয়সিংহের শিবিরে, যুদ্ধের সময় ও সন্ধির সময়, সব্বদাই আমার নয়নের মণির ন্যায় ছিলেন । তিনি সেই ভাগ্যবতী যাঁহার দশন আমার নয়নে সৰ্য্যোলোক, যাঁহার শব্দ আমার কণে সঙ্গীত, যাঁহার সপশ আমার শরীরে চন্দন-প্রলেপ, যাঁহার প্রীতি আমার জীবনের জীবন! তিনি সেই ভাগ্যবতী যাঁহার নাম সমরণ করিয়া, যাহার জন্বলন্ত উৎসাহবাক্য হৃদয়ে ধারণ করিয়া, আমি দিল্লী যাত্রা করিয়াছিলাম, যশের পথ পরিকার করিয়াছি, অনন্ত বিপদ-সাগর উত্তীণ হইয়াছি। বহুদিন পর, বহর বিপদ পার হইয়া, অদ্য সেই ভাগ্যবতীর চরণোপান্তে উপস্থিত হইয়াছি, তিনি কি আজ আমাকে চিনিতে পারিবেন ? সেই কোকিল-বিনিন্দিত সবর সরযর হৃদয় মন্থন করিল, তারকালোকে ছদ্মবেশধারী সেই দীঘকায় পরষশ্রেষ্ঠকে সরয চিনিতে পারিলেন। সরয হৃদয়ের আবেগ আর সম্বরণ করিতে পারিলেন না, তাঁহার মস্তক ঘুরিতেছিল, নয়ন মাদিত হইয়াছিল। "রঘুনাথ ! ক্ষমা কর।”— এই মাত্র কহিয়া সরয রঘুনাথের দিকে হস্তপ্রসারণ করিলেন। পতনোমখে প্রিয় দেহ রঘুনাথ নিজ অঙ্গে ধারণ করিলেন, সেই উদ্বেগপণে হৃদয় আপন হৃদয়ে স্থাপন করিলেন। ক্ষণেক পর চৈতন্য লাভ করিয়া সরয নয়ন উন্মীলিত করিলেন, কি দেখিলেন ? হৃদয়নাথ অভাগিনীকে হৃদয়ে ধারণ করিয়াছেন, চিরপ্রাথিত পতি আজ সরযবালাকে গাঢ় আলিঙ্গন f s * *. বহুদিন পর আজ সরযর তপ্ত হৃদয় রঘুনাথের প্রশান্ত হৃদয় পশে শীতল হইল, সরযর ঘনশ্বাস রঘুনাথের নিশ্বাসে মিশ্রিত হইল, সরযর কম্পিত রক্তবর্ণ ওঠস্বয় জীবনের মধ্যে প্রথমবার রঘুনাথের ওঠে সপশ করিল। সে সংস্পশে বালিকা শিহরিয়া উঠিল! সেই প্রিয় প্রগাঢ় আলিঙ্গনে, সেই বারংবার ঘন চুম্বনে বালিকা কাঁপিতে লাগিল। এ কি প্রকৃত, না স্বপ্ন ? বায়তাড়িত পত্রের ন্যায় কাঁপিতে কাঁপিতে সরয মনে মনে বলিলেন,—জগদীশ্বর ! এ যদি স্বপ্ন হয়, যেন এ সুখনিদ্রা হইতে কখনও না জাগরিত হই!

  • 80