পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহারাষ্ট্র জীবন-প্রভাত সরয দিদিকে সব্বদাই আপন গহে রাখিতেন ও বরের সহিত “সমান সমান” ভালবাসিতেন, এবং কয়েক বৎসর পরে একটী সদ্বংশীয় সচরিত্র পাত্র দেখিয়া দিদির বিবাহ দিলেন। বিবাহদিবসে সরয ও রঘুনাথ স্বয়ং উপস্থিত রহিলেন, সরয কন্যার কানে কানে বলিলেন-দেখিও দিদি ! যাহা বলিয়াছিলে, সে কথা মনে রাখিও, বরের চেয়ে আমাকে ভালবাসিবে ! রঘুনাথ আখ্যায়িকাবিবত সময়ের পর রয়োদশ বৎসর পয্যন্ত সংখ্যাতি ও সম্মানের সহিত শিবজীর অধীনে কায্য করিতে লাগিলেন। যশোবন্তসিংহ যখন জানিতে পারিলেন যে রঘুনাথ তাঁহারই প্রিয় অনচের গজপতিসিংহের পত্র, তখন রঘুনাথকে সবদেশে আহবান করিলেন । কিন্তু শিবজী রঘুনাথকে দেশে যাইতে দিলেন না, যতদিন জীবিত ছিলেন, রঘুনাথকে নিকটে রাখিলেন। পরে যখন ১৬৮০ খঃ অব্দের চৈত্র মাসে শিবজীর মৃত্যু হয়, তখন শিবজীর অযোগ্য পত্র শম্ভুজী পিতার পরাতন ভূতাদিগকে একে একে অবমানিত বা কারারুদ্ধ করিতে লাগিলেন। রঘুনাথ আর মহারাষ্ট্ৰে থাকিলে উপকার নাই দেখিয়া সরয ও জনাদনের সহিত সবদেশে প্রত্যাবৰ্ত্তন করিলেন। সময"মহলের পরাতন দগে তিলকসিংহের প্রপৌত্র প্রবেশ করিলেন ! পাঠক! ইচ্ছা এই স্থানেই আপনার নিকট বিদায় লই, কিন্তু আর একজনের কথা বলিতে বাকী আছে, শাস্ত চিরসহিষ্ণ লক্ষীর পিণী লক্ষীর কথা বলিতে বাকী আছে। যেদিন চন্দ্ররাও আত্মহত্যা করিয়াছিলেন, রঘুনাথ সেই দিনই ভগিনীর সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাইলেন। যাহা দেখিলেন, তাহাতে তাঁহার হৃদয় স্তম্ভিত হইল। দেখিলেন, শবের পাশ্বে" লক্ষসী আললোয়িত কেশে গড়াগড়ি দিতেছেন, ঘন ঘন মোহ যাইতেছেন, সময়ে সময়ে হৃদয়বিদারক আত্তনাদে ঘর পরিপরিত করিতেছেন ! হিন্দুরমণীর পতির মৃত্যুতে যে ভীষণ যাতনা হয়, কে বর্ণনা করিতে পারে? অদ্য লক্ষীর নয়নের আলোক নিব্বাণ হইয়াছে, হৃদয় শন্য হইয়াছে, জগৎ অন্ধকারময় হইয়াছে! শোকে, বিষাদে, নৈরাশ্যে, নব বৈধব্যের অসহ্য যাতনায়, বিধবা ঘন ঘন আত্তনাদ করিতেছে ! রঘনাথ সাল্পনা করিবার চেষ্টা করিলেন, সান্ত্বনা দরে থাকুক, লক্ষয়ী প্রাণের ভ্রাতাকে চিনিতেও পারিলেন না। ঝর ঝর করিয়া আশ্রবেষণ করিতে করিতে রঘুনাথ গহে হইতে নিত্ৰান্ত হইলেন। সন্ধ্যার সময় রঘুনাথ পুনরায় ভগিনীকে দেখিতে আসিলেন, লক্ষয়ীর ভাবপরিবত্তন দেখিয়া কিছ বিস্মিত হইলেন। দেখিলেন, লক্ষয়ীর নয়নে জল নাই, ধীরে ধীরে স্বামীর মতদেহ সন্দের সুগন্ধ পাপ দিয়া সাজাইতেছেন। বালিকা যেরপে মনোনিবেশ করিয়া পত্তেলি সাজায়, লক্ষয়ী সেইরাপ মনোনিবেশ পবেক মতদেহ সাজাইতেছেন। রঘুনাথ গহে আসিলে লক্ষয়ী ধীরে ধীরে রঘুনাথের নিকটে আসিলেন, অতি মদ পদবিক্ষেপে আসিলেন, যেন শব্দ হইলে স্বামীর নিদ্রাভঙ্গ হইবে ! অতি মদস্বেরে বলিলেন,— ভাই রঘুনাথ! তোমার সঙ্গে যে আর একবার দেখা হইল, আমার পরম ভাগ্য, এখন আর আমার মনে কোন কটে থাকিল না। সাশ্রনয়নে রঘুনাথ বলিলেন,—প্রাণের ভগিনী লক্ষয়ী, আমি তোমার সঙ্গে এসময়ে দেখা না করিয়া কি থাকিতে পারি? লক্ষী অঞ্চল দিয়া রঘুনাথের চক্ষের জল মোচন করিয়া বলিলেন,—সত্য ভাই, তোমার দয়ার শরীর, তুমি হৃদয়েশ্বরের জন্য রাজার নিকট যে আবেদন করিয়াছিলে শুনিয়াছি। আমার ভাগ্যে যাহা ছিল, তাহা হইয়াছে, জগদীশ্বর তোমাকে সখে রাখুন। রঘুনাথ। লক্ষী! তুমি বুদ্ধিমতী আমি চিরকালই জানি, এ অসহ্য শোক কথঞ্চিৎ সম্বরণ করিয়াছ দেখিয়া তুষ্ট হইলাম। মনষ্যের জীবন শোকময়, তোমার কপালে যাহা ছিল, ঘটিয়াছে, সে শোক সহিষ্ণ হইয়া বহন কর। আইস, আমার গহে আইস, ভ্রাতার ভালবাসা, ভ্রাতার যত্নে যদি সন্তোষ দান করিতে পারে, লক্ষয়ী, আমি কটী করিব না। লক্ষী একট হাসিল্লেনু, সে হাস্য দেখিয়া রঘনুথের প্রাণ শকাইয়া গেল। ঈষৎ হাসিয়া লক্ষী বলিলেন-ভাই তোমার দয়ার শরীর, কিন্তু লক্ষয়ীকে জগদীশ্বরই স্বয়ং সাত্ত্বনা করিয়াছেন, শাস্তির পথ দেখাইয়া দিয়াছেন। হৃদয়েশ্বর চিরনিদ্রায় নিদ্রিত রহিয়াছেন, তিনি 8이