পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/২৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্যথ হইল, একটা বহৎ শিলাখণ্ডে লাগিয়া সে শিলাখণ্ড চণ করিল, বরই নিমেষমধ্যে অশ্বের উদর বিদীণ করিল। - প্রত্যুৎপন্নমতি দতেজয়সিংহ পতনশীল অশ্ব হইতে লম্ফ দিয়া দশ হস্ত দরে পড়িলেন। বরাহ মত অশ্বকে ত্যাগ করিয়া তাঁহার প্রতি ধাবমান হইল। মৃত্যু অনিবাৰ্য্য! রাজপত যোদ্ধা অকম্পিত নয়নে মৃত্যু প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন, মৃত্যু আসিল না। অদটি-হন্ত-নিক্ষিপ্ত একটী বশ আসিল, বরাহের মাখের উপর লাগাতে দন্ত চণ হইয়া রক্তধারা বাহির হইল। সে আঘাতে বরাহ মরিল না, কিন্তু দজয়সিংহকে ত্যাগ করিয়া একেবারে জঙ্গলের মধ্যে পলাইল, রজনীর অন্ধকারে আর বরাহকে দেখা গেল না। রজনীর অন্ধকারে দতেজয়সিংহ দেখিলেন, পন্বত হইতে একজন দীঘর্ণকার যবেক অবতরণ করিতেছে। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : তেজসিংহ তদারভ্যাহং বিরাতকৃতসংসগো বন্ধনকুলমৎস্যজ্য * * অসিমন কাননে দারীকৃতকলকো বসামি। —দশকুমারচরিতম। আহেরিয়ার দিন বরাহ পলায়ন করিল, দতজয়সিংহের হস্তনিক্ষিপ্ত বশ ব্যথ হইল, অপরের সাহায্যে অদ্য দত্তেজয়সিংহের জীবন রক্ষা হইল—এইরুপ শত চিন্তা দন্জেয়সিংহকে দংশন করিতে লাগিল দঙ্গীয়সিংহ রোষে, অভিমানে,তাহার প্রাণরক্ষাকারীকে ধন্যবাদ দিতে বিস্মত হইলেন। ঈষৎ ককশস্বরে কহিলেন,—আমি আপনাকে চিনি না, বোধ করি আপনি আমার জীবনরক্ষা করিয়াছেন। অপরিচিত যবেক ধীরে ধীরে বলিলেন,-মনুষ্যমাত্রেই মনষ্যের জীবন রক্ষা করিতে চেণ্টা করে। দনুজয়সিংহের জীবন রক্ষা করা রাজপতের বিশেষ কৰ্ত্তব্য, কেননা, তিনি যোদ্ধা, মেওয়ারের এই বিপদকালে তিনি সবজাতির উপকার করিতে পারেন। সামান্য পরিচ্ছদধারী অপরিচিত লোকের নিকট এইরুপ বাক্য শুনিয়া দতেজয়সিংহ ঈষৎ বিস্মিত হইলেন; জিজ্ঞাসা করিলেন,—আপনার নাম জিজ্ঞাসা করিতে পারি ? যবেক বলিলেন,—পরে জানিবেন, এক্ষণে শ্রান্ত হইয়াছেন, কুটীরে আসিয়া কিঞ্চিৎ বিশ্রাম করন । দীঘকায় বলিষ্ঠ যবেক ধীরে ধীরে অগ্রে যাইতে লাগিলেন, দতেজয়সিংহ পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিলেন। অন্ধকার রজনীতে বনপথের ভিতর দিয়া দুইজন যোদ্ধা নিস্তন্ধে যাইতে লাগিলেন। দতেজয়সিংহ দৰবল পুরুষ ছিলেন না, কিন্তু অপরিচিতের দীঘ ও ঋজ অবয়ব, বিশাল বক্ষঃস্থল, দীঘ ও বলিষ্ঠ বাহ এবং ধীরগম্ভীর-পদবিক্ষেপ দেখিয়া বিস্মিত হইলেন। এরপ উন্নতকায় পর্ষ তিনি দেখেন নাই, অথবা, আট বৎসর পবে কেবল একজনকে দেখিয়াছিলেন। ক্ষণেক পর যাবা সহসা দণ্ডায়মান হইয়া বলিলেন,—এক্ষণে আমার একটী অনুরোধ আছে, কারণ জিজ্ঞাসা করিবেন না। আপনার উষ্ণীষ দিয়া আপনার নয়ন অবিত করন, পরে আমি আপনার হস্ত ধারণ করিয়া লইয়া যাইব। যদি অস্বীকৃত হয়েন এইস্থানে বিদায় হইলাম। দতেজয়সিংহ আরও বিস্মিত হইলেন, কিন্তু যুবকের মুখের ভাব দেখিয়া বুঝিলেন, অস্বীকার করা ব্যথা। বিবেচনা করিলেন, যবক কখনই আমার অনিষ্ট করিবেন না, এইক্ষণেই আমার প্রাণরক্ষা করিয়াছেন। যবেকের সহায়তা ভিন্নও এই নিবিড় বন হইতে বাহির হইবার উপায় নাই। ক্ষণেক এইরুপ চিন্তা করিয়া উষ্ণীষ খলিয়া নিঃশব্দে যুবকের হস্তে দিলেন, নিঃশব্দে যবেক দতেজয়সিংহের নয়ন বন্ধন করিলেন। তাহার পর যবেক দলেজয়সিংহের হস্ত ধরিয়া প্রায় একক্রোশ পথ লইয়া যাইলেন, এই পথের মধ্যে দুইজনের একটী কথাও হইল না। দতজয়সিংহ কোনদিকে যাইতেছেন কিছুই জানিলেন না, কেবল বক্ষপত্রের মমরিশব্দ শুনিতে লাগিলেন, এবং একটী পৰ্বত আরোহণ করিতেছেন, ૨ઉ ઉ