পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৩৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী কষ্ট করিয়া অন্য কিছ আয় করিয়া কণ্টে সংসার নির্বাহ করিতেন। তারিণীচরণ মল্লিক নামক তাঁহার একটী খড়তুত ভাই বদ্ধমানে চাকরী করিতেন, কিন্তু এক্ষণে খড়তুত ভায়ের নিকট সহায়তা প্রত্যাশা করা ব্যথা, আপনার ভায়ের নিকট কদাচ সহায়তা পাওয়া যায়। তবে বিপদআপদের সময় তাঁহাকে অনেক ধরিয়া পড়িলে ৫ । ১০ টাকা কাজ পাইতেন, শোধ করিতে পারিলে তিনি ভাই বলিয়া সদটা ছাড়িয়া দিতেন। বিবাহের প্রায় ১৫ । ১৬ বৎসর পরে তাঁহার একটী কন্যা হয়, এতদিনের পরের সন্তান বলিয়া বিন্দবাসিনী পিতামাতার বড় আদরের মেয়ে হইল। কিন্তু অাদরে পেট ভরে না, বিন্দ গরীবের ঘরের মেয়ে, আদর ও পিতামাতার ভালবাসা ভিন্ন আর কিছ পাইল না। বিন্দর বড় জ্যেঠা তারিণী বাব যখন পজার সময় বাটীতে আসিতেন, তখন মেয়ের জন্য কেমন ঢাকাই কাপড়, কেমন হাতের নতন রকমের সোণার চুড়ি, কেমন কাণের কাণবালা আনিতেন, বিন্দর বাপমা অনেক কন্টে মেয়ের জন্য দলগাছি অতি সর সোণার বালা ও দই পায়ে দুই গাছি রপোর মল গড়াইয়া দিলেন। বিন্দর বাপের সেজন্য কিছু ধার হইল, অনেক কস্টে সে ধার শোধ করিতে পারিলেন না, একটী গর বিক্রয় করিয়া তাহা পরিশোধ করিলেন। বিন্দ জ্যেঠাইমার মেয়ের সহিত সব্বদা খেলা করিতে যাইত। বিন্দর ভাল মানুষ, কখনও সে কাহাকে রাগ করিয়া কথা বলিত না, সতরাং সেও বিন্দকে ভালবাসিত, কখন কখন সন্দেশ খাইতে খাইতে একটা ভাঙ্গিয়া দিত, কখন মেলায় অনেক পর্তুল কিনিলে একটী শোলার পুতুল দিত। বিন্দরে আনন্দের সীমা থাকিত না, বাড়ীতে আসিয়া কত হষের সহিত মাকে দেখাইত: বিন্দরে মা বিন্দকে চুম্ববন করিতেন, আর নিজের চক্ষের একবিন্দ জল মোচন করিতেন। বিন্দর জন্মের পাঁচ বৎসর পরে তাহার একটী ভগিনী হইল। বড় মেয়েটী একট কাল হইয়াছিল, ছোট মেয়ের রং পরীর মত, চক্ষ দটী কাল কাল ভ্রমরের ন্যায় সন্দের ও চঞ্চল, মাথায় সন্দের কাল চুল, লাল ঠোঁট দটীতে সদাই সন্ধার হাসি। গরীবের এ অমল্য ধনকে গরীব বাপ মা চুম্বন করিয়া তাহার সন্ধাহাসিনী নাম দিলেন। কিন্তু ভালবাসা ভিন্ন সন্ধার আর কিছর জটিল না, বরং দুইটী মেয়ে হওয়াতে বাপমার আরও কম্পট বাড়িল। ছোট মেয়ের জন্য একটা দধে চাই ; এমন সন্দের মেয়ের হাত দুখানি খালি রাখা যায় না, দুই একখানা গহনা হইলে ভাল হয়, পাড়াপড়শীর বাড়ী লইয়া যাইবার সময় একখানি ঢাকাই কাপড় পরাইয়া লইয়া গেলে ভাল । হয়। কিন্তু এ সব ইচ্ছা পরেণ হয় কোথা থেকে ? বাপমার মনে কত সাধ হয়, কিন্তু উপায় কৈ ? গরীব দুঃখীর আবার কিসের সাধ ? এইরপে বিন্দর পিতা অনেক কটে সংসার নির্বাহ করিতে লাগিলেন, বিন্দরে মাতা কটকে কট বলিয়া গ্রাহ্য না করিয়া স্বামীর সেবা ও কন্যা দটিকে লালনপালন করিতে লাগিলেন। প্রাতঃকালে সৰ্য্যোদয়ের পাবে উঠিয়া বাসন ধাইতেন, ঘর ঝাট দিতেন, উঠান পরিকার করিতেন, কন্যা দটীকে খাওয়াইতেন, স্বামীর জন্য রন্ধন করিতেন। স্বামীর ভোজনান্তে পুকুরে যাইয়া স্নান করিতেন ও জল আনিতেন। দ্বিপ্রহরে আহার করিয়া কন্যা দটীকে লইয়া সেই সন্দের বক্ষের ছায়ায় ভূমিতে কাপড় পাতিয়া সখে বিশ্রাম করিতেন। আবার বৈকালবেলা পনরায় রন্ধনাদি সংসারকায্য করিতেন। তথাপি এ সংসারে বিন্দরে মাতা অপেক্ষা কয়জন সখী ? লক্ষ লক্ষ দরিদ্র গ্রহস্থের মধ্যে বিন্দরে মাতা একজন, তাঁহার কট থাকিলেও তিনি সদাশিবের ন্যায় স্বামী পাইয়াছিলেন, হৃদয়ের মণির ন্যায় দুইটী কন্যা পাইয়াছিলেন, সমস্ত দিন পরিশ্রম ও কস্ট করিতে হইলেও তিনি সেই শান্ত সংসারে কতকটা শান্তি ভোগ করিতেন, দরিদ্রা রমণী ইহা অপেক্ষা সখি আশা করেন না। কিন্তু তাঁহার এ সুখ ও শান্তি অধিক দিন রহিল না। দারুণ বিধির বিড়ম্বনা ! সন্ধার জন্মের তিন বৎসর পরে হরিদাসের কাল হইল। হতভাগিনী সাধার মাতা তখন ললাটে করাঘাত করিয়া হৃদয়বিদারক ক্ৰন্দনধৰ্মনিতে সে ক্ষুদ্র পল্লী কাঁপাইয়া আছাড় খাইয়া পড়িলেন । ভগবান কেন এ দরিদ্রের একটী ধন কাড়িয়া লইলেন—কেন এ হতভাগিনীর একটী সখে হরণ করিলেন—এ অধিারের একটী দীপ নিৰ্বাণ করিলেন ? বিধবার আত্তনাদ শুনিয়া গ্রামের লোক জড় হইল, চাষা মজারগণ সেই পথ দিয়া যাইবার সময় একটা একট আশ্রবেষণ করিয়া গেল। তাহার পর এক বৎসর অতিবাহিত হইয়াছে। হরিদাসের যে জমি ছিল তাহা তারিণীবাবু এখন চাষ করান, বৎসরের শেষে হাত তুলিয়া যাহা দেন, বিন্দর মাতা তাহাই পান। তাহাতে ○ミb