পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী তাহাদের দধে খাওয়াইয়া বিছানা মাদর তুলিলেন এবং ঘর পরিকার করিলেন। একট বেলা হইলে দাসী বাজার হইতে মাছ তরকারি আনিল, তখন বিন্দ ঝির নিকট ছেলে দটীকে রাখিয়া পনরায় রন্ধনঘরে প্রবেশ করিলেন। বাটীতে একটী দাসী ভিন্ন আর লোক ছিল না রন্ধনকায্য দুই ভগিনীই নিৰ্বাহ করিতেন। সন্ধা নতন বাড়ীতে আসিয়া ভাঁড়ারী হইয়াছেন বড় আহসাদের সহিত ভাঁড়ার হইতে নন, তেল, মসলা বাহির করিলেন, চাল ধয়ে দিলেন, তরকারি কুটিলেন, মাছ কুটিলেন, এবং আবশ্যকীয় বাটনা বাটিয়া দিলেন। বিন্দ শীঘ্র রন্ধন আরম্ভ করিয়া দিলেন। পাঠক বুঝিয়াছেন যে হেমচন্দ্র কয়েক দিন শরতের বাটীতে থাকিয়া ভবানীপুরে একটী ক্ষমদ্র দ্বিতল বাটী ভাড়া করিয়াছিলেন। শরৎ এ অপব্যয়ের বিরুদ্ধে অনেক তক করিলেন, আপন বাটীতে হেমকে রাখিবার জন্য অনেক স্তুতি মিনতি করিলেন, কিন্তু তাঁহাতে শরতের পড়ার হানি হইবে বলিয়া হেমচন্দ্র তথায় কোনও প্রকারে রহিলেন না। শরৎ অগত্যা অনুসন্ধান করিয়া মাসে ১১ টাকা ভাড়ার একটী বাড়ী ভাড়া করিয়া দিলেন । ভবানীপুরে শরৎবাব অনেক দিন ছিলেন, তাঁহার সহিত অনেকের আলাপ ছিল, হেমচন্দ্রও তাঁহাদিগের পরিচিত হইলেন। কেহ হাইকোটে ওকালতি করেন, কেহ বড় হোঁসের বড় বাবা, কাহারও বনিয়াদি বিষয় আছে, কাহারও বিষয় সম্বন্ধে সন্দেহ, কিন্তু গাড়ীঘোড়ার আড়ম্বর আছে। কেহ নবাগত শিস্টাচারী সদ্বংশজাত হেমচন্দুের সহিত প্রকৃত সদ্ব্যবহার করিলেন, কেহ বা ঝাড় লন্ঠন পরিশোভিত জনাকীর্ণ বৈঠকখানায় দরিদ্রকে আসিতে দিয়া এবং দুই একটী সগৰব কথা কহিয়া ভদ্রাচরণ বজায় রাখিলেন, এবং নিজ বড়মানুষী প্রকটিত করিলেন। কেহ হেমচন্দ্রের কথাবাত্তা ও সদাচারে তুল্ট হইয়া শরতের সহিত হেমকে দুই একদিন আহারে নিমন্ত্ৰণ করিলেন, কেহ বা নব্য সভ্যতার সন্দের নিয়মানসোরে হেমচন্দ্রের “একোয়েন্টানস ফরম" করিতে “ভেরি হ্যাপি” হইলেন। কোন বিষয়কমে ব্যস্ত বড়লোকের কাপে টমণ্ডিত ঘরে হেমচন্দ্র অনেকক্ষণ অপেক্ষা করিয়াও সাক্ষাদমত লাভ করিতে পারিলেন না, অন্য কোন বড়লোক, তিনিও বিষয়কায্যে অতিশয় ব্যস্ত, জুড়ি করিয়া বাহির হইবার সময় ব্ৰহেমের জানালার ভিতর হইতে সহাস্য মুখচন্দ্র বাহির করিয়া সানগ্রেহ-বচনে জানাইলেন যে হেমবাবু কলিকাতায় আসিয়া ভবানীপুরে আছেন শুনিয়া, তিনি (উপরি-উক্ত বড়লোক) বড় সখী হইয়াছেন, আদ্য তিনি (উপরি-উক্ত বড়লোক) বড় “বিজি”, কিন্তু তিনি “হোপ" করেন, শীঘ্র একদিন বিশেষ আলাপসালাপ হইবে। আর যদি হেমবাব তাঁহার (উপরি-উক্ত বড়লোকের) বাগান দেখিতে মানস করেন, তবে শনিবার অপরাহ্লে আসিতে পারেন, সেখানে বড় “পাটি’ হইবে, তিনি (উপরি-উক্ত বড়লোক) হেমবাবকে “রিসিভ” করিতে বড় “হ্যাপি” হইবেন! ঘর ঘর শব্দে ব্রহেম বাহির হইয়া গেল, অশ্বক্ষরোগত কদম হেমচন্দ্রের বসে দই এক ফোঁটা লাগিল, হেমবাব সেই অমৃত-হাস্য ও অমত-বচনে বিশেষ আপ্যায়িত হইয়া ধীরে ধীরে বাড়ী গেলেন। ভবানীপুরের ভবের বাজার দেখিতে দেখিতে হেমচন্দ্র ক্রমে ক্রমে কলিকাতার বিস্তীণতর ভবের বাজারও কিছু কিছু দেখিতে পাইলেন। বাল্যকালে তিনি মনে করিতেন, কলিকাতার বড়বাজারই সব্বাপেক্ষা বহৎ ও জনাকীর্ণ, কিন্তু এক্ষণে দেখিতে পাইলেন, কলিকাতায় বড়বাজার হইতেও বড় একটী বাজার আছে, তাহাতে রাশি রাশি মাল গদামজাত আছে, সেই অপবে: মাল ক্রয় করিবার জন্য আলোকের দিকে পতঙ্গের ন্যায় বিশ্বসংসার সেই দিকে ধাবিত হইতেছে। বাল্যকালে তিনি শিশুশিক্ষায় পড়িয়াছিলেন যে গণে থাকিলে বা বিদ্যা থাকিলেই সম্মান হয়, সে বালোচিত ভ্রম তাঁহার শীঘ্রই তিরোহিত হইল, তিনি এখন দেখিলেন, সম্মানামত সের করা, মণ করা, বাজারে বিক্রয় হইতেছে, কেহ ভারি খানা দিয়া, কেহ সখের গাডেন পার্টি দিয়া, কেহ ধন দিয়া, কেহ বা পরের ধনে হস্তপ্রসারণ করিয়া, সেই অমত ক্রয় করিতেছেন, ও বড় সখে, নিমলিতাক্ষে সেই সন্ধা সেবন করিতেছেন। সন্দের সুশোভিত বৈঠকখানার ঝাড় লন্ঠন হইতে সে অমতের স্বচ্ছ বিন্দ ক্ষরিয়া পড়িতেছে, দপণ ও ছবি হইতে সে নিম্মল অমত প্রতিফলিত হইতেছে, সবণ বর্ণ সাধার সহিত সে অমৃত মিশ্রিত হইতেছে, নৰ্ত্তকীর সুললিত কন্ঠস্বরে সে অমত-প্রস্রবণের ঝঙ্কার শদিত হইতেছে! মনষ্যে মক্ষিকাগণ ঝাঁকে ঝাঁকে সে অমতের দিকে ধাইতেছে! কখন কুকের বাড়ী হইতে ঘঘর শব্দে সেই অমত নিঃসন্ত ○ & 。 y £