পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब्रटन्नञ ब्रघ्ननाबली হয়েছে লক্ষীছাড়া, মদ খায়, ঘরে থাকে না, আর তার মাও তেমনি, তা বৌয়ের দোষ কি ?” ইত্যাদি। রান্নাঘরে কোন কোন বাদ্ধা আত্মীয়াগণ বসিয়াছিলেন, কেহ বা গিন্নীর জন্য ভাত নামাইবার উদ্যোগ করিতেছিলেন, কেহ দমটো কথা কহিতে আসিয়াছিলেন, কেহ ছেলে কোলে করে কেবল একটু ঝিমাইতেছিলেন। বামীর মা ফিস ফিস করিয়া বলিলেন, “হ্যাঁ লা, ও পালকী করে করা আজ এলো? ঐ যে হন হন করে সিড়ি দিয়ে উঠে গিন্নীর কাছে গেল!” শ্যামীর মা, “তা জানিসনি, ওরা যে এক ঘর কায়েত কোন পাড়াগাঁ থেকে এসেছে, এই ভবানীপরে আছে, তা ঐ বড় যেটা দেখলি, তার স্বামী বুঝি বাবর আপিসে চাকরী করবে, ওর ছোট বোনটা বিধবা হয়েছে। গিন্নী ওদের ডেকে পাঠিয়েছিলেন।” “না জানি কেমনতর কায়েত, গায়ে দখানা গয়না নেই, লোকের বাড়ী আসবে তা পায়ে মল নেই; খালি পায়ে ভদ্রলোকের বাড়ী আসতে লজ্জা করে না ?” “তা বোন, ওরা পাড়াগাঁ থেকে এসেছে, আমাদের কলকেতার চালচোল এখনও শেখেনি ?” “তা শিখবে কবে ? দল ছেলের মা হয়েও শিখলে না ত শিখবে কবে ?” “তা গরিবের ঘরে সকলেরই কি গয়না থাকে ?” “তবে এমন গরিবকে ডাকা কেন ? আমাদের গিন্নীরও যেমন আক্কেল, তিনি যদি ভদ্র ইতর চিনবেন, তবে আমাদেরই এমন কট কেন বল ? এই ছিলেম আমার মাসতুত বোনের বাড়ী, তা সে আমায় কত যত্ন করত, দলবেলা দধে বরাদ্দ ছিল। তারা লোক চিনত। গিন্নী যদি লোক চিনবে, তবে আমার এমন দন্দেশা ? গিন্নীরই দোষ কি বল ? যেমন বাপমায়ের মেয়ে, তেমনি স্বভাবচরিত্র, টাকা হলে জাত ত আর ঘোচে না।" এইরপে বদ্ধা আপন গৌরব-নাশের আক্ষেপ ও আশ্রয়দাত্রী ও তাঁহার পিতামাতার সংখ্যাতি প্রকটিত করিতে লাগিলেন। বিন্দ ও সন্ধা সিড়ি দিয়া উঠিয়া রেল দেওয়া বারান্ডা দিয়া গিন্নীর শোবার ঘরে গেলেন। গিন্নী তেল মাখিতেছিলেন ; একজন আশ্রিতা আত্মীয়া তাঁহার চুল খলিয়া দিতেছিলেন, আর একজন বকে বেশ করিয়া তেল মালিস করিয়া দিতেছিলেন। তাঁহার বকে কেমন এক রকম ব্যথা আছে (বড় মানুষ গিন্নীদের একটা কিছু থাকেই), তা কবিরাজ বলিয়াছে রোজ স্নানের আগে এক ঘণ্টা করিয়া বেশ করে তেল মালিস করিতে। গিন্নী দেবীবাবর ন্যায় বলিষ্ঠ নহেন, তাঁহার শরীর শীণ চেহারাখানা একট রক্ষ, মেজাজটা একটা খিটখিটে; সেই বহৎ পরিবারের আত্মীয়া, দাসী, বেী, ঝি, সকলেই সে মেজাজের গণে প্রত্যহই সকালসন্ধ্যা অনুভব করিত। শুনিয়াছি দেবীবাব স্বয়ং রজনীকালে তাহার কিছু কিছ আসবাদন পাইতেন। দেবীবাব স্বয়ং বিষয় করিয়াছেন, তাঁহার আচরণটী পাববৎ নম্র ছিল, কিন্তু নতন বড় মানুষের মহিষীর ততটা নম্রতা অসম্ভব, নবাগত ধনদপ দেবীবাবর গহিণীতেই একমাত্র আধার পাইয়া দ্বিগণ ভাবে উথলিয়া উঠিয়াছিল। গিন্নী । কে গা তোমরা ? বিন্দর। আমরা তালপুকুরের বোর্সেদের বাড়ীর গো, এই কলকেতায় এসেছি। আপনি আসতে বলেছিলেন, কাজের গতিকে এতদিন আসতে পারিনি, তা আজ মনে করলেম একবার দেখা করে আসি । গিন্নী। হাঁ হাঁ বুঝেছি, তা বসো বসো। তখনকার কালে নতন লোক এলেই পাড়ার লোকদের সঙ্গে দেখা করার রীতি ছিল, তা এখন সে রীতি উঠে গেছে, এখন লোকের কোথাও যাবার বার হয় না। তা তব ভাল, তোমরা এসেছ। তালপুকুর কোথায় গা ? সেখানে ভদ্র লোকের বাস আছে ? বিন্দর। আছে বৈ কি, সেখানে তিরিশ চল্লিশ ঘর ভদ্রলোক আছে, আর অনেক ইতর লোকের ঘর আছে। ঐ বদ্ধমান জেলার নাম শুনেছেন, সেই জেলায় কাটোয়া থেকে ৮। ১o ক্রোশ পশ্চিমে তালপুকুর গ্রাম। গিন্নী। হাঁ হাঁ, কাটোয়া শুনেছি বৈ কি—ঐ আমাদের ঝিয়েরা সব সেইখান থেকে আসে। অলপ হাস্য সেই ধনাঢ্যের গহিণীর ওঠে দেখা দিল। বিন্দ চুপ করিয়া রহিলেন। ক্ষণেক পরে গহিণী বলিলেন,—ঐটী বুঝি তোমার বোন ? আহা এই কাঁচ বয়সে বিধবা হয়েছে! তা ভগবানের ইচ্ছে, সকলের কপালে কি সুখ থাকে, তা নয়, সকলের টাকা হয়, তা নয়, বিধাতা কাউকে বড় করেন, কাউকে ছোট করেন। 3)