পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী এক বিন্দন জল বা দইখানি আকের কুচি পাইত, নিদ্রা না ভাঙ্গিতে ভাঙ্গিতে সেই শরতের হস্ত হইতে পথ্য পাইত। ১০ । ১২ দিবসে সন্ধা অতিশয় ক্ষীণ হইয়া গেল, আর উঠিয়া বসিতে পারিত না, চক্ষতে ভাল দেখিতে পাইত না, মুখখানি অতিশয় শীর্ণ, কিন্তু তখনও জনরের হ্রাস নাই। প্রাতঃকালে ১০২ দাগের বড় কম হয় না, প্রত্যহ বৈকালে ১০৫ দাগ পৰ্য্যন্ত উঠে। নবীনবাব একটা চিন্তিত হইলেন, বলিলেন, শরৎ, চতুদশ দিবসে এ রোগের আরোগ্য হওয়া সম্ভব, যদি না হয়, তবে সাধার জীবনের একটা সংশয় আছে। সাধা যেরপে দাবল হইয়াছে, আর অধিক দিন এ পীড়া সহ্য করিতে পারিবে এরপে হয় না। - ত্রয়োদশ দিবসে নবীনবাব সমস্ত দিন সেই বাটীতে থাকিয়া রোগীর রোগ লক্ষ্য করিলেন। বৈকালে জর একটা কম হইল, কিন্তু সে অতি সামান্য উন্নতি, তাহা হইতে কিছু ভরসা করা যায় না। শরৎকে বলিলেন, আজ রাত্রিতে তুমি রোগীকে ভাল করিয়া দেখিও, কল্য ভোরের সময় তাপমান যন্ত্রে শরীরের কত উত্তাপ লক্ষ্য করিও । যদি ৯৮ হয়, যদি ৯৯ হয়, যদি ১০০ দাগের কম হয় তৎক্ষণাৎ পাঁচ গ্রেণ কুইনাইন দিও, ৮টার মধ্যেই আমি আসিব। যদি কাল বা পরশ্ব এ জনরের উপশম না হয়, সাধার জীবনের সংশয় আছে। শরৎ এ কথা বিন্দকে বলিলেন না, হেমকেও বলিলেন না। সন্ধ্যার সময় বাটী হইতে খাইয়া আসিলেন এবং সাধার শয্যার পাশ্বে বসিলেন; সেদিন সমস্ত রাত্রি তিনি সেই স্থান হইতে উঠিলেন না; এক মহত্তের জন্য নিদ্রায় চক্ষ মাদিত করিলেন না। উষার প্রথম আলোকচ্ছটা জানালার ভিতর দিয়া অলপ অলপ দেখা গেল। তখন সে ঘর নিঃশব্দ। হেমচন্দ্র ঘুমাইয়াছেন, বিন্দ সমস্ত রাত্রি জাগরণের পর ছেলে দুইটীর পাশে শ্যইয়া BBBBBSBB BD uS BB BBB Bu uB u u যাইতেছে। ঘরে একটী প্রদীপ জনলিতেছে, নব্বাণপ্রায় প্রদীপের স্তিমিত আলোক রোগীর শীণ শত্ৰুক মুখের উপর পড়িয়াছে। শরৎ ধীরে ধীরে উঠিলেন, ধীরে ধীরে সেই অতি শীণ বাহট আপন হস্তে ধারণ করিলেন, নাড়ী এত চঞ্চল, তিনি গণনা করিতে পারিলেন না। তখন তাপযন্ত্ৰ লইলেন, ধীরে ধীরে তাপযন্ত্র বসাইলেন, নিঃশব্দে ঘড়ির দিকে চাহিয়া গালে হাত দিয়া বসিয়া রহিলেন। তাঁহার হৃদয় জোরে আঘাত করিতেছিল। টিক টিক টিক করিয়া ঘড়ির শব্দ হইতে লাগিল, এক মিনিট, দই মিনিট, চারি মিনিট, পাঁচ মিনিট হইল; শরৎ তাপযন্ত্ৰ তুলিয়া লইলেন। প্রদীপের নিকটে গেলেন, তাঁহার হৃদয় আরও বেগে আঘাত করিতেছে, তাঁহার হাত কাঁপিতেছে। প্রদীপের স্তিমিত আলোকে প্রথমে কিছু দেখিতে পাইলেন না। হস্ত দ্বারা ললাট হইতে গচ্ছ গুচ্ছ কেশ সরাইলেন; ললাটের বেদ অপনয়ন করিলেন; নিদ্রাশন্যে চক্ষদ্বয় একবার, দুইবার মছিলেন, পুনরায় তাপযন্ত্রের দিকে দেখিলেন। দেখিয়া শিহরিয়া উঠিলেন। কিন্তু প্রদীপের আলোকে ঠিক বিশ্বাস হয় না, বোধ হয় তাঁহার দেখিতে ভ্রম হইয়াছে। ভরসায় ভর করিয়া গবাক্ষের নিকটে যাইলেন, দিবালোকে তাপযন্ত্র আবার দেখিলেন। জবর কল্য প্রাতঃকাল অপেক্ষা অধিক হইয়াছে, তাপযন্ত্র ১০৩ ডিগ্রী দেখাইতেছে! ললাটে করাঘাত করিয়া শরৎ ভূতলে পতিত হইলেন। শব্দে বিন্দ উঠিলেন। ভগিনীর নিকট গিয়া দেখিলেন, সন্ধা নিদ্রা যাইতেছে; গবাক্ষের কাছে আসিয়া দেখিলেন, শরৎবাব ভূমিতে শুইয়া আছেন! ভাবিলেন, আহা শরৎবাব রাত্রি জাগিয়া ক্লাস্ত হইয়াছেন, মাটীতে শুইয়াই ঘনমাইয়া পড়িয়াছেন; আহা আমাদের জন্য কত কটই সহ্য করিতেছেন। শরৎ কথা কহিলেন না, তাঁহার হৃদয়ে যে ভীষণ ব্যথা পাইয়াছিলেন, কেন বিন্দকে সে ব্যথা দিবেন ? আর এক সপ্তাহ জর রহিল। তখন সন্ধা এত দন্বেল হইয়া গেল যে এক পাশ হইতে অন্য পাশ ফিরিতে পারিত না, মাথা তুলিয়া জল খাইতে পারিত না, কণ্টে অদ্ধাসফট স্বরে কখন এক আধটী কথা কহিত, খেংরা কাঠির ন্যায় অঙ্গলেীগুলি একট একটা নাড়িত। সাধার মাখের দিকে চাওয়া যাইত না, অথবা নৈরাশ্যে জ্ঞান হারাইয়া নিশ্চেন্ট পত্তেলিকার ন্যায় বসিয়া শরৎ সেই মুখের দিকে স্নমস্ত রাত্রি চাইয়া থাকিত। গরিবের ঘরের মেয়েট শৈশবে অন্নবস্ত্রের কন্টেও ○ abf