পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী মুখের দিকে চাহিয়া থাকিত, অথবা ক্লান্ত হইয়া সেই মধর হৃদয়ে মস্তক স্থাপন করিত। যত্নের সহিত শরতেরও স্নেহ বাড়িতে লাগিল, তিনি বালিকার ক্ষীণ বাহলতা স্বহস্তে ধারণ করিয়া বালিকার মস্তক আপন বক্ষে স্থাপন করিয়া শান্তিলাভ করিতেন। একদিন উভয়ে এইরুপে ছাদে বসিয়া আছেন, এমন সময়ে হেমচন্দ্র ছাদে আসিলেন ও শরৎকে বলিলেন,—শরৎ, আজ চন্দ্রনাথবাব আমাদের নিমন্ত্ৰণ করিয়াছেন, যাবে না ? শরৎ। হাঁ, সে কথা আমি ভুলিয়া গিয়াছিলাম। আমার কোথাও যাইতে রাচি নাই, না গেলে হয় না ? হেম । না, সাধার পীড়ার সময় চন্দ্রবাব ও নবীনবাব আমাদের বাড়ীতে থাকিতেন, তাঁহাদের বাড়ী না গেলেই নয়। আইস, এইক্ষণই যাইতে হইবে। শরৎ ও সন্ধা উঠিলেন। হেম সন্ধাকে ধরিয়া আস্তে আস্তে সিড়ি নামাইলেন, তাহাকে ঘরে শয়ন করাইয়া উভয়ে বাটী হইতে বাহির হইলেন। পথে হেম বলিলেন,—শরৎ, এই পাঁড়ায় তুমি আমাদের জন্য যাহা করিয়াছ, সে ঋণ জীবনে আমি পরিশোধ করিতে পারিব না। কিন্তু এই কারণে তোমার পড়াশনার অতিশয় ক্ষতি হইয়াছে। প্রায় মাসাবধি কালেজে যাও নাই, এক্ষণও তোমার ভাল পড়া হইতেছে না। একটা মন দিয়া পড়, তোমার পরীক্ষার বড় বিলম্বব নাই। শরৎ ক্ষণেক চুপ করিয়া রহিলেন, পরে বলিলেন,—হী, আর অল্পই সময় আছে, এখন একট মন দিয়া লেখাপড়া আবশ্যক। সন্ধা এখন ভাল হইয়াছে, কিন্তু বিন্দদিদিকে বলিবেন, যখন অবকাশ হইবে, ছাদে লইয়া গিয়া প্রত্যহ গল্প করিয়া যেন তিনি সন্ধার মনটী প্রফুল্ল রাখেন। নবীনবাব বলিয়াছেন, সন্ধার মন প্রফুল্ল থাকিলে শীঘ্র শরীরও পটে হইবে . এইরুপ কথা কহিতে কহিতে উভয়ে চন্দ্রনাথবাবরে বাসায় পাহছিলেন । নবীনবাবরে জ্যেষ্ঠভ্রাতা চন্দ্রনাথবাব ভবানীপুরের মধ্যে একজন সযোগ্য সম্প্রান্ত কায়স্থ। তাহার বয়স ত্রিংশৎ বৎসরের বড় অধিক হয় নাই; তিনি কৃতবিদ্য, সৎকায্যে উৎসাহী, এবং এই বয়সেই একজন হাইকোটের গণ্য উকীল হইয়াছিলেন। তিনি সবে বন মিউনিসিপালিটীর একজন মাননীয় সভ্য ছিলেন, এবং সববের উন্নতির জন্য যথেস্ট যত্ন করিতেন। তাঁহার বাড়ী বৃহৎ নহে, কিন্তু পরিস্কার এবং সন্দেররাপে নিমিত ও রক্ষিত। বাহিরে দাইটী একতালা বৈঠকখানা ছিল, বড়টীতে চন্দ্রবাবরে বৈঠকখানা—টেবিল, চৌকি, পুস্তক পরিপািণ দুইটী বকেশেলপ, কয়েকখানি সরচিসম্মত ছবি। সেজে “মেটিং” করা এবং সমস্ত ঘর পরিকার ও পরিচ্ছন্ন। দেখিলেই বোধ হয়, কোন কৃতবিদ্য কাৰ্য্যদক্ষ কাৰ্য্যপ্রিয় যুবকের কাৰ্য্যস্থান, পরিকার ও সশস্ত্ৰখল । টেবিলের উপর দুইটী সামাদানে বাতি জনলিতেছে; চন্দ্রবাবু, নবীন, হেম ও শরৎ অনেকক্ষণ বসিয়া গল্প করিতে লাগিলেন। চন্দ্রবাব স্বভাবতঃ গম্ভীর ও অলপভাষী, কিন্তু অতিশয় ভদ্র, সাধার পীড়ার সময় তিনি যথাসাধ্য হেমের সহায়তা করিয়াছিলেন এবং সব্বদাই ভদ্রোচিত কথা দ্বারা হেমকে তুষ্ট রাখিতেন। 轟 অনেকক্ষণ কথাবাত্তার পর হেমচন্দ্র বলিলেন, কলিকাতায় আসিয়া আপনাদিগের ন্যায় কৃতবিদা লোকদিগের সহিত আলাপ করিয়া বড় প্রীত হইলাম। আমার চিরকালই পল্লীগ্রামে বাস, পল্লীগ্রামে কৃতবিদ্য লোক বড় অলপ, আপনাদিগের কায্যে যেরপে উৎসাহ, তাহাও অলপ দেখিতে পাই, আপনাদিগের ন্যায় দেশহিতৈষিতাও অলপ দেখিতে পাই। চন্দ্র। হেমবাবা, দেশহিতৈষিতা কেবল মুখে। অথবা হৃদয়েও যদি সেরাপ বাঞ্ছা থাকে, তাহাও কায্যে পরিণত হয় না। আমরা ক্ষুদ্র লোক, দেশের জন্য কি করিব। সে ক্ষমতা কৈ ? তাহার উপযুক্ত স্থান, কালই বা কৈ ? হেম। যাহার যেটুকু ক্ষমতা, সে সেইটুকু করিলেই অনেক হয়। শুনিয়াছি, আপনি সবেবান কমিটির সভ্য হইয়া অনেক কাজকম করিতেছেন, তাহার জন্য অনেক প্রশংসা পাইয়াছেন। চন্দ্র । কাজ কি ? কত্ত্বপক্ষীয়েরা যাহা বলেন, তাহাই হয়, আমরাও তাহাই নিৰ্বাহ করি • কলিকাতার অধিবাসিগণ সভ্য নিৰ্বাচন করিবার ক্ষমতা পাইয়াছে, লর্ড রিপন ভারতবষের সমস্ত প্রধান নগরীতে সেই ক্ষমতা দিয়া চিরস্মরণীয় হইবেন; আমরাও সেই ক্ষমতা পাইবার চেস্টা করিতেছি, পাই কিনা সন্দেহ। () げO