পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী এরপে আমার বোধ হয় না। আমি পল্লীগ্রামে অনেক হাটে গিয়াছি, অনেক গরিব লোকের বাড়ী গিয়াছি। আমার মনে আছে, পাবে সকল ঘরেই চরকা চলিত, এক্ষণে গ্রামে একখানা চরকা দেখা যায় না। তাহার কারণ, উৎকৃষ্ট বিলাতী সতো অতি অলপ মনুল্যে বিক্রয় হয়। হাটে যে দেশী কাপড় ১০ টাকায় বিক্রয় হয়, সেইরুপ বিলাতী কাপড় w০ আনায় বিক্রয় হয়। তাহাতে সাধারণ লোকের বিশেষ উপকার হইয়াছে, তাহারা অলপমল্যে ভাল কাপড় পরিতে পারে, কিন্তু তাঁতীরা হাতে কাজ করিয়া কখনও কলের কাজের সঙ্গে পারিবে তাহা বোধ হয় না। নবীন। আমিও তাহাই বলিতেছি, সুসভ্য জগতে হাতের কাজ উঠিয়া যাইতেছে, এক্ষণে কলে কাজ করা ভিন্ন উপায় নাই। তবে আমরা বঙ্গদেশ এরাপ কলে আচ্ছন্ন করি না কেন ? আমাদের কি সেটকুে উৎসাহ নাই, সেটুকু বিদ্যাবৃদ্ধি নাই ? চন্দ্র। নবীন, সে বিদ্যাবৃদ্ধির অভাব নহে, সে অথের অভাব। বহু অর্থ না হইলে একটী কল চলে না। আর আমাদের একটী শিক্ষার অভাব আছে, আমরা পাঁচজনে মিলিয়া এখনও কাজ করিতে শিখি নাই, এই শিক্ষাই সভ্যতার প্রধান সহায়। দেখ, বিদ্যায় আমাদের দেশে অনেকে উন্নত। বৃদ্ধির অভাব নাই, কিন্তু পাঁচজনে মিলিয়া কাজ করা একটী স্বতন্ত্র শিক্ষা, সেটী আমরা এখনও শিখি নাই। পাঁচজন বিদ্বান একত্রে মিলিয়া একটী মহৎ চেন্টা করিতেছেন এরপে দেখা যায় না, পাঁচজন রাজনীতিজ্ঞ ঐক্য সাধন করিতে পারেন না, পাঁচজন ধনী মিলিয়া বাণিজ্য করেন এরুপ বিরল। সকলেই সব সব প্রধান। কিন্তু আমি ভরসা করি, অন্য শিক্ষার সঙ্গে এ শিক্ষাও আমরা লাভ ফরিব, এ শিক্ষা লাভ না করিলে সভ্যতার আশা নাই , এইরুপ কথোপকথন হইতে হইতে ভূত্য আসিয়া বলিল, আহার প্রস্তুত হইয়াছে, তখন সকলেই বাড়ীর ভিতর আহার করিতে গেলেন। আহারাদি সমাপন হইলে পুনরায় সকলে বাহিরে আসিলেন। আর ক্ষণেক কথাবাত্ত কহিয়া হেম ও শরৎ বিদায় হইলেন। শরৎ আপনার বাটীতে প্রবেশ করিলেন, হেম চন্দ্রনাথবাবর কথাগুলি অনেকক্ষণ চিন্তা করিতে করিতে অনেক দরে যাইয়া পড়িলেন। পথে সন্দের চন্দ্রালোক পড়িয়াছে, নিশার বায় শীতল মনোহর, হেমচন্দ্র বেড়াইতে বেড়াইতে বালীগঞ্জের দিকে গিয়া পড়িলেন। রাত্রি প্রায় ১১টার সময় তিনি ফিরিয়া আসিতেছিলেন ; পশচাৎ হইতে একটি শকটের শব্দ পাইলেন। ফিরিয়া দেখিলেন, দুইটী উজদল আলোকষাক্ত একখানা বড় গাড়ী তীব্র বেগে আসিতেছে, বলবান শ্বেতবণ অশ্বদ্বয় যেন পৃথিবী সপশ না করিয়া উড়িয়া আসিতেছে, ফেটিন ঘঘর শব্দে দরিদ্র হেমের পাশ দিয়া যাইয়া একটী বাগানের ফটকের ভিতর প্রবেশ করিল। তাহার পর আবার একটী জড়ি আসিল, দুইটী কৃষ্ণবর্ণ অশ্ব এক বৃহৎ লেণ্ড লইয়া বিদ্যুৎ-বেগে সেই ফটকে প্রবেশ করিল। প্রবেশ করিবার সময় নারীকণ্ঠ-সম্ভত খল খল হাস্যধৰনি হেমের শ্রতিপথে পাহছিল। * হেম একটা উৎসকে হইলেন, এবং সবিশেষ দেখিবার জন্য বাগানের ফটকের কাছে আসিলেন। দেখিলেন, ফটকে রামসিংহ, ফতেসিংহ, বলবন্তসিংহ প্রভৃতি শ্মশ্রীধারী দ্বারবানগণ সগবে পদচারণ করিতেছে। বাগানের ভিতর অনেক প্রস্তরমত্তি দুই একটী সন্দের জলাশয়। তাহার পর একটী উন্নত অট্টালিকা। আটালিকা ইন্দ্রপরীতুল্য, তাহার প্রতি গবাক্ষ হইতে উক্তজবল আলোকরাশি বহিভূত হইতেছে, এবং মধ্যে মধ্যে বাদ্যধানি ও নারী-কন্ঠ-সম্পভূত গীতধানি গগনপথে উত্থিত হইতেছে । হেম ধীরে ধীরে একজন দ্বারবানকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “এ বাগান কার বাপ ?” দ্বারবান দাড়ীতে একবার মোচড় দিয়া গোঁপে একবার তা দিয়া বলিল, “এ বাগান তুমি জানে না, মলেকে কা সব বড় বড় লোক জানে, তুমি জানে না ? তুমি কি নয়া আদমী আছে ?” হেম। হাঁ বাপ, আমি নতেন মানুষ, এদিকে কখনও আসি নাই, তাই জিজ্ঞেসা করিতেছি। দ্বারবান । সোই হোবে। এখানে সব কোই এ বাগান জানে । কলকাত্তাকা যেত্তা বড়া বড়া বাঙ্গালী আছে, জমিদার, উকীল, কেসিলি, সব এ বাগানে আসে, সব কোই এ বাগান জানে। হেম। তা হবে বাপ, আমি গরিব লোক, আমি সে সব কথা কেমন করে জানব ? ○bミ