পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

, সংসার হেম। আমার ভরসা হল না, তুমি একবার যাও, তোমার যা কত্তব্য তা কর, তার পর ভগবান আছেন । তাহার পর দিন খাওয়াদাওয়ার পর ছেলে দটীকে সাধার কাছে রাখিয়া বিন্দ একটী পালকী করিয়া উমাকে দেখিতে গেলেন। সন্ধাও উমাদিদির সঙ্গে দেখা করিতে যাইবে বলিয়া উৎসক হইল, কিন্তু বিন্দ বলিলেন, “আজ নয় বোন, আর একদিন যদি পারি তোমাকে নিয়ে যাব।” প্রশস্ত শয়নকক্ষে গিয়া বিন্দ দেখিলেন, উমা একা বসিয়া একটী চুলের দড়ী বিনাইতেছে, দাস দাসী সকলে নীচে আছে। উমাকে দেখিয়া বিন্দ শিহরিয়া উঠিলেন। এই কি সেই তালপুকুরের উমা, যাহার সৌন্দয্যের কথা দিকবিদিক প্রচার হইয়াছিল ? মাখের রং কালো হইয়া গিয়াছে, চক্ষে কালী পড়িয়াছে, কণ্ঠার হাড় দটো বাহির হইয়া পড়িয়াছে, বাহ অতিশয় শীণ, শরীরখানি দড়ীর মত হইয়া গিয়াছে। চারিমাস পাবে বিন্দ যাহাকে প্রথম যৌবনের লাবণ্যে বিভূষিতা দেখিয়াছিলেন, আজ তাহাকে ত্রিংশৎ বৎসরের রোগক্লিস্টা নারীর ন্যায় বোধ হইতেছে। কঠোর হাড়ের উপর দিয়া তারাহার লম্বমান রহিয়াছে, বহমতুল্য বালা দাগাছী সে শীর্ণ হস্তে ঢল ঢলা করিতেছে। উমা পদশব্দ শুনিয়া সেই লান চক্ষর সহিত পিছনে ফিরিয়া দেখিলেন। বিন্দকে দেখিয়াই চুলের দড়ী রাখিয়া উঠিলেন। লান বদনে ধীরে ধীরে কহিলেন, “আর বিন্দ দিদি, -তুমি এসেছ, আমি কতদিন তোমার কথা মনে করেছি। তুমি ভাল আছ ? ছেলেরা ভাল আছে ?” সে ধীর কথাগুলি শুনিয়াই তীক্ষাবৃদ্ধি বিন্দ উমার হৃদয়ের অবস্থা ও তাহার চারি মাসের ইতিহাস অনুভব করিলেন। যত্নে হৃদয়ের উদ্বেগ সঙ্গোপন করিয়া উমার হাত দটী ধরিয়া ধীরে ধীরে উত্তর করিলেন,—হাঁ বোন, আমরা সকলে ভাল আছি, সাধার বড় জবর হয়েছিল, তা সেও ভাল হয়েছে। তুমি কেমন আছ উমা ? তোমাকে একটা কাহিল দেখছি কেন বোন ? উমা। ও কিছ নয় বিন্দদিদি, আমারও কলকেতায় এসে আমাশা হয়েছিল, তা ভাল হয়েছি, এখন একটা কাশি আছে, বোধ হয় কলকেতার জল আমাদের সয় না, আমরা তালপুকুরেই ভাল থাকি। সেই নীরস ওঠে একট ক্ষীণ হাস্য লক্ষিত হইল। তালপুকুরে আবার যেতে ইচ্ছে করে ? আমরা এই পাজার পর যাব, তুমি যাবে কি ? উমা। তা সে ত আমার ইচ্ছে নয় বিন্দ দিদি, বাব কি তাতে মত করবেন ? বোধ হয় না। বিন্দ। তবে তোমাকে এখানে দেখবে শনবে কে ? আমরা রইলাম অনেক দারে, আর ছেলেদের ফেলেও ত সব্বদা আসতে পারি না। তোমারও কাশি করেছে, রোগা হয়ে গেছ, তোমাকে দেখে কে ? উমা। কেন বিন্দ দিদি, রোজ ডাক্তার আসে, বাব একজন ভাল ডাক্তার রাখিয়ে দিয়েছেন, সে ওষুধ দিচ্ছে, আমি এখন ওষুধ খাই। বিন্দ। তা যেন হোল, কিন্তু তব আপনার লোক না হলে কি কেউ দেখতে শনতে পারে ? আর তোমার অসুখ হলে সংসারই দেখে কে ? তা জ্যেঠাইমাকে কেন লেখ না, তিনি এসে দিন কতক থাকুন। আবার তুমি একটা সারলে তিনি চলে যাবেন, তুমিও না হয় দিন কতক গিয়ে তালপুকুরে থাকবে। উমা। না, মাকে আর কেন আনান ? আমার ব্যারামের বেশ চিকিৎসা হচ্ছে, আর সংসারে অনেক চাকর দাসী আছে, কিছল অসুবিধা হচ্ছে না ত, মাকে কেন ডাকান ? বিন্দ। না, তব বোধ হয় তেমন যত্ন হয় না, মায়ে যেমন যত্ন করে, তেমন কি আর কেউ পারে, হাজার হোক মার প্রাণ। তা ধনঞ্জয়বাব তোমাকে যত্নটত্ব করেন ত ? অতি ক্ষীণ স্বরে উমা উত্তর করিলেন–হাঁ, তা আমার যখন যা আবশ্যক, তখনই পাই, কিছরই অভাব নেই। যত্ন করেন বৈ কি। তীক্ষাবৃদ্ধি বিন্দ দেখিলেন, অভিমানিনী উমা আপনার প্রকৃত যাতনার কথা কহিতে চাহে না; উমার ইহজগতে সখ ও সখের আশা ভস্মসাৎ হইয়াছে। বিন্দই বা সে কথা কিরাপে জিজ্ঞাসা করেন ? ক্ষণেক চিন্তা করিয়া কহিলেন-না উমা, আমার বোধ হয় জোঠাইমা এখানে ෆ9 දෑ