পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংসার বিশেষ বদ্ধমান কালেক্টরির সেরেস্তাদারি খালি হইবার সম্ভাবনা আছে, সতরাং উৎ তারিণীবাবর জীবন উদ্দেশ্যশন্য নহে। και Γ και সাহী শরতের মাতা সাশ্রনয়নে বধ সন্ধাকে ঘরে আনিয়া বদ্ধ বয়সে শান্তিলাভ করিলেন। বিবাহটা কলিকাতায়ই হইয়াছিল, কেহ বিবাহে আসিলেন, কেহ বা আসিলেন না, কিন্তু কাজটা তজজন্য বন্ধ রহিল না। যাঁহার কায্যে ব্ৰতী হইয়াছিলেন, তাঁহারাও বিশেষ ক্ষুব্ধ হইলেন না। শান্তপ্রকৃতি দেবীপ্রসন্নবাব একবার আসিবেন অসিবেন মনে করিয়াছিলেন, কিন্তু একবার বাড়ীর ভিতরে সে কথাটা উথাপন করায় বিশেষ হিতকর উপদেশ প্রাপ্ত হইলেন, তাহার পর আর আসিবার কথাও কহিলেন না। পাড়ার দলপতি, সমাজপতি ও ব্রাহ্মণ পণ্ডিতগণ একটা খবে হুলস্থুল করিলেন, খুব গণ্ডগোল করিলেন, কাজটা বাধা দিবারও বিশেষ চেষ্টা করিলেন, কিন্তু সে কাল গিয়াছে, সেরাপ বাধা দেওয়ায় এক্ষণে লোকের গুণাগণে প্রকাশ পায়, কাজ বন্ধ থাকে না। চন্দ্রনাথ সমস্ত ভবানীপুরের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের সহিত সেই বিবাহে নিমন্ত্রণ খাইতে আসিলেন, কলিকাতার অনেক ভদ্রলোক তথায় আসিলেন; আনন্দের সহিত সে শুভকায্য নিবিবাঘের সম্পন্ন হইল। পাড়ার সব্বশাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতগণ বিবাহ-সমাজে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের দলের কোন কোন পণ্ডিত আসিবেন বলিয়া সে দিকে বড় ঘোষিলেন না। পাড়ার দেশহিতৈষী আযাসন্তানগণ, যাঁহারা এই অনায্য কাযে বাধা দিবার জন্য ঢ়িল ছড়িতে আসিয়াছিলেন, তাহারা একজন অনায্য পলিশের সাজজনের বিকৃত মুখ দেখিয়া অচিরে (ঢিল পকেটে রাখিয়া) তথা হইতে অদশ্য হইলেন! শরৎ ও হেম পল্লীগ্রামে আসিলে গ্রামস্থ লোকে প্রথমে তাঁহাদের সহিত আহার ব্যবহার করিলেন না। কিন্তু তারিণীবাবর সন্ত্রীর অনেক অনুরোধে তারিণীবাব শেষে সকলকে ডাকাইয়া একটা মীমাংসা করিয়া দলেন। মীমাংসা হইল যে, শরৎ প্রায়শিচত্ত করবে। কিন্তু শরৎ কলেজের ছেলে, বলিলেন,—আমি যে কাৰ্য্যটী করিয়াছি তাহা পাপ বলিয়া মনে করি না, ইহার প্রায়শিচত্ত করিব না। শেষে শরতের মাতা একদিন ব্রাহ্মণ খাওয়াইয়া দিলেন। তারিণীবাব কিছু রসিক লোক ছিলেন, হাসিয়া শরৎবাবকে বলিলেন,—ওহে বাবন, তোমরা বঝে না, বটির জল যে দিক দিয়াই যাক, শেষকালে গিয়া নদীতে পড়িবেই পড়িবে। তোমরা বিধবাই বিয়ে কর আর ঘরের বেীকেই বার করে নিয়ে যাও, বামনের পেটে কিছ পড়িলেই সব চুকিয়া যায়। এই আমাদের সমাজ হইয়াছে, তা তোমরা আপত্তি করলেই কি হইবে ? শরৎ উত্তর করিলেন, এই রুপ সমাজ হইয়াছে বলিয়াই সংস্কার অবশ্যম্ভাবী, ন্যায় অন্যায়ের বিচার না থাকিলে সে সমাজও থাকে না । সনাতনের সত্ৰী অনেকদিন বাড়ীতে বসিয়া বসিয়া ফ'ফিয়া ফুফিয়া কাঁদিত। বলিত,— আমি তখনই বলেছিন গো, কলকেতায় যেও না, কলকেতায় গেলে জাত ধৰ্ম্মম থাকে না। ওমা সোণার সংসার কি হলো গা ? আহা, আমার সন্ধাদিদি, আমার চিনিপাতা দৈ খেতে বড় ভালবাসত গো, ওমা তার মনে এত ছিল, কে জানে বল ? ও মা তখনই বলেছিন গো, কালেজের ছেলে জেস্ত মানুষের গলায় ছরি দেয়; ও মা তাই কল্লে গা ? ইত্যাদি, ইত্যাদি। সনাতনের গহিণী মনে মনে সন্ধাকে অনেক তিরস্কার করিত, কিন্তু মায়া কাটাতে পারিল না, আবার লকোইয়া লুকাইয়া চিনিপাতা দৈ শরৎবাবরে বাড়ী লইয়া যাইত। ক্রমে উভয় পক্ষের মধ্যে পৰবৰ্বৎ সস্তাব স্থাপিত হইল। শরতের মাতা পাববং ধৰ্ম্ম কম্মে সমস্ত দিন মন দিতেন, সংসারের কিছ দেখিতেন না। কালীতারা সংসারের গহিণী, এত দিন পর জীবনের শান্তি কাহাকে বলে তিনি জানিতে পারিলেন। তিনি ভাঁড়ার রাখিতেন, রন্ধনাদি করিতেন, সমস্ত গহটী পরিপাটী রাখিতেন, সংসার চালাইতেন। সন্ধা শরতের মাতাকে ভক্তিভাবে পুজা করিত, কালীদিদিকে স্নেহ করত, কালীদিদি যাহা বলিত, তাহা করিয়া পরম আনন্দ লাভ করিত। ঘর ঝাঁট দিত, উঠান ঝাঁট দিত, পাকুর হইতে জল আনিত, বাটনা বাটিত, কুটনো কুটিত, দুধ জনাল দিত, আর পুকুরে যাইয়া বাসন মাজিতে বড় ভালবাসিত। পর্কুেরধারে অবি গাছ ছিল, কাঁঠাল গাছ ছিল, অন্যান্য ফলের গাছ ছিল, সন্ধা সেইখানেও ঘুরিত, যে ফলটী পাকিতু, কালীদিদির কাছে আনিয়া দিত। একদিন সন্ধ্যার সময় সন্ধা সেই গাছগুলির মধ্যে দাঁড়াইয়া আছে, কি একটা মনে ভাবিতেছে, এমন সময়ে শরৎ পশ্চাৎ হইতে আসিয়া বলিল,—কি ভাবিতেছ ? 8ミを