পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী কে না জানে ? তবে বংশরক্ষা ধৰ্ম্মসঙ্গত কাজ, সেই জন্য একটা কট স্বীকার করন। তা আপনি বলিয়া এ কষ্ট স্বীকার করিতেছেন, সকলে কি এরুপ করে ? (ঘরের কোণে একটা পাড়ার দন্টে ছেলে বসিয়াছিল, তারিণীবাবরে দ্বিতীয় দারপরিগ্রহরপে কষ্টস্বীকারের কথাটা শুনিয়া হাসি সম্বরণ করিতে না পারিয়া ঘর হইতে ছটিয়া পলাইল। ছোঁড়াটা নিতান্তই দলেট!) তারিণীবাব। আর কি জান ভায়া, এই দুইটা ভাইঝিকে হাতে করিয়া মানুষ করিয়াছি, তাদেরও কিছ দিয়ে যাব মনে করিয়াছিলাম। তবে আজকালের ছেলেমেয়েরা সবই বেয়াড়া, ধম্মপথে ত কেহ চলে না। বন্ধগণ। সে কথা আর বলেন কেন ? আপনি ঐ বিন্দবাসিনীর জন্য আর সাধার জন্য যা করিয়াছেন, আমরা কি আর তাহা দেখি নাই ? সে ত সেদিনকার কথা। আপনি না থাকিলে দটো অনাথা মেয়েকে খাওয়াত কে ? পরাত কে ? মানুষ করিত কে ? আপনার দয়ার হৃদয়, সেই জন্য এত করিলেন, সকলে কি এত করে ? তা সেই মেয়ে দুইটা কি নারী না পিশাচী ? এমন দয়াবান গরের কথা না শুনিয়া, ধমে জলাঞ্জলি দিয়া, কি না বিধবাবিবাহ! ছিঃ! ছি:! ছি ! তারিণীবাবন, তাদের আর নাম করিবেন না, পাপিঠাগুলোর নাম করিলেও পাপ হয়। আপনি নিতান্ত অমায়িক, তাই তাহাকে এ গ্রামে থাকিতে দিয়াছেন, অন্যে হইলে তাহাদের মাথা মড়াইয়া মাথায় ঘোল ঢালিয়া গ্রাম হইতে তাড়াইয়া দিত। তারিণীবাব। আর কি জান ভায়া,—মনের কথা তোমাদের খালিয়া বলি, তোমাদের না বলিলে কাহাকে বলিব ? দিন দিন গৃহিণীর শরীরটা বড়ই অবসন্ন হইয়া পড়িতেছে, তাঁহাকেও একজন দেখিবার শনিবার লোক চাই। তা আমি ত সব্বদা বদ্ধমানে থাকি, সব্বদা দেখিতে পারি না, অলপবয়স্কা আপনার লোক একজন ঘরে থাকিলে আমার গহিণীরও পরিচয্যা করিতে পারে, গহিণীর উপযুক্ত সেবা শশ্রেষা হয়, এই জন্যই আমি এ কায্যে মত দিতেছি,–নচেৎ আমার এ বয়সে দারপরিগ্রহে একেবারেই মন নাই। এখন বদ্ধ হইতে চলিলাম, এখন পরমাত্মিক বিষয়েই মন দেওয়া শ্রেয়ঃ । বন্ধগণ। তা সে কথা কি আর বলিতে হয় ? আপনার নিসপহে সদয় স্বভাব কি আমরা জানি না ? আপনি যেরপে গহিণীর প্রতি যত্ন করেন, আজকাল কয়জন সেরাপ করে ? শাস্ত্র বলে, নারী পত্রসন্তান প্রসব না করিলে পরিত্যাজ্যা—অথাৎ তাহার মাথা মড়াইয়া, ঝাঁটা মারিয়া বাজারে বাহির করিয়া দিবে। তবে যে আপনি এতদিন তাঁহাকে সযত্নে গহে রাখিয়াছেন, খাওয়াচ্ছেন, পরাচ্ছেন, এ আপনার দয়া। এক্ষণে যে তাঁহার পরিচয্যা করিবার বিধান করিতেছেন, সেও আপনার দয়া । পরামর্শ অনেকক্ষণ চলিতে লাগিল। পরামশে কি ঠিক হইল, তাহা বলা বাহুল্য। কমকত্তর্ণ যখন মত স্থির করিয়াই গ্রামে আসিলেন, তখন পরামর্শটা বিড়ম্ববনা মাত্র। তারিণীবাবরে বাড়ীতে জ্ঞাতি-রমণী যাঁহারা বাস করিতেন, তাঁহারা সব্বদা উমার মার শশ্রেষা করিতেন। বাহিরে বৈঠকখানায় যে কথা হইয়াছিল, তাহা তাঁহাদের অগোচরে রহিল না এবং তাঁহারাও অবিলম্বেব নানা অলঙ্কার সহ সে কথাটি উমার মার কানে তুলিলেন। রোগক্লিটো উমার মা এক বিন্দ চক্ষর জল মোচন করিলেন। বলিলেন,—যখন উমাকে হারাইয়াছি, তখন এসংসারে সমস্তই হারাইয়াছি, সংসারে আমার আর সুখ নাই। বাবরে যদি রচি হয়, দ্বিতীয় সংসার করন, ভরসা করি তিনি দ্বিতীয় সংসারে সখী হইবেন। তৃতীয় পরিচ্ছেদ : বিবাহের পাত্রী তালপুকুরের মিত্রদের আগে ভাল অবস্থা ছিল, এখন অবনতি। তালকে যাহা ছিল, তাহা অনেক দিনই গিয়াছে; দুই একটা জমাজমী ছিল, তাহার দ্বারা মিত্রমহাশয় কোনও প্রকারে সংসার চালাইতেন। যে বৎসর উমাতারার মৃত্যু হয়, সেই বৎসরই অনাথা বিধবা ও দুইটী সস্তান রাখিয়া মিত্রমহাশয় পরলোক গমন করেন। একটী পত্রসস্তান, নাম গোকুলচন্দ্র, অপরটী কন্যা সস্তান, নাম গোপবালা । মিত্রমহাশয়ের মৃত্যুতে অনাথা বিধবা ও সস্তান দটী বড়ই কণ্টে পড়িল, এবং তাহাদিগের 8○○