পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

जratख* উহারা ঘন ঘন আসা যাওয়া করিলে আমাদের নিন্দা হয়।” যে নম্নমুখী দরিদ্র বালিকা নগ্নাবস্থায় উঠানে সেদিন খেলা করিতে আসিত, আর একটী সন্দেশের জন্য লালায়িত হইত, সে এখন বড় ঘরের গহিণী, সম্পকে গরম! তাহার এই কথা শুনিয়া বিন্দ গোপনে হাসিলেন, জ্যেঠাইমার বাড়ী যাওয়া-আসা কতকটা বন্ধ করিলেন। উমার মার একটী পুরাতন দাসী ছিল, সে শশ্রেষা করিত। বড় সতীনের প্রতি দাসীর এত মায়া দেখিয়া নববধ সে দাসীর প্রতি বিরক্ত হইলেন, অভিমানে সন্দের চক্ষে জল আনিয়া লাল ঠোঁট ফলাইয়া কত্তার কাছে লাগাইলেন,--“আমার ঘর-সংসারের কায চলে না, আমি খাটিয়া খাটিয়া হাড় কালি করিতেছি, আর দিদি গিদে ঠেসান দিয়া শুইয়া থাকেন, তাঁহার দাসী না হইলে চলে না। তা দিদিকে নিয়েই থাক, দিদি সংসার চালান, আমি বাপের বাড়ী চলিলাম।” বলা বাহুল্য, পরাতন দাসী সেই দিনই বিদায় হইল। উমার মার মুখে জল দেয় এমন একজন লোক রহিল না। পড়শীর লোক সব্বদাই উমার মার সহিত দেখাসাক্ষাৎ করিতে আসিত, ছোটমার মেজাজ ও ভাবগতিক দেখিয়া তাহারাও আসা প্রায় বন্ধ করিল। উমার মার কাপড়চোপড় ও পজা-আচ্চার খরচের জন্য তারিণীবাব আলাদা কিছু টাকা মাসে মাসে দিতেন, নববধরে চক্ষে জল দেখিয়া তাহাও বন্ধ করিলেন। কিন্তু এত করিয়াও তারিণীবাব নববধরে মন পাইলেন না। সন্দেরী গোপবালা স্বামীর নিকট সব্বদাই বিমষ, সব্বদাই অভিমানিনী। যাবতী নারীর অভিমান-অস্ত্রের প্রভাব গোপবালা জানিতেন, বৃদ্ধিমতী সংযোগ পাইয়া এখন ধনকে সেই অস্ত্র জড়িলেন । বন্ধ দেখিলেন,—বদ্ধমানে সাহেবদের চাকুরী করা অপেক্ষা তরণী ভাৰ্য্যার পরিচয্যা বিষম কায ! সে কায্যে বদ্ধ হাবড়ুব খাইতে লাগিলেন, তব ত তরণীর মন উঠে না, মান ভাঙ্গে না ! নতন বস্ত্র নতন অলঙ্কার, নানা প্রকার উপাদেয় বস্তু দিয়া সে রাঙ্গা চরণের সেবা করিতেন, তব ত সে রাঙ্গা চরণের প্রসাদ পান না। তালকে থেকে তোড়া তোড়া টাকা এনে দেন, তরণী টাকাগুলি বাকসে বন্ধ করিয়া মুখ ফিরাইয়া বসেন ! জিজ্ঞাসা করিলে তরণী কথা কহেন না, অথবা ঘোর অভিমানে ব্যঙ্গ করিয়া বলেন, “তব যে জিগগেস করলে এই আমার ভাগ্য! আমার প্রতি ত তোমার মায়া নেই,—মায়া দিদির প্রতি ! আমি গরিবের মেয়ে, আমাকে তাচ্ছিল্য করবে না ত কি ?” (ক্ৰন্দন) বড়ো চক্ষের জল মছাইয়া বলিতেন—সে কি, সে কি, তোমাকে মাথায় করে রাখিব,—তুমি কি আমার অযত্বের ধন ? কি করিলে তুষ্ট হইবে বল, আমি এখনই করিতেছি। বিনাইয়া বিনাইয়া নবীনা বলিতেন—তা আমি মেয়েমানুষ, কি করিলে ভাল হয়, আমি কি রকমে জানিব ? ঐ চাটযোদের বাড়ীর কত্তাটী বড়ো বয়সে আবার একটা বিয়ে করিয়াই কিছুদিন পর তাঁহার কাল হইল, ছোট মেয়েটাকে সতীনের হাতে ফেলে গেলেন। বড় সতীন তাকে উঠতে বসতে গাল দেয়, দিবারাত্রি মজুরের মত খাটায়, দন্বেলা খেতে দেয় না। ছোট বেটী যেন মড়ার মত হয়ে গিয়েছে—পথের কাঙ্গালীর মত কে’দে কে’দে বেড়াইতেছে। তা আমারও সেই দশা হবে। কেনই বা হবে না ? কাঙ্গালীর ঘরে জন্ম, আমি পথে ভিক্ষা করিব না ত কে করিবে ? (ক্ৰন্দন) তারিণীবাব। সে কি ? উমার মার সাধ্য কি তোমাকে কিছ বলে ? গহিণী। হাঁ, উমার মার ত আমার প্রতি বড় মায়া! এখনই দািচক্ষে দেখতে পারে না,— এর পরে আমাকে কি আর আস্ত রাখবে ? (ক্ৰন্দন) এইরুপ প্রায় মধ্যে মধ্যে কাঁদাকাটি হইত, দুিবারাত্রি অভিমুনে হইত, তারিণীবাব আর তিঠিতে পারলেন না। গহিণীর কথাবাৰ্ত্তায় বুঝিলেন যে গহিণী ভবিষ্যতের জন্য কিছ সংস্থান করিতে চাহে। এতটুকু মেয়ের পেটে এ বৃদ্ধি কেমন করিয়া হইল বুঝিতে পারলেন না। তারিণীবাব জানিতেন না যে গহিণীর পরামর্শদাতা পরম বৃদ্ধিমান ঘন ঘন বদ্ধমান হইতে আসা যাওয়া করিত, এবং গোপনে ভগিনীর সহিত পরামর্শ | তরণী ভাষার তাঁর অভিমান ও অশ্রজেল দেখিয়া হৃদয়ে ধৈৰ্য্য ধরিতে পারে এরপে বীর পর্ষ সংসারে অলপ। তারিণীবাবর মন ক্রমে টলিতে লাগিল, তিনি মনে মনে ভাবিতে লাগিলেন,-আমার ভালমন্দ হইলে কিছ বিষয় ছোট গহিণীর হাতে থাকে এরপে একটা • 88°'