পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

बक्रर्गब८जका হন্তেই থাকিবে।” এই কথা উচ্চারিত হইতে না হইতে আমার স্বামী সিংহের ন্যায় লম্ফ দিয়া শল্য-ব্যুহমধ্যে প্রবেশ করিলেন, মোগল সৈন্য বঙ্গদেশীয় জমাদারের সাহস দেখিয়া পনরায় র্যাদ্ধারম্ভ করিল, দায়দেখাঁ পরান্ত হইলেন। তৎপরেই পাঠানগণ বঙ্গদেশ ছাড়িয়া দিয়া মোগলদিগের সহিত সন্ধি স্থাপন করিল। সেই সন্ধি সংস্থাপনের সময়ে মনাইমখাঁ দায়দেখাঁকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “পাঠানরাজ ! প্রায় এক বৎসর আপনি আমাদের সহিত যুদ্ধ করিতেছেন, দিল্লীশ্বরের কোন সেনাপতি যুদ্ধে অধিকতম সাহস প্রকাশ করিয়াছেন, আপনি অবশ্যই বলিতে জমীদার রাজা সমরসিংহ ।” এই কথা উচ্চারিত হইতে না হইতে সমগ্র দরবার জয়ধৰনি ও কোলাহলে প্লাবিত হইল; সেই জয়ধৰনি বায়নমাগে আরোহণ করিয়া সমগ্র বঙ্গদেশ আচ্ছন্ন করিল ; দগে-যথায় আমি একাকিনী উপবেশন করিয়া যুদ্ধে স্বামীর বিপদ আশঙ্কা —প্রবেশ করিয়া আমার শরীর কণ্টকিত করিল! অদ্য কি না সেই সমরসিংহের বিদ্রোহ অপবাদে শিরশেছদন হইল ! দেবদেব মহেশ্বর । ইহার কি ইহকালে প্রতিহিংসা নাই, পরকালে বিচার নাই ? ছিন্ন-তার বীণার মত সহসা মহাশ্বেতার গম্ভীর সবর থামিয়া গেল। শিখণ্ডিবাহন বলিলেন, –ভগিনি ! প্ৰবকথা স্মরণে যদি কষ্ট হয়, তাহা হইলে বলিবার আবশ্যক কি ? বিশেষ রাজা সমরসিংহের যশোবাত্তা বঙ্গদেশে কে না অবগত আছে ? সমরসিংহের পত্নীর সে কথা বিবরণ করিয়া হৃদয়ে ব্যথা পাইবার আবশ্যক কি ? মহাশ্বেতা । সমরসিংহের পত্নী নহি, এককালে সমরসিংহের রাজমহিষী ছিলাম, এক্ষণে নিরাশ্রয়া বিধবা !—আমার আর অধিক বলিবার নাই, শ্রবণ করন। সতীশচন্দ্র নামে পাঠানদিগের একজন চতুর কলমচারী ছিল; পাঠানগৌরব অস্তপ্রায় দেখিয়া সে পাঠানপক্ষ ত্যাগ করিয়া রাজা টোডরমল্পের আশ্রয় গ্রহণ করিল। আমার স্বামীই সেই বিনীত ব্রাহ্মণকে আশ্বাস দিয়া রাজা টোডরমল্লের নিকট লইয়া যান, এবং অনেক সহায়তা করেন। ব্রাহ্মণ চতুর ও কাৰ্য্যদক্ষ সৈন্যদিগের রসদ আহরণে, শত্রুদিগের অভিসন্ধি অনুভব করণে, এবং কুটিল চক্রান্ত দ্বারা শত্রদিগের মধ্যে গাহবিচ্ছেদ সাধনে বিশেষ তৎপর ছিল। রাজা টোডরমল্ল সতীশচন্দ্রের উপর তুষ্ট হইলেন-রাজপ্রসাদে সতীশচন্দ্র ক্রমে খ্যাতি, ধন ও বিস্তীর্ণ সম্প্রপত্তি লাভ করিল। উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সতীশচন্দুের ভীষণ উচ্চাভিলাষ হইল, বঙ্গদেশের হিন্দুদিগের মধ্যে প্রধান হইবার অাশা হইল, আমার স্বামীর প্রতি বিজাতীয় হিংসা হইল! আপনারা বলেন, লোকের উপকার করিলে লোকে কৃতজ্ঞ হয় :-আমার স্বামী দরিদ্র সতীশচন্দ্রের উপকার করিয়া কালসপ হৃদয়ে পুষিলেন । রাজা টোডরমল্ল বঙ্গদেশ হইতে প্রস্থান করাতে সতীশচন্দ্র সুযোগ পাইল। জাল কাগজ প্রস্তুত করিয়া প্রমাণ করিল যে, রাজা সমরসিংহ উড়িষ্যার পাঠানরাজ দায়দেখাঁর সহিত গোপনে সন্ধি করিয়াছেন। বঙ্গের মুসলমান সবাদার এই অপবে কথা বিশ্বাস করিলেন; রাজা সমরসিংহ বিদ্রোহী বলিয়া তাঁহার প্রাণদন্ড হইল; পামর সতীশচন্দ্র আমাদের বিস্তীণ জমীদারি পুরস্কার স্বরপে অপলাভ করিয়া আজি বঙ্গদেশের দেওয়ান হইয়াছেন! ভ্রাতঃ ! আমার কথা শেষ হইয়াছে। এই শোকে আমি পাগলিনী হইয়াছি; এই নরহত্যার প্রতিহিংসার জন্য আমি ব্রত ধারণ করিয়াছি ! উভয়ে অনেকক্ষণ নিস্তব্ধ হইয়া রহিলেন । শিখণ্ডিবাহন দেখিলেন, মহাশ্বেতার ব্ৰতভঙ্গের চেষ্টা করা ব্যথা: অগ্নিরাশিতে জলবিন্দ নিক্ষেপ মাত্র। বলিলেন—তবে আমি পিতাকে এই সকল বত্তোন্ত বলিব ? মহাশ্বেতা উত্তর করিলেন-হাঁ, বলিবেন যে, পাপের প্রায়শ্চিত্ত সন্নিকট, নরঘাতকের দণ্ড সন্নিকট। রাজা টোডরমল্প তৃতীয়বার বঙ্গদেশে আসিয়াছেন: তাঁহার যুদ্ধকাষ" শেষ হইলে সমরসিংহের বিধবা তাঁহার নিকট সমরসিংহের বধের জন্য বিচার প্রার্থনা করিবে! পিতাকে বলিবেন যে, পক্ষিশাবক ব্যাধকত্ত্বক আহত হইলে আপনার যাতনায় ক্ৰন্দন করিয়া প্রাণত্যাগ করে, কিন্তু মানিনী ফণিনী পদাহত হইলে আঘাতকারীকে দংশন করিয়া হষে —হেলায় প্রাণত্যাগ করে ! 학