পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৫০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগমায়াদিদি নাকি বেণের দোকান থেকে মাথাঘসা আনিয়াছে, মেতি আনিয়াছে, আরও কত কি কিনেছে! আহা বেশ! বেশ ! বেশ ও লো, বড়ো হলে কি মনের সাধটকু মেটে, তা মেটে না! যোগমায়াদিদির সাধটকু আবার গজিয়ে উঠছে! ফলকুমারী। ও লো, সন্ধা মাথাঘসা নয় লো, আরো কত কি দেখবি। সকলে । আর কি গা দিদি ? ফলকুমারী। ও লো, ঐ নাপতের বোঁ আমাদের বাড়ী আসে না ? তাকে জিজ্ঞাসা করিস, কত শনবি এখন কোন দিন বা যোগমায়াদিদি পায়ে আলতা দিয়ে, দাঁতে মিশি দিয়ে দশন দিবেন। দিদির কাঁচা বয়স ফিরে আসছে লো! কথায় বলে,— “জীবন যৌবন গেলে কি ফেরে ?” তা যোগমায়াদিদির ফিরেছে! যোগমায়াদিদির বড় কপালের জোর লো, বড় কপালের জোর ! স্বর্ণকুমারী। সত্য লো, সে কথা সত্য। যোগমায়াদিদির চুলে এখন একট বেশ তেল পড়ে, আবার শনছি নানারপে বেশভূষার আয়োজন হইতেছে! ঐ তাঁতিবোঁ আমাদের বাড়ী আসে না ? তাকে জিজ্ঞাসা করিস। ওমা! যোগমায়াদিদি নাতি তাঁতিবোঁকে রাঙ্গাপেড়ে সাড়ী সব আনতে বলেছে। অবাক করলে মা ! কোথা যাব মা ? ইত্যাদি। নবীনার দল কলস লইয়া চলিয়া না যাইতে যাইতেই একদল মধ্যবয়স্কা নারী উপস্থিত হইলেন, তাঁহাদেরও আজ ঢের কথা—সনাতনবাটীতে আজকাল নানা বিষয় লইয়া বিশেষ আন্দোলন চলিতেছে। মাতঙ্গিনী। ও লো, আজ যে বড় তোদের হাসিখুসি দেখছি। কি, কথাটা কি ? তরঙ্গিণী। ও লো, তা জানিসনি ? এই যে বিয়েতে আমরা জল সইতে যাব। মাতঙ্গিনী। কার বিয়ে লো, কার বিয়ে ? রাধারঙ্গিণী। ওমা, তা জানিসনি ? তুই কি এই বয়সে চখের মাথা খেয়েছিস নাকি ? বলি কিছু ঠাওর করতে পারিসনি ? মাতঙ্গিনী। কৈ, আমি ত বাড়ীর কারও বিয়ের কথা শুনি নাই। কৃষ্ণসঙ্গিনী। ও লো, এসব বিয়ের কি কথা হয়,—এসব বিয়ে আগে হয়, তারপর কথা উঠে ! ঐ যে তালপুকুরে মল্লিকদের বাড়ী একটা মেয়ে বিধবা হয়ে আবার বিয়ে করেছিল না ? এবার আবার আমাদের জমিদার-বাড়ীতেই তাই বুঝি হয়! মাতঙ্গিনী। সে কি ? বিধবা হলে কি আবার বিয়ে হয় ? তালপুকুরের তারা নাকি একঘরে হয়ে আছে ? তরঙ্গিণী। তা হলেই বা একঘরে। অমন রপবান সন্ন্যাসীকে নিয়ে সে ত বেরিয়ে যাবে, —তারপর গাঁয়ের লোক একঘরে করলেই বা! মাতঙ্গিনী। সন্ন্যাসীর সঙ্গে কার বিয়ে হবে লো ? রাধারঙ্গিণী। বলি তুই কি কচি খাঁকি লা? আমাদের যোগমায়ার রকমসকম দেখিসনি ? ছি! ছি! অমন মেয়েরও মুখে আগনে! সন্ন্যাসীরও মুখে আগন ! কৃষ্ণসঙ্গিনী। কাঁচ খলকি না কচি খাকি ! বলি ঐ সেকরাদের ছেলেটা কাল আমাদের বাড়ী এসেছিল, তা তুই কি দেখিসনি ? মাতঙ্গিনী। হাঁ হাঁ, তা দেখেছি। সে ছোঁড়াটা এসেছিল কেন ? কৃষ্ণসঙ্গিনী। ওমা, তা জানিসনি ? সেকরাদের ছেলেটা এসে ফিস ফিস করে অনেকক্ষণ ধরে আমাদের যোগমায়ার সঙ্গে কথা কহিতেছিল। আমি অমনি খোকার ঝিকে পাঠিয়ে দিলাম, বলি যা ত, কি বলছে শোন ত। খোকার ঝি কলাগাছের আড়ালে থেকে সব শুনেছে! মাতঙ্গিনী। কি বলছিল দিদি, যোগমায়া কি গয়না করতে দিয়েছে ? কৃষ্ণসন্দরী। ও লো, গয়নার বাড়া! সেকরাকে একগাছা হাতের নো তৈয়ার করতে বলেছে! বিধবা হয়ে আবার বিয়ে করবে, আবার ঘোমটা দিয়ে বেী হবে, আবার হাতে নো পরবে, গায়ে গয়না পরবে, এ বয়সে আবার ছেলের মা হবে! মুখে আগন ! মুখে আগন ! যম কি এমন বিধবাদের ভুলে থাকে ? পোড়ারমখাঁ চল্লিশ পেরিয়ে আবার নাকে নথ পরবে, পায়ে মল পরবে, কালাপেড়ে সাড়ী পরে সন্ন্যাসীর ঘর করবে! মনখে আগন ! মুখে আগন ! சிங்க் 8q象