পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৫২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাজ হাসিয়া বলিলেন,-আমার ক্ষুদ্র বৃদ্ধিতে যতদর পারিতেছি, আমি ধৰ্ম্ম অনুসারেই ణ్డు প্রাচীন বংশ সম্মানিত হইবে, নৰ্ত্তকী-সঙ্গ ত্যাগ করিয়া গহে অসিলে পতিব্লতা গহিণী সম্মানিত হইবেন। শাসের বলে, পতিব্ৰতা পরিত্যাগ করিলে গন্দভচম পরিধান করিয়া ছয় মাস প্রায়শ্চিত্ত করিতে হয়।* কামিনীকান্তের বন্ধগণ প্রস্থান করিলে পর তালপুকুর ও সনাতনবাটীর দলপতিগণ সমবেত হইয়া এ কায নিষেধ করিবার জন্য রমণীকান্তবাবর নিকট আসিলেন, তালপুকুরের ঘোষালের পো তাঁহাদের বক্তা। ঘোষালমহাশয়ের সন্দর বক্তৃতা অনেকক্ষণ শনিয়া রমণীকান্তবাব সহাস্যবদনে উত্তর দিলেন,—পণ্ডিতপ্রবর! ভিন্ন-জাতির মধ্যে বিবাহ-কাষ" অধম বলিয়া আমার ক্ষুদ্র বৃদ্ধিতে বোধ হয় না—বিবাহিতা নারীর প্রতি নিঠর আচরণ করাই অধম বলিয়া আমার বোধ হয়। তোমার সাধনী সহধৰ্ম্মিণীকে শিশু অবস্থায় আমি ক্রোড়ে করিয়া খেলা দিয়াছি, আজি তোমার নশংস আচরণে সে অকালে মৃত্যুশয্যায় প্রায় শায়িত, তাই এ কথা বলিতেছি, ক্ষমা করিও । নারীকে ক্লেশ দিলে বংশ নিব্বংশ হয়, এই শাস্ত্রের বচন। শাস্ত্রের আদেশ পরকে শনাইবার যেরপে অভ্যাস আছে, নিজের জীবনে পালন করা বোধ হয় তোমার ততদরে অভ্যাস নাই। সেইজন্য অন্য একটী আদেশ দিতেছি,—তোমার গহিণী আমার কন্যাস্বরুপ, এবং তুমি আমার জমিদারীর মধ্যে বাস কর। সাবধান! ঘোষালের পো মুখটী চণ করিয়া উঠিয়া গেলেন। শনিয়াছি সেই দিন হইতে সহধৰ্ম্মিণীর জন্য একজন পরিচারিকা রাখিলেন, এবং নিজেও একটু যত্ন করিতে লাগিলেন । দুঃখিনী ঘোষালপত্নী প্রাণে বাঁচিল । সকল বন্ধ ও পরামর্শদাতৃগণ চলিয়া গেলে পর সন্ধ্যার সময় হেমচন্দ্র রমণীবাবরে নিকট আসিয়া বলিলেন,—জগৎসমৃদ্ধ লোক এ বিবাহকায্যে আপত্তি করিতেছে, আপনি UE할F নিরস্ত থাকিতে ইচ্ছা করেন, তবে তাহাই করন। আমার জন্য কেন জগতের নিকট অবমানত হইবেন ? রমণী। হেমচন্দ্র ! এ কায্যে তোমার মনে কোন সন্দেহ হইতেছে ? তোমার হৃদয়ে কোন আপত্তি উত্থাপিত হইয়াছে ? হেম। কিছমাত্র নহে। আমাকে লোকে অনেকদিন একঘরে করিয়াছে। আপনি আমার সহিত এ সম্বন্ধে স্বীকৃত হইয়া আমাকে সম্মানিত করিয়াছেন। আমার কন্যাকে সম্মানিত করিয়াছেন। আমি কেবল আপনার জন্য বলিতেছিলাম। রমণী। তবে নিশ্চিন্ত হও । তোমার ন্যায় কুটম্বব পাইয়া আমিও সম্মানিত হইয়াছি, সুশীলা মাতার ন্যায় শান্ত, সরলা, সবগণসম্পন্না সহধৰ্ম্মিণী পাইয়া দেবীপ্রসাদও সম্মানিত হইবে। আমি হিন্দুধৰ্ম্মম ও হিন্দুশাস্ত্র যতদর বুঝি, কত্তব্য ও অকৰ্ত্তব্য যতদর কঝি—এ কায্য ধৰ্ম্মবিরদ্ধেও নহে এবং কৰ্ত্তব্যবিরদ্ধেও নহে। আমার হৃদয় যখন সৎকাৰ্য্য করিতে আমাকে আদেশ দেয়, লোকনিন্দা-ভয়ে সে কায্য হইতে নিরস্ত থাকা আমার অভ্যাস নাই । সনাতনবাটীর জমিদার রমণীকাস্তের একমাত্র পত্রের বিবাহ উপলক্ষে মহাসমারোহ হইল। রমণীকান্ত নিজে মহাসমারোহ ভালবাসেন না—গত সপ্তবিংশ বৎসর পর্য্যন্ত ভূমিতে কবল বিছাইয়া শয়ন এবং অতি সামান্য খাদ্য ভক্ষণ তাঁহার অভ্যাস। কিন্তু অদ্য সমারোহ না করিলে নয়। অদ্য দেশে দেশে সংবাদ প্রচার হইয়াছে যে মহাবলপরাক্রান্ত জমিদার রমণীকান্ত সনাতনবাটীতে ফিরিয়া আসিয়া নিজ সম্পত্তি অধিকার করিয়াছেন। অদ্য গ্রামে গ্রামে সংবাদ প্রচার হইয়াছে যে শাস্ত্রজ্ঞ ব্রাহ্মণ জমিদার প্রাচীন হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে আপন সন্তানকে কায়স্থকন্যার সহিত বিবাহ দিবেন। আদ্য ঘরে ঘরে প্রচার হইয়াছে যে দেবতুল্য দেবীপ্রসাদের সহিত লক্ষী-সদশো সুলক্ষণা সশীলার বিবাহকাৰ্য্য সম্পাদন হইবে। চারিদিকের গ্রাম হইতে সহস্র সহস্ৰ ইতর ভদ্র লোক সনাতনবাটীতে নবজমিদারের পত্রবিবাহ দেখিতে আসিয়াছে; প্রাচীন আপস্তব ১। ১০। ২৮ ১৯। † মনুসংহিতা ৩ ৫৭ ৷ 8షితి