পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৫৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৯8 রমেশ রচনাবলী অসনের উপর দেবীপ্রসাদের দেবতুল্য মূৰ্ত্তি বড় শোভা পাইতেছে! মস্তকে টোপর, গৌরবর্ণ বৃহৎ স্কন্ধে চেলির চাদর লম্বিত রহিয়াছে, বিশাল বক্ষঃস্থলের উপর একটী মুক্তাহার ঝুলিতেছে,—সেরূপ মুক্ত রাজগৃহেও বিরল। যুবার উন্নত ললাটের উপর শ্বেতচন্দন শোভা পাইতেছে, যুবার জলন্ত ভ্রমরকৃষ্ণ নয়নদ্বয়ে দীপালোকে প্রতিফলিত হইতেছে। সভাস্থ সকলে যখন সেই দেবতুল্য মূৰ্ত্তির দিকে অবলোকন করিলেন, সকলে একস্বরে যুবককে আশীৰ্ব্বাদ করিতে লাগিলেন। সঙ্গীত শব্দ উখিত হইয়। সভা পরিপূর্ণ করিল, চন্দ্ৰাতপ লঙ্ঘন করিয়া নৈশগগনে উথিত হইল । বর ভিতরবাটতে গেলেন। অমনি শত নারীর কণ্ঠনিঃস্থত “হুলু” ধ্বনিতে বাটী শদিত হইল, ঘন ঘন শঙ্খনিনাদে গ্রাম পূর্ণ হইল। আজি রাত্রিতে সেই মেয়েমহলে কি ভিড়, কি হাস্যধ্বনি, কি নারীকণ্ঠনিঃস্থত কলকল শব্দ, তাহা বর্ণনায় আমরা অক্ষম। পতিপুত্রবতী নারীগণ বড় আনন্দের সহিত এই শুভকার্য্যে যোগ দিলেন, এবং সুন্দর বরটকে ঘিরিয়া নানা হাস্যপরিহাস করিতে করিতে স্ত্রী-আচার সম্পাদন করিলেন । অবগুণ্ঠনবতী সুশীলাকে সাতবার বরের চতুর্দিকে প্রদক্ষিণ করান হইল, এবং স্বশীলার বয়স্ক দুই একজন রসিকা বালিকা মুন্দর বরের কাণ দ্ব'ট একবার মলিয়া দিল ! স্ত্রী-আচারের পর ববক্য বাহিরে অসিলেন, সভাস্থল শোভ করিয়া বসিলেন! সভাস্থ সকলে পূর্বেই বরের উজ্জ্বল সৌন্দৰ্য্য দেখিয়৷ অনেক স্তুতিবাদ করিয়াছিলেন, এক্ষণে লক্ষ্মীস্বরূপ সুশীলার কান্তি, লাবণ্য ও কমনীয়তা দেখিয়া ভূয়োভূয়ঃ স্তুতি করিতে লাগিলেন । “আজ বিধাতা যোগ্যের সহিত যোগ্যকে মিলাইলেন, সনাতনবাটীর বংশ চিরস্থায়ী হউক, রমণীকান্তের পর দেবীপ্রসাদ আমাদের জমীদার হউন, সুশীল মাতা মাতাস্বরূপ প্রজাকে লালম পালন করুন,” এইরূপ আশীৰ্ব্বাদ-কথা চারিদিকে শ্রত হইতে লাগিল । বিবাহকার্য্য সম্পাদিত হইল, বর ও কন্যা বাসর ঘরে প্রস্থান করিলেন,- সে রাত্রিতে সে ঘরের কথা আমরা ঠিক জানি না, সুতরাং কিরূপে এই ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করিব ? তবে শুনিয়াছি, তালপুকুরের মেয়ের বড় চতুরা, আর বেচার দেবীপ্রসাদ চিরকাল বিদেশে বাস করিয়াছে, বঙ্গমহিলাগণ কিরূপ সামগ্রী এই তাহার প্রথম পরিচয় । শুনিয়াছি, দেবীপ্রসাদ পিতার সহিত অনেক দেশ পর্য্যটন করিয়াছে, অনেক বিপদআপদে পড়িয়াছে, কিন্তু এরূপ বিষম বিপদে কখনও পড়ে নাই। শুনিয়াছি, সে রাত্রির রঙ্গরস, হাস্যপরিহাস, ও সঙ্গীতধ্বনি সেই ক্ষুদ্র কুটার অতিক্রম করিয়া চারিদিকে শ্রুত হইল, এবং তালপুকুরের মুন্দরীদিগের চতুরতা প্রকটিত করিল! শুনিয়াছি, রাত্রি তিনটার পর বেচারা দেবীপ্রসাদ সুন্দরীদিগের পায়ে ধরিয়া ক্ষমা চাহিল,—তখন সুন্দরীগণ ক্ষমা করিলেন,—দেবীপ্রসাদ দুই ঘণ্টা নিজ যাইয়া প্রাণে বাচিল । এদিকে বিবাহের খাওয়া-দাওয়া মহাসমারোহ। রমণীকান্তের স্নেহবশতঃ বা ভয়বশতঃ অনেক আত্মীয়বান্ধব এই নিমন্ত্রণে আসিয়াছিলেন, সনাতনবাটী, বৰ্দ্ধমান ও কলিকাতা হইতে অনেক লোক সভার শোভা বৰ্দ্ধন করিয়াছিলেন । এরূপ বিবাহে উপস্থিত হইতে কেহ কেহ ভীত হইয়াছিলেন, কিন্তু অনেকেই জর্মীদারমহাশয়ের বিশ্বস্তা