পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब्रटभश्च ब्रष्कनाबलौ এই বলিয়া বিমলা বাপাকুলিতলোচনে পিতার নিকট যাইয়া তাঁহার হৃদয়ে আপন বদনমণ্ডল লকাইলেন। বিমলার যদি স্থিরভাব থাকিত, দেখিতে পাইতেন যে, পিতারও মুখমণ্ডল সহস্য বিকৃতি ধারণ করিয়াছিল। স্বপ্নকথা শুনিয়া সতীশচন্দ্র শিহরিয়া উঠিলেন,-যেন ভয়াবহ কোন পবেকথা হৃদয়ে সহসা জাগরিত হইল, যেন কোন গঢ়ে পাপের প্রায়শিচত্ত সেইক্ষণেই আরম্ভ হইল। যখন বিমলা পিতার হৃদয়ে মুখ রাখিয়া রোদন করিতেছিলেন, পিতার সাক্ষনা করিবার আর ক্ষমতা রহিল না। কিঞ্চিৎ পরেই সতীশচন্দ্র আপন চিত্তসংযম করিয়া স্থিরভাবে বলিতে লাগিলেন,— বিমলা, এ সকলই তোমার মিথ্যা ভয় । দিবাযোগে তুমি কেবল মিথ্যা চিন্তা কর, তাহাতেই রজনীযোগে সেই প্রকার ভয়ের স্বপ্ন দেখ। আমি দেখিয়াছি, গত কয়েক দিন অবধি তুমি কেবলই চিন্তামগ্ন রহিয়াছ, আমাকে যথাথ করিয়া বল, সে মহাচিন্তার কারণ কি ? বিমলা ধীরভাবে উত্তর করিলেন,—পিতা, আপনি যখন জিজ্ঞাসা করিলেন, আমি অবশ্যই তাহার উত্তর করিব; আপনার নিকট লুকাইবার আমার কোন কথাই নাই। আপনিই সে মহাচিন্তার কারণ। অদ্য প্রায় এক মাস হইতে আপনাকে কোন গভীর দুঃখে বা চিন্তায় মগ্ন দেখিতেছি, দিন দিন সেই চিন্তা গাঢ়তর হইতেছে । আপনার আহারের সময় খাদ্যদ্রব্যে মন থাকে না, রজনীকালে আপনার নিদ্রা হয় না, যদি নিদ্রা হয়, সে কুস্বপ্ন-পরিপািণ । আমি কতবার দিবাযোগে লকোইয়া আপনার কক্ষে গিয়াছি; যতবার যাই, দেখি, আপনি সেই চিন্তায় মগ্ন। নিশিযোগে আমি কতবার আপনার শয়নগহে গিয়াছি, যখন যাই, দেখি কোন কুবপ্নে আপনার ললাট কুঞ্চিত ও বদন বিকৃত হইয়া রহিয়াছে। কি ঘোর চিন্তায় আপনাকে এ প্রকার ষাতনা দিতেছে ? সামান্য জমীদার, সামান্য কৃষকও দৈনিক পরিশ্রমের পর রজনীতে বিশ্রাম লাভ করে, বঙ্গদেশের রাজাধিরাজ দেওয়ান মহাশয়ের কি সে বিশ্রামে অধিকার নাই ? বিমলা ক্ষণেক নিস্তব্ধ হইলেন, দেখিলেন, পিতা স্থিরভাবে তাঁহার কথাগুলি শ্রবণ করিতেছেন, পনরায় বলিতে লাগিলেন,— গত এক মাস অবধি আপনার নিকট এত চর আসিতেছে কেন ? চর এত গুপ্তভাবে আসিয়া এবং গপ্তেভাবে চলিয়া যায় কেন ? দিবারাত্রি আপনিই বা কোন গুপ্ত পরামশে ব্যস্ত আছেন ? বঙ্গদেশের দেওয়ানের কায্যের ভার অতি গরতের সন্দেহ নাই, কিন্তু দেশের সশাসন ও প্রজার মঙ্গল যে কায্যের উদ্দেশ্য, সে কাৰ্য্য ও সে পরামশ কি রজনী দ্বিপ্রহরের সময় গহের কবাট রদ্ধে করিয়া কতকগুলি নিভৃত চরের সহিত সিদ্ধ হয় ? বালিকার এ সকল কথা জিজ্ঞাসা করা উচিত নহে, যদি আমি অপরাধ করিয়া থাকি, পিতা মাজ’না করন। কিন্তু আপনি বৃদ্ধিমান ও বিচক্ষণ; বিবেচনা করিয়া দেখন, খলস্বভাব সপেরই গতি বক্র; উদারচিত্ত মনষ্যের গতি সরল। যাঁহার চরিত্র সরল, যাঁহার উদ্দেশ্য সরল, তাঁহার গতি বক্র হইবে কেন ? পিতা, বালিকার কথায় অবধান করুন, কপট লোকের পরামশ ত্যাগ করন, ধমের পথ-সরল পথ অবলম্ববন করন, তাহা হইলে কাহাকেও ভয় থাকিবে না, কোন চিন্তা থাকিবে না। পাপপথে সব্বদাই ভয়, ধম্মপথ নিরাপদ ও নিকেণ্টক। বলিতে বলিতে বিমলার উদার ললাট ও বদনমন্ডল অধিকতর উদ্দীপ্ত হইয়া উঠিল; তাঁহার উজ্জল নয়নযুগল হইতে উক্তজবলতর আভা বাঁহগাত হইতে লাগিল। বিমলা অতিশয় পিতৃবৎসলা কন্যা, কিন্তু তাঁহার হৃদয়ে নৈসগিক গৌরব ও ধম্মবল বিরাজ করিত। সেই গৌরবের আবিৰ্ভাব হইলে জনাকীর্ণ রাজসভায় যিনি শত শত বার বাকপটতার জন্য প্রশংসাভাজন হইয়াছিলেন, সপ্তদশবষীয়া বালিকার কথায় তিনি নিরত্তের হইতেন । “পাপপথে সব্বদাই ভয়, সরল ধমপথ নিরাপদ ও নিম্পকণ্টক", এই কথা অদ্ধাসফটবচনে উচ্চারণ করিতে করিতে সতীশচন্দ্র সে কক্ষ হইতে বহিগত হইলেন। >げ